Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গী নিবরাস ঝিনাইদহে বাসা ভাড়া নিয়ে কাটান সাড়ে ৪ মাস

বাড়িওয়ালা সাবেক সেনা সদস্যসহ ৫ জন গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার জঙ্গী নিবরাস ইসলাম পরিচয় গোপন করে সাঈদ নামে ঝিনাইদহ শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন, এমন খবরে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, নিবরাস ইসলামের সাথে মোস্তফাসহ আরো ৭/৮ জন যুবক ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। হামদহ সোনালীপাড়ামসজিদের ইমাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া বিভাগের ছাত্র রোকনুজ্জামান তাদেরকে এই বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেন। নিবরাস ইসলাম ওরফে সাঈদ গত ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার মাস ওই ভাড়া বাড়িতে ছিলেন। বাড়ির মালিক সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট কওছার আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস নাহার সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান। তবে তিনি নিবরাস ইসলামকে সাঈদ বলে জানতেন। গত সোমবার একটি বেসরকারী টেলিভিশনের অনুসন্ধান দলের কাছে বিলকিস নাহার নিবরাস ইসলামের ছবি দেখে কথিত সাঈদ বলে শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপুর নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট কওছার আলী মোল্লার বাড়িতে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার বলেন, গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন জঙ্গী নিবরাস ইসলামই সাঈদ। আমি ছবি দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ছবির সাথে চেহারার মিল রয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার বাসিন্দা স্থানীয় সরকার কেসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র নওর জামিল বর্ষণ জানান, সাঈদ তাদের পাড়ায় চার মাসের বেশি সময় ভাড়া ছিল। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন বলে তাদের কাছে জানায়। এ সময় সাঈদ তাদের সাথে ফুটবল খেলতেন। তিনি অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলতে পারতেন। এ জন্য সবাই তাকে পছন্দ করতেন। বর্ষণ আরো জানান, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গীদের ছবি প্রকাশের পর আমরা তাজ্জব হয়ে যায়। তাদের সাথে খেলা করা সেই সাঈদই নিবরাস ইসলাম বলে তারা ছবি দেখে জানতে পারেন। এদিকে জঙ্গী নিবরাস ইসলামকে সহায়তার দায়ে ঝিনাইদহ থেকে ৫ জনকে আটক করেছে ঢাকা থেকে আগত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিম। আটককৃতরা হলেন, ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার ঠান্ডু মোল্লার ছেলে কাওছার আলী মোল্লা, তার দুই ছেলে ঝিনাইদহ কলেজের ছাত্র বিনছার আলী, নারিকেলবাড়িয়া কলেজের ছাত্র বেনজির আলী, হামদহ সোনীপাড়া মসজিদের ইমাম যশোরের ঝিকরগাছার নায়রা গ্রামের রোকনুজ্জামান ও শারশিনা মাদ্রাসার ছাত্র আদর্শপাড়া কচাতলার মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের কিশোর ছেলে হাফেজ আব্দুর রব। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যার সময় এদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবী করেন বিলকিস নাহার। তিনি আরো দাবী করেন, ঈদের দিন (৭ জুলাই) তাকেও ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় (৬ জুলাই) র‌্যাবসহ একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তার স্বামী, দুই ছেলে, মসজিদের ইমাম ও তারাবির নামাজের হাফেজকে নিয়ে যায়। বুধবার বিকাল থেকে দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ঝিনাইদহ থেকে ৫ সন্দেহভাজন জঙ্গী আটকের খবর প্রচার করে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় একাধিক সাংবাদিক সরেজমিন তদন্ত করেন। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। উঠে আসে নানা কৌতূহলী প্রশ্ন। প্রশ্নের পাশাপাশি সচেতন মানুষের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে সোনালী পাড়ার সাবেক সেনা সদস্যের ভাড়া বাড়ির ওই সাঈদই যদি নিবরাস ইসলাম হয়, তবে তিনি ঝিনাইদহ থাকা অবস্থায় জেলায় কিছু আলোচিত হত্যা সংঘটিত হয়। এই হত্যার তালিকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই পুরোহিতসহ রয়েছে খ্রীষ্টান হোমিও চিকিৎসক ও শিয়া মতবাদের এক ব্যক্তি। এই চার হত্যাকা-ের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রচার করে। যা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সাথে মিল রয়েছে। গত ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী খুন হন। নিহত আনন্দ গোপালের বাড়ি ও নিবরাস ইসলাম ওরফে সাঈদ যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক কওছার আলী মোল্লার বাড়ি একই গ্রাম বাগডাঙ্গা করোতিপাড়ায়। এ নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মাঝে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকের মন্তব্য র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর ফাঁকি দিয়ে ঝিনাইদহ শহরকে নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলে সন্দেহভাজন জঙ্গীরা। এই অঞ্চলের সাহসী ও উগ্র মনোভাবের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেদের জঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলে। এর আগে গত ৭ জানুয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রীষ্টান হোমিও চিকিৎসক সমির বিশ্বাস ওরফে সমির খাজা ও ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া মতবাদের হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ গত ১ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে এবার স্থানীয় রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার শেখ জানান, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তিনি বলেন, এদের কে আটক করেছে, কেন করেছে বলতে পারছি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গী নিবরাস ঝিনাইদহে বাসা ভাড়া নিয়ে কাটান সাড়ে ৪ মাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ