শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
শপথ
সুজন শান্তনু
ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাও, প্রাণ ভিক্ষা চাইব না
আমৃত্যু লোহার সেঁক দাও, মাথা নত করব না
আমার দু’চোখ উপড়ে ফেলো, গরম সীসায়
আমার শরীর ঝলসে দাও, আহাজারি করব না।
আমার সম্মুখে লুফে নাও আমার প্রিয়ার
ইজ্জত আর লাঞ্ছিত করো মা-বোনের গেরস্থালি;
বিশ্বাস করো আমার ধৈর্যর বাঁধ ভাঙবে না,
কাঁদবো না সর্বহারা হয়ে আর্তি করব না তবু
খবরদার সীমার যদি
আমার মাতৃভূমির বুকে তোমার নাপাক হাত
একবার পড়ে, খোদার কসম সইব না আর।
সূর্যসেন, তিতুমীর অথবা প্রীতিলতার শৌর্যে
আমার টগবগে রক্ত ধ্বংস করবেই তোমার
স্বৈরাচারী মূর্তি আর আমার ফুসফুস দম নেবে
‘জয় বাংলার’- এমনই শপথ এ মনে সদা।
আমরা অনুকরণপ্রিয়
রিক্তা রিচি
আসুন চোখে চোখে সুরাপান করি মৃত্যু
দল বেঁধে মেতে উঠি রুশীয় মদে
মিথ্যার স্তূপ গড়ে তুলি প্রকৃতির তাকে তাকে
মাথা ফ্লোরে দিয়ে পা দেয়ালের উপরে বাড়িয়ে দিয়ে
নিমগ্ন হই ভাবনার জগতে
আমরা জ্ঞানী তা প্রমাণিত হোক।
আসুন দলে দলে খুলে দেই পোশাক
শয়তান ঝাঁপিয়ে পড়–ক
ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুষে নিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
ভোগশেষে ডাস্টবিনে ফেলুক মৃতলাশ।
জনতার চিৎকার শোনার সময় নেই
বিক্ষোভ, মিছিল তোয়াক্কা করি না
ধর্ষিত হবে নারী- এ তো তেজপাতা
সময় এখন ক্ষমতার।
আসুন কবর থেকে তুলে ফেলি
সকল ধর্ষিতার লাশ
তারপর মেতে উঠি উল্লাসে
দ্বারে দ্বারে হোলির উৎসব।
মতানৈক্য
তানি হক
মতানৈক্যের ঠিকানা নিলামে তুলবো
বিনিময়ে তুমি এক পশলা অভিযোগ জমিয়ে রেখো
উঁহু! অস্তগামী অভিলাষ নয়
দুচোখের দক্ষিণ কোণে
আমি বিছিয়ে রাখবো অস্তিত্বহীন পাতাদের সংসার।
আর ওই আঁধার আমাদের না
তারও আগে,
বন্য পথচারী ওখানে আগুন জ্বেলেছিল
তার পদচারণ পূর্বপুরুষগণ বোতলবন্দি করেনি
তাই চলো, অবুঝ শিকারির মতো
লুপ্তহওয়া মানচিত্রজুড়ে
নিজেদের কবর খুঁড়ে রাখি।
এ শহরে একা একা
রওশন মতিন
কাল রাতে ঘুমিয়েছিল পৌরাণিক ফসিল যেন সবাই।
এ শহরে আমি একা একা হেঁটেছি অনেক অনেক পথ,
চাঁদ আর কৃত্রিম আলো নিয়নের প্রভার মাখামাখি
মনে হল ইট, কাঠ, দালান-কোঠা-সবই ভগ্নস্তূপ-
প্রাণহীন দোসর আমার।
কোথাও কি উঁকি-ঝুঁকি মারে জীবন্ত চুম্বন,
ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে হাঁটি একা একা
ইটের খোয়া ভাঙার মত হাতুড়ি ঠুকে ঠক্ ঠক্
আজ মগজ ধোলাইয়ের খেলায় মেতেছি শেষতক,
সারি সারি বাড়িঘর- রাতের সাজানো মঞ্চনাটক
ব্যঙ্গচিত্র ... ভাঁড়ামীর নকল কসরত দেখতে পাই শব-সমস্তই
নর্দমার স্রোত ডিঙ্গিয়ে, গলিঘিঞ্জির পাঁকে পাঁকে
দেখিছি ক্লেদাক্ত শবগন্ধ আর ভূতুড়ে নরক।
মার্কামারা সাইনবোর্ডসর্বস্ব পোশাকি মেজাজ,
তাল মেলোনো ছন্দের অন্তঃসারশূন্যতার গহ্বরে
আমি একাই বাজিয়ে ছিলাম জীবনের অর্ক্রেস্টায়
দুরন্ত ব্যঞ্জনাময় সিষ্ফনী অনেক।
অবশ্য কয়েকটি তরল মুদ্রা পকেটে সওয়ার ছিল
দু’ঠোঁটে জ্বলন্ত গোল্ডলিফ সিগারেট ঝুলছিল,
কাল রাতে পৌরাণিক ফসিল সবাই যখন ঘুমিয়েছিল
এ শহরে আমি একা একা হেঁটেছি অনেক অনেক পথ,
অপারেশন থিয়েটারে পোস্টমর্টেমের যন্ত্র হাতে
এ শহর আমি তন্ন তন্ন খুঁড়েছি অনেক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।