Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে জঙ্গী সংগঠন এবং জঙ্গী তৎপরতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশ এখন জঙ্গীবাদমুক্ত এবং এক্ষেত্রে সফল হয়েছে। যেসব সংগঠনের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদের অভিযোগ রয়েছে, তাদের অস্তিত্ব অনেকটাই বিলোপ করে দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুনরায় জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা চালানো কিংবা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মতো শক্তি-সামর্থ্য নেই। বিশেষ কোনো সময়েও জঙ্গীহামলার আশঙ্কা নেই। এ পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে নতুন জঙ্গী সংগঠন ও এতে তরুণদের জড়িয়ে পড়ার খবর দিয়েছে র‌্যাব। গত সোমবার র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জঙ্গী সংগঠন ও এতে জড়িয়ে পড়া ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করেছে। এছাড়া নিরুদ্দেশ থাকা আরও ৫৫ জনের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে। গত ৬ অক্টোবর থেকে এসব তরুণদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। এসব তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা নতুন জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারকীয়া’র সাথে জড়িত বলেও জানানো হয়েছে।

হঠাৎ করে জঙ্গী সংগঠন ও তার সাথে তরুণদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করছেন, যখনই দেশে কোনো সংকট দেখা দিয়েছে, তখনই এ ধরনের জঙ্গী সংগঠন ও তার তৎপরতার বিষয়টি সামনে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সাফল্যের সাথে সেসব দমন করেছে এবং জঙ্গীবাদের হুমকি নেই বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রশংসাও পেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটা সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো তাদের স্বার্থে কিছু বিপদগামী মুসলমান দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জঙ্গী সংগঠন তৈরি করে এবং হামলা চালিয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এটা এখন দিবালোকের মতো সত্য, আল কায়েদা, আইএস-এর মতো সংগঠনগুলো তাদেরই সৃষ্টি। এগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে দমনের নামে সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হামলা করে তছনছ করে দিয়েছে। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পর এখন আর এসব জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তাদের মুখ থেকে তেমন কোনো কথা শোনা যায় না। বলা যায়, জঙ্গীবাদের বিষয়টি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে গেছে। একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও জঙ্গী ও উগ্রবাদের কথা শোনা যায় না। ভারতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরপরই উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, বিশ্বে এখন ভারত একমাত্র উগ্রবাদের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মোদি ও তার দল বিজেপি আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গী সংগঠনগুলোকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। যাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভারত থেকে মুসলমানদের নির্মূল করে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। এজন্য প্রায় প্রতিনিয়ত মুসলমানদের হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের নাগরিকত্বহীন ও স্ট্যাটলেস করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে এনআরসি, এনপিআর এবং সিএএ-এর মতো আইন পাস করা হয়েছে। এর ফলে উগ্র হিন্দুদের আস্ফালনে দেশটিতে জঙ্গীবাদ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই এবং তা হওয়ার শঙ্কাও নেই। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেসব জঙ্গী সংগঠনের কথা বলা হয়, সেগুলোর পেছনে দেশি-বিদেশি কোনো কোনো মহলের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের বদনাম করার চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। এর কারণ হচ্ছে, মন, মানসিকতা এবং মনস্তাত্বিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারক-বাহক হয়ে আছে। আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, এখানে উগ্রবাদ ঠাঁই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যার যার ধর্ম নিশ্চিন্তে ও নির্দ্বিধায় পালন করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা দেশব্যাপী প্রায় ৩২ হাজার মন্ডপে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা-বিঘœ’র সৃষ্টি হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, দেশের মানুষ ও সরকারের আন্তরিকতায় সব ধর্মের মানুষ এখানে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করছে। এমন এক পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে গহীন অরণ্যে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ও এতে জড়িয়ে পড়া কিছু তরুণকে গ্রেফতারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসায় সচেতন মহলে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

জাতীয় নির্বাচন আর এক বছরের মতো বাকি রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীদলগুলো নানা ইস্যুতে আন্দোলন করছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ সংকট থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাবস্থার কারণে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে নতুন করে জঙ্গী সংগঠন ও এর সাথে কিছু তরুণের জড়িয়ে পড়ার ইস্যু সামনে চলে এসেছে। কিছু তরুণকে আগে গ্রেফতার করে পরে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এসবের পেছনে অন্য কোনো ইস্যু রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সিস্টেম, তা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কিছু তরুণের পক্ষে বিনষ্ট করা সম্ভব নয়। তাদের সেই সক্ষমতা নেই। অতীতে চেষ্টা করেও তা করা সম্ভব হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনার পেছনে অন্যকোনো উদ্দেশ্য কিংবা দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সুগভীর দৃষ্টি দিতে হবে।



 

Show all comments
  • আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২২ এএম says : 0
    দেশে জঙ্গী থাকলে তাদের চিহ্নিত করে ফাঁসি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৩ এএম says : 0
    আমার মনে হয় সরকার জঙ্গী বিষয়টি কোনো ইস্যু আসলে সামনে নিয়ে আসে। যাতে অন্য বিষয়গুলো দাম-চাপা পড়ে
    Total Reply(0) Reply
  • hassan ১২ অক্টোবর, ২০২২, ১০:১৮ পিএম says : 0
    সত্যিই মিথ্যা হয়ে যাবে মিথ্যা সত্যি হয়ে যাবে দেশে জঙ্গি কারা আমাদের সরকারি তো সবথেকে বড় জঙ্গি গণহত্যাকারী ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যাকারী আমাদের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠানো ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না টেন্ডারবাজি আওয়ামী জঙ্গিরা সারা বাংলাদেশের কর্নার থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে ধর্ষণকারী আর বলছে বাংলাদেশের জঙ্গি যারা আল্লাহর আইনের কথা বলে তাদেরকে জঙ্গী তোকমা লাগিয়ে হয় গুলি করে মেরে ফেলে না হলে গুম করে ফেলে না হলে চিরজীবনের মতো জেলের মধ্যে আটকে থাকে পরে ফাঁসি দিয়ে দেয়
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৫ এএম says : 0
    দেশে কোনো জঙ্গী সংগঠন থাকলে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। পরে তাদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৪ এএম says : 0
    এ ধরনের ঘটনার পেছনে অন্যকোনো উদ্দেশ্য কিংবা দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সুগভীর দৃষ্টি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গী


আরও
আরও পড়ুন