পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ব্যারাজের আওতায় আরো দুটি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকারের সেচ বিভাগ। ২০ বছরেরও অধিক সময় পর নতুন খাল খননের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তি কমে যাবে। কৃষিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। বহুল আলোচিত তিস্তাচুক্তির সম্ভাবনা আরো অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী, যার উদ্ভব সিকিমে। সিকিম সরকার ইতোমধ্যে তিস্তার ওপর পানিবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই নদীর ওপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে গজলডোবায় তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প প্রধান। ১৯৭৫ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পের আওতায় খাল খনন করে সেই খালের মাধ্যমে তিস্তার পানি টেনে নিয়ে সেচ নিশ্চিত করাই আসল লক্ষ্য। প্রকল্পের মাধ্যমে ৯.২২ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১.০৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকার খবর মোতাবেক, ইতোমধ্যে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন প্রায় এক হাজার একর জমি সেচ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই জমিতে তিস্তার বাম তীরে ১৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। তিস্তা ও জলঢাকা থেকে পানি তুলতে কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ আরো একটি খাল খনন করা হবে। একথা কারো অজানা নেই, তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা রয়েছে। অভিন্ন নদী তিস্তার পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণে বাংলাদেশ পানির ন্যায়সঙ্গত হিস্যা থেকে বর্ধিত হচ্ছে। এ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তিতে আসার জন্য বাংলাদেশ বরাবরই তাকিদ দিয়ে আসছে। ২০১১ সালে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার মুখে তা হতে পারেনি বলে বলা হয়। চুক্তিটি এখনো ঝুলে আছে।
সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তার পানি টেনে নেয়ায় সঙ্গতকারণেই স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশও বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গড়ে তুলেছে তিস্তা নদীর ওপরই। তার তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সম্প্রসারণ পানির অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় যত হেক্টর জমি এসেছে, তাও পানির অভাবে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। প্রকল্প কার্যত অকেজো হওয়ার পর্যায়ে এসে পড়েছে। প্রতি বছরই এর সেচের আওতা কমানো হচ্ছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্য ব্যহত হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানিয়েছেন, তিস্তা অববাহিকায় বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি ব্যারাজ প্রকল্প রয়েছে, সেখানে পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। তখন নদীতে কিছুটা পানি আসে, বাংলাদেশও কিছু পায়। ভারত তার প্রকল্পের জন্য পুরো পানি প্রত্যাহার করার পরে তলানিটুকু বাংলাদেশ পায়। এখন সেই তলানি থেকে ভারত যদি পানি প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে বাংলাদেশের আমন মওসুম মারাত্মক ক্ষতি হবে। রংপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট অর্থাৎ তিস্তা প্রকল্পের এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের তিস্তা প্রকল্পের আওতায় নতুন করে খাল খননের উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের এবং কতটা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, ড. আইনুন নিশাতের বক্তব্যে তা কতটা উপলব্ধি করা যায়। আসলে বাংলাদেশকে তিস্তার পানি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করারই এটা একটি উদ্যোগ। স্মরণ করা যেতে পারে, গঙ্গার পানি নিয়েও একই পরিণতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। গঙ্গার পানি বণ্টনে দু’ দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও বাংলাদেশের পক্ষে কোনো গ্যারান্টি ক্লজ না থাকায় সম্পূর্ণ পানিই ভারত ফারাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বাঁধের ফাঁক-ফোকড় গলিয়ে যতটুকু পানি আসে, বাংলাদেশ ততটুকুই পায়। ফলে শুকনো মওসুমে পদ্মা ও তার শাখা-প্রশাখা পানি শূন্য হয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়া কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশে মারাত্মকভাবে পড়ছে।
অভিন্ন নদীর পানির মামলা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের। ভারতের সিকিম কিংবা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নয়। সুতরাং, পানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যে কোনো সমঝোতা, সিদ্ধান্ত ও চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই করতে হবে। রাজ্য সরকারের অমত বা অসম্মতির কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। তিস্তা চুক্তি যে এতদিন আটকে আছে, তার জন্য কোনো রাজ্য সরকার নয়, কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায় নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বলা হয়, তিস্তার উজান থেকে সিকিম পানি সরিয়ে নেয়ার পর যে পানি আসে তা পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। পশ্চিমবঙ্গই পানি পায় না, বাংলাদেশকে কী দেবে? রাজ্যে-রাজ্যে পানি বিরোধের মীমাংসা করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকেই। বাংলাদেশকে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। সেটা কীভাবে হবে, তা কেন্দ্রীয় সরকারকেই দেখতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১১ সালে দীর্ঘ মেয়াদী সহযোগিতার যে চুক্তি হয়েছে, তাতে অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ড. আইনুন নিশাতের মতে, সারাবছর তিস্তায় যথেষ্ট পরিমাণ পানি আসে। সিকিমে প্রকল্প নিয়ে বর্ষার পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করলে শুকনো মওসুম দু’ দেশের পানির কোনো সংকট হবে না। এ বিষয়ে উদ্যোগ ভারতকেই নিতে হবে, বাংলাদেশ সহযোগী হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পানি রাজনীতির যে রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তাতে বলা যায়, ভারত অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থা নেবে বলেও মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প পথ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্টে’র কথা উল্লেখ করা যায়। এ প্রকল্পে চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে রাজি হয়েছে। এক বিলিয়ন ডলার খরচের এই প্রকল্পে চীন দিতে রাজি হয়েছে ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার। বহুমুখী এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে কৃষি, শিল্প, বাঁধ, সড়ক, পর্যটন, কর্মসংস্থান, মৎস্য চাষ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হবে। ভারতের অসম্মতির কারণে বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে বিরত রয়েছে। অতঃপর বিরত থাকার আর অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।