Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদীভাঙন রোধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে মূলত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়কে গণ্য করা হলেও নদীভাঙনকে সেভাবে ধরা হয় না। অথচ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নদীভাঙন। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ি-ঘর ফসলাদির ক্ষতি হলেও ভিটেমাটি ও জমি থেকে যায়। নদীভাঙনে এর কিছুই থাকে না। সব হারিয়ে মানুষ পথের ফকির হয়ে যায়। এমনকি স্থায়ী ঠিকানা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের শিকার মানুষের নাগরিকত্ব ও ভোটের অধিকার সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। নদীভাঙন এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা বসতভিটা, জমিজমা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, হাটবাজার, হাসপাতালসহ এমন কিছু নেই, যা গ্রাস করে না। অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশে নদীভাঙনে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের এক জরিপে বলা হয়েছে, ভাঙনে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদী ভাঙনে দেশের অভ্যন্তরের মানচিত্রও পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ নদীভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও যথাযথ প্রতিকার মিলছে না।

নদীভাঙন নতুন কিছু নয়। এটি একটি নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পদ্মা ও যমুনা অববাহিকার জেলাগুলো প্রতিনিয়ত ভাঙনের শিকার হচ্ছে। বন্যার সময় তো বটেই শুকনো মৌসুমেও এসব জেলার তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন অব্যাহত থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর হিসেবে প্রতিবছর দেশের ১৩টি জেলা কমবেশি নদীভাঙনের শিকার হয়। এর মধ্যে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারিপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ। এছাড়া শরিয়তপুর, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নেত্রকোণাও ভাঙনের শিকার হয়। বর্ষায় এসব এলাকাসহ সারাদেশে ভাঙন স্বাভাবিক হলেও উল্লেখিত জেলাগুলো সারাবছরই ভাঙনের কবলে রয়েছে। এসব এলাকার অনেক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ফসলিজমি, ভিটেমাটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসাসহ সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, পুরো একটি এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। সেই এলাকার অস্তিত্ব নেই। যদিও নদীর একপাড় ভাঙলে অপর পাড়ে তা জেগে উঠে। তবে ভাঙনের শিকার মানুষের পক্ষে তার স্বত্ব ও মালিকানা পাওয়া কঠিন। ফলে সব হারিয়ে এসব মানুষকে উদ্বাস্তু হয়েই থাকতে হচ্ছে। এতে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ফসল উৎপাদনসহ মূল্যবান সম্পদ যেমন কমছে, তেমনি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ভাঙনের শিকার মানুষদের আক্ষেপ, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি ভাঙন ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিত, তাহলে তাদের সর্বহারা হতে হতো না। ভাঙন রোধে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও একশ্রেণীর অসাধু ঠিকাদার ও কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বর্ষা এলেই তারা ভাঙন রোধের বাণিজ্য শুরু করে। ভাঙন প্রতিরোধে শুষ্ক মৌসুমের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তা ছাড় হয় বর্ষা মৌসুমে। এর কারণ হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে ব্লক ফেললে তা দৃশ্যমান থাকে। বর্ষা মৌসুমে ফেললে কয়টি ব্লক ফেলা হয়, তার কোনো হিসাব থাকে না। এখানেই দুর্নীতির বিষয়টি লুকিয়ে রয়েছে। ভাঙনের শিকার সিরাজগঞ্জের মানুষের অভিযোগ, পানি উন্নয়নবোর্ডের একশ্রেণীর ঠিকাদার রাতারাতি কোটিপতি হলেও ভাঙনের কবলে পড়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনকে তারা বাণিজ্যে পরিণত করেছে। এসব দুর্নীতিবাজের জন্য নদীভাঙনের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।


বিশ্বের বহুদেশে নদী ভাঙন থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপ ও নদী শাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। নদী যতই খর¯্রােতা হোক না কেন, তা শাসনের মাধ্যমে স্থির রাখা হয়েছে। সাধারণত নদীর নাব্য কমে গেলে ভাঙন প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। নাব্য বজায় রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়। দেশে ড্রেজিং ব্যবস্থা থাকলেও এবং শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও তার পুরো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর মূলে রয়েছে দুর্নীতি। এর প্রতিকার না হলে নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের কারণে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হবে এবং অমূল্য সম্পদ বিলীন হয়ে যাবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। এখনই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নদীভাঙন ঠেকানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুষ্ক মৌসুম থাকতে থাকতেই ভাঙন প্রবণ এলাকার ভাঙন ঠেকাতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->