Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কট ক্রমান্বয়ে বাড়ছে

ড. অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

ছুটির দিনের এক ভোরে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। প্রথমে মাছ বাজারে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। ভোরের পরিবেশ সবসময় মনোরম। তার উপর প্রকৃতিতে হালকা শীতের আমেজ এখনো আছে। তাই পায়ে হেঁটে বাজারে যাওয়াটা আমার কাছে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যের। বাজারও খুব বেশি দূরে নয়, অদূরে নয়ারহাট। সাভারে আমার কর্মস্থল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষেই অবস্থিত। কর্মস্থলের আবাসিক কোয়ার্টারের গেইট থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে নয়ারহাট বাজার। ঠিক উল্টো পাশেই পাইকারি মাছের আড়ৎ। উদ্দেশ্য ছিল কিছু মাছ ও মাংস কেনা। যদিও পাইকারি বাজারের মাছ বিক্রেতাদের কাছে আমাদের মতো খুচরা ক্রেতাদের কদর কম। তারপরেও পাইকারি বাজারে মাছের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ওই বাজারকেই মাঝেমধ্যে বেছে নিই।

অফিসের গেইটের বাইরে পা দিতেই দেখি, এই সাত সকালেও গেইটের দুইপাশে বহুদিন ধরে স্তূপ করে রাখা মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলায় চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আছে। এই মাটির স্তূপগুলো প্রায় মাস দুয়েক আগে থেকে মহাসড়কের ধারে রাখা আছে। এখানকার নবনির্মিত কিছু কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য মহাসড়কের পাশে বড় আকারের কিছু পাইপ বসানো হয়েছে। এই পাইপ বসানোর কাজগুলো তড়িৎ গতিতে সম্পন্ন হলেও ফিনিশিং কাজ অর্থাৎ এই মাটিগুলো ভরাট করা কিংবা অতিরিক্ত মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে ওই কারখানা মালিকের কোনরকম তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ পুরো শীতের সময় ধরে এইসব মাটির স্তূপ থেকে ২৪ ঘণ্টা অনবরত ধুলা মাটি চারিদিকে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সেইসাথে মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলা ছোট বড় পরিবহন ধুলার পরিধিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়ে আসছে। অথচ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে যারা সর্বদা তৎপর ছিল, এসব মাটিগুলো অন্যত্র স্থানান্তর বা খোঁড়া জায়গা ভরাট করতে তাদের এখন আর দেখা মেলে না।

কোনো কারণ ছাড়াই রাস্তার পাশে রাখা এসব ধুলাবালি অনায়াসে বাতাসে মিলিয়ে চারপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি পথচারীর জন্য চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করছে, যেটা এই এলাকার চিরাচরিত দৃশ্য। মহাসড়কের উন্নয়ন, আশাপাশের শিল্পকারখানার উন্নয়ন, নতুন নতুন শিল্পকারখানা তৈরিসহ নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের কারণে এই এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যও অনেকটা হুমকির মুখে। অন্যদিকে বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে এখানে বসবাসকারী জনসাধারণের নাজেহাল অবস্থা। বাতাসে এত পরিমাণ ধুলাবালি কখনো প্রাণীকূল বা উদ্ভিদকূল কারো জন্যই শুভকর নয়। এই ধুলিকণার সিংহভাগ আসে নয়ারহাট বাজারের ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা বালু ব্যবসায়ীদের কারণে। আগে ধলেশ্বরী নদীর তীর দিয়ে এসব বালু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সেটা বিস্তৃতি লাভ করেছে বাজারের অপর পাশেও। নদীর পাশে কারগো থেকে বালি খালাস করার পরে ট্রাক ভরে সেই বালি এনে স্তূপ করা হয় বাজারের অপর পাশে। আবার যখন ক্রেতা বালি ক্রয় করছে সেটিও এখান থেকে ট্রাক ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই এখানে বালি ভর্তি এবং খালি ট্রাকের যাতায়াত হতে থাকে। মহাসড়ক হতে নয়ারহাট বাজারের প্রবেশ মুখের বাঁ হাতে পড়বে এই বালুর স্তূপ। যেটি নয়ারহাট বাজারসহ অত্র এলাকার মানুষের জন্য খুব বড় ধরনের স্বাস্থ্য হুমকি। জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকির পাশাপাশি সবুজ প্রকৃতির টিকে থাকার জন্যও এই ধুলাবালি প্রধান অন্তরায়। ধুলোয় ঢাকা পড়ে সাদা হয়ে যাওয়া এখানকার সবুজ প্রকৃতির আর্তনাদ শুনলেই বোঝা যায় কী পরিমাণ ধুলিকণা এখানকার বায়ুমন্ডলে উড়ে বেড়ায়।

মহাসড়ক, কল কারখানা, রাস্তাঘাট সবকিছুর উন্নয়ন দরকার আছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন করতে গিয়ে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি যদি মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয় তাহলে সেই উন্নয়ন আদৌ কতখানি প্রয়োজন আছে তা নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখা উচিত। যে উন্নয়নের স্রোতে লাগাতারভাবে ঢাকা শহর বায়ু দূষণে তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে, বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় শীর্ষের দিকে অবস্থান করছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য সর্বাধিক হুমকিতে স্থান পাচ্ছে, সেই উন্নয়ন ঢাকাবাসী কখনো প্রত্যাশা করে না। যদিও এগুলো ছাড়াও ঢাকাবাসী ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, ডেঙ্গু, সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ ঝুঁকিতে সার্বক্ষণিক ভুগছে।

যাইহোক সকালবেলার সূর্য আকাশে তখন পর্যন্ত না দেখা গেলেও বালুভর্তি ট্রাকগুলো ঠিকই পাহাড়সম ধুলির ফোয়ারা নিয়ে এই মহাসড়ক দিয়ে চলে যাচ্ছে। পাশে হাঁটাচলার তেমন কোনো ফুটপাত নেই। যেটুকু ছিল সেটাও ট্রাক স্ট্যান্ডে দখল হয়ে আছে। রাস্তার ফুটপাত দখল করে বানানো ট্রাক স্ট্যান্ডে থামিয়ে রাখা ট্রাকের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কাজটাই মূলত এখানকার পথচারীরা করে থাকে। আমিও ওই পথ ধরেই এগুতে থাকলাম। যদিও এসব ফুটপাতে বালু এবং ধুলিকণায় জুতার অর্ধেকটা নিমজ্জিত হয়ে যায়। তারপরে গাড়ির অসহনীয় হাইড্রলিক হর্নের লাগাতার শব্দে কান ঝালাফালা হওয়ার উপক্রম। এসকল নানাবিধ প্রতিকূলতার মাঝেই ৫-৭ মিনিট হাঁটার পরেই মাছ বাজারে পৌঁছে গেলাম। বাজারে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে বড় মাছ বা জীবিত মাছের দিকে নজর দিতে পারি না। শুধুমাত্র ভিড়ের মধ্যে একটু উঁকি দিয়ে দামটা জেনে অন্যদিকে চলে আসতে হয়। যেখানে ছোট মাছ বা কম দামি মাছ পাওয়া যায় সেদিকেই মূল লক্ষ্য থাকে। সবসময় বাজারে আসার আগ পর্যন্ত বড় মাছ কেনার ইচ্ছা হয়, কিন্তু দাম জানার পরে সেই ইচ্ছা বিলীন হয়ে যায়। প্রতিদিনকার মতো ওইদিনও কিছু তেলাপিয়া ও সরপুঁটি কিনলাম। তারপরেও এগুলোর দাম কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা। বাঁচতে হলে খেতে হবে এই দৃষ্টিকোণ থেকে যেটুকু না কিনলেই নয় সেটুকু কিনলাম এবং বরাবর সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।

এরপর গেলাম মাংসের বাজারে। স্বভাবতই ব্রয়লার মুরগি অত বেশি খাওয়া হয় না। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির মাংস নরম হওয়ায় বাচ্চাদের অধিকতর পছন্দের। তাই ব্রয়লার মুরগি খাবারের তালিকায় থাকে। মুরগির দোকানে গিয়ে জানতে পারলাম প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২৩৫ টাকা। দাম বেশি মনে হওয়ায় একটু খটকা লাগল। সেজন্য দোকানীকে আবারো জিজ্ঞাসা করলাম। দোকানীর সোজা সাপ্টা উত্তর ‘ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৩৫ টাকা’। নিজের কাছে একটু অস্বাভাবিক মনে হলেও কিছুদিনের পত্রপত্রিকায় খবরটি প্রায়ই শিরোনাম হচ্ছে। কিন্তু ২৩৫ টাকা কেজি হবে এমনটা ভাবিনি, তাই দাম শুনে একটু বেশি অবাক হলাম। প্রতিটি মুরগির দোকানে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি লিখে লিফলেট টাঙানো ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি পিচ মুরগি ড্রেসিং বাবদ ১০ টাকা, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ’। ওই লিফলেট আগে চোখে পড়েনি। দোকানদার মুরগির দামের সাথে অতিরিক্ত ১০ টাকা বেশি রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে লিফলেট দেখতে বলে। দোকানীকে কোনো কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না। কেননা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম তো ঠিকই বাড়ানো হয়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ যতই নগণ্য হোক না কেন সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ভিতর এখন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। আর সেই কারণেই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার অজুহাতে সবকিছুতে বাড়তি দাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ডিমের বাজার কালেভদ্রে সহনীয় হলেও বেশিরভাগ সময় অস্থির থাকে। ডিমের দোকানে গিয়ে শুনি ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৫০ টাকা। তার মানে পরিবারের সকল সদস্যের দিনে ১টি করে ডিম খাওয়া এখন বেশিরভাগ পরিবারের জন্য দুঃসাধ্য। একসময় শুনতাম ফার্মের মুরগি, ফার্মের মুরগির ডিম, চাষের পাঙ্গাস, কই বা তেলাপিয়া মাছ খেলে অনেকের জাত যায়। অর্থাৎ এগুলো নাকি নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চাষাবাদ এবং উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়ায় এধরনের মাছ, মাংস বা ডিম অনেকের খাবারের তালিকায় স্থান পেত না। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এসকল মাছ মাংসই এখন মানুষের নাগালের বাইরে।

এরপর একটা ইলেক্ট্রিক কেটলি কেনার জন্য ক্রোকারিজের দোকানে গেলাম। গেল সপ্তাহে যে ইলেক্ট্রিক কেটলির দাম ছিল ৭৫০ টাকা, সেটি এখন ৮৫০ টাকা। বিক্রেতাকে আগের দাম বললে বলে ‘আগের সপ্তাহের দাম ভুলে যান। এখন এটার দাম ৯০০ টাকা হইছে’। ব্যবসায়ীদের এধরনের কথা বার বার শুনতে শুনতে এখন বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যেকোন ইস্যু পেলেই ব্যাবসায়ীরা ইচ্ছামত জনগণের উপর দাম চাপিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী জনগণ কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে নীরবে সহ্য করে যায়। সেকারণে ব্যবসায়ীদের চাপানো দাম বাজারে স্থায়ী হয়ে যায়। আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়েনি ঠিকই, কিন্তু বাজারের প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিক্রেতাদের দাবি, গ্যাসের ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কারখানায় উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বেশি হচ্ছে। তাই মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

ফল বাচ্চা থেকে বয়োবৃদ্ধ সকলের কাছে লোভনীয়, সহজপাচ্য, সুস্বাদু এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। কিন্তু ফলের বাজারে ঘুরলে চোখ চড়ক গাছে উঠে যায়। সকল প্রকার ফলের দাম এত বেশি, যেটা সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সুস্বাদু খাবারের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু দেশি ফলের বাজারমূল্য কম থাকলেও ঢাকা শহরে আসতে আসতে সেগুলোর দাম ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। সব রকম দেশীয় মৌসুমি ফলের বেলায়ও একই পরিস্থিতি লক্ষণীয়। সেইসাথে দীর্ঘদিন তাজা রাখতে ফলে মেশানো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এই ফলকে বিষক্রিয়ায় ভরে দিচ্ছে। তাই বেশি দামি কিনলেও সেটা যে মানুষের জন্য উপকারী হবে, সেই নিশ্চয়তা আমাদের দেশে নেই। তাই ফলের বাজারে ঢুঁ মেরে খালি হাতে ফিরে আসা ব্যতীত তেমন কিছু করার থাকে না।

এবার বাজার থেকে ফেরার পালা। একটা রিকশা নিয়ে অফিসের কোয়ার্টারে প্রবেশ করলাম। সবসময় ২০ টাকা ভাড়া নেয়, তাই ইদানিং কোনো রিকশাওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন পড়ে না। রিকশা নিয়ে কোয়ার্টারে প্রবেশ করেই ২০ টাকা ভাড়া দিলে রিকশাওয়ালা বলে ‘স্যার আর ৫ টাকা দেন’। আমি ২০ টাকার কথা বললে সে বিনয়ের সাথে বলে ‘স্যার আমিও বহুদিন ২০ টাকা করেই আইছি। এখন ৫ টাকা বেশি লই, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে’। আমি কিছু না বলে তার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাসায় প্রবেশ করি। রিকশাওয়ালা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অজুহাতটি হয়তো অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। কেউ কেউ হয়তো তাকে উপহাস করে বলবেও যে, ‘তোমার রিকশাও কি গ্যাস বা বিদ্যুতে চলে নাকি’। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি উপহাস করার মতো মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে তার কথা ঠিকই আছে। সত্যিই তো গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সেটা রিকশার জ্বালানি হিসেবে না বাড়লেও রিকশাওয়ালার পারিবারিক ভরণপোষণের ব্যয় বেড়েছে। মাছ বিক্রেতা, মাংস বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা সবার জন্য এই একই বিষয় প্রযোজ্য যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তাই সবকিছুরই এখন দাম বাড়তি। দিনের শুরুটা হয় এই দাম বাড়তি কথা শুনতে শুনতে। মুদি দোকানে গেলে কোনো পণ্যের দাম এত বেশি কেন, শুনলে তাঁরা প্রতিউত্তরে বলে ‘কবে কিনছেন?’। যদি বলি গত সপ্তাহে, তাহলে তাদের পরিষ্কার উত্তর ‘গত সপ্তাহের কথা ভুলে যান, এখন এই দাম লইলে লন, না লইলে আগামী সপ্তাহে আরও দাম বাড়ব’। একই কথা সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও শোনা যায়।

গ্যাস, বিদ্যুৎ বা জ্বালানির দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বাড়ে। দাম বৃদ্ধির ফলস্বরূপ সবাই সবার দাবি আদায়ে বদ্ধ পরিকর থাকে। পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডেকে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করতে থাকে। চাল-ডাল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিক্রেতারা তাদের বৃদ্ধি করা দামের দাবিতে অটল থাকে। সবজি বিক্রেতা তার নির্ধারিত দামের কমে কিছুতেই সবজি বিক্রি করবে না বলে বদ্ধপরিকর থাকে। কিন্তু পেট মহাজন তো আর বসে থাকতে চায় না। জীবন বাঁচাতে পেটে খাবার দিতে হবে। যে খাবারের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে নির্দিষ্ট বেতনভুক্ত মানুষ। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, চিনি, আটার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। খাওয়া খরচ থেকে শুরু করে পারিবারিক সকল খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এসকল মানুষের আয় আগের অবস্থানে স্থির রয়েছে। সবার দাম বাড়ানোর অধিকার, আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু এই প্রকৃতির মানুষের নাজেহাল অবস্থা। ইচ্ছা করলেই তারা বেতন বাড়ানোর দাবি তুলতে পারে না, আন্দোলন করতে পারে না। আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে পারে না। বিক্রেতা যে দাম বলে সেই দামেই বাধ্য হয়ে পণ্য কেনা লাগে। সময়ের সাথে সাথে এই প্রকৃতির মানুষের সংকট দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।


লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন