শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
গাল্পিক কবি
নূরনবী বেলাল
আমার বুকের সন্ধিস্থান শূন্য হয়ে গেছে
ছলনার নদী রেখে গেছে অনুবৃত্তি
মায়ার অটুট বাঁধন; নিরেট স্বপ্নের জাল ছিন্ন-ভিন্ন
মনোহরী পদাবলি শোনাতো সে
নিছক প্রেমের আলোক প্রজ্জ্বলিত করে-
সে ছিল গাল্পিক কবি, দিকভ্রান্ত নদীর মত
তার বহুরুপী ছলনার স্রোতে ভেসে গেছে
আমার সমস্ত সুখের ঠিকানা
রিক্ত আমি-
ধূসর পৃথিবীর আদিম বাসিন্দা
ফেরারী বাতাস, মেঘের রঙিন ভেলা
এলোমেলো খেলতে ভালোবাসে আমায় নিয়ে।
আশার বিহঙ্গরা ঘর বাধে জীর্ণ-শীর্ণ কুটিরে
পিছনের আলো দিয়ে বায়োস্কোপ দেখি-
কখনো ভরা নদী কখনো বা অনামিকা চাঁদ!
নিঃসঙ্গতা আমার প্রেমিকার নাম
দেলোয়ার হোসাইন
নিঃসঙ্গতা আমার যৌবনের এক নদীর নাম ছিল। যার দুই তীরে
জেগে থাকতো কুয়াশা ভেজা চোখ, চোখের নিচে কালি পড়া কাঁদা-
জলের হাহাকার। পিচ্ছিল ঘাটে পড়ে থাকা খয়েরি শাড়ির আর্তনাদ,
কুল ভাঙার বেদনা আর ছেড়া বুক নিয়ে পরাণ মাঝির সাথে ঝগড়াঝাঁটি...
একদা কাশফুলের দৃশ্য জমাতে গিয়ে দেখি গাঙচিলের মৃত শরীর পড়ে
আছে, যার নোংরা পালকজুড়ে পিপীলিকার অবাধ আসা-যাওয়া। যদিও
গাঙচিলের সাথে আমারও উড়বার কথা ছিল, কথা ছিল নদী হবে
আমাদের যৌবনের সবচেয়ে প্রিয় প্রেমিকার নাম...!
অথচ নিঃসঙ্গতা এখন আমার প্রেমিকার নাম আর যৌবনের নদীজুড়ে
গাঙচিলের ওড়াউড়ি...!
তোমার তুলনা শুধুই তুমি
ফরহাদ ইলাহী
শরতের শিশিরভেজা গোলাপের পাপড়ি কি তুমি?
নাকি তুমি দীর্ঘ বৃষ্টিস্নাত চারণের তাজা দুর্বাঘাস?
নাকি পউষের শৈত্যধৃত সকালের মিদু সূর্যতাপ?
নাকি তুমি উন্মুক্তবক্ষ সর্বংসহা সজীব ভূমি?
না তোমার তুলনা শুধুই তুমি!
গোলাপের কোমলতা দেখি ভেসে যায় সময়ের স্রোতে
সজীব কোমল দুর্বা দেখি নির্জীব হয় গ্রীষ্মের তাপে,
কোমল উষ্ণ সূর্যকে দেখি রুক্ষতার হীন রূপ নিতে,
দেখেছি মেঘের অনুদারে সজীব ভূমি নির্জীব হতে।
তুমি উদার, তুমি কোমল কখনও দেখি নি তোমাকে
অনুদার, কর্কশ-রুক্ষ, কোনো লোভ-ক্ষোভ না পায়াতে।
তোমার জীবন নিতে এসে নাশী পেয়েছে তোমার ক্ষমা
কোন উদারতা-কোমলতা পারে স্পর্শ করতে তোমা?
তুমি তপ্ত মরুর বুকে ফোটা শীতল সুবাসের ফুল
তুমি আঁধার-টোটা তেজস্বী সুরুজ, মুহাম্মাদ রসূল।
বোস্তানে আজব বৃক্ষ
জসিম মাহমুদ
আমার বাড়ির বোস্তানে এক আজব বৃক্ষ উঠছে বেড়ে
কা--ডালে রূপোর রঙে মাজা-ঘষা
স্বর্ণরঙের পাতায় পাতায় সূর্য হাসে ঝলমলিয়ে
ছোট্ট ছিলÑ তরতর এই গাছটা কেমন মাথা সমান।
কোন একদিন ভোরে আমার নজর গেলো
সাদা জ্যোতির বিচ্ছুরণে প্রথম কুঁড়ি আলোকিত
থ’ হয়ে রই কয়েক বছর ফুলের পানে
আকাশ ভেঙে সূর্য যেন গুলিস্তানে উদয় হলো
উদয় হলো হাজার রঙের মানুষরে ভাই
থ’ হয়ে যায় ঘড়ির কাটা
দিবারাতের সব ব্যবধান থ’ হয়ে যায়।
পাঁচটি ফুলের কমতি- আমার অবাক লাগে
পরখ করি গাছেই আছে তামাটে রং ধারণ করে
অবাক জিনিস- হাতের ছোঁয়ায় চূর্ণ হয়ে মিলিয়ে গেলো।
এমনিভাবে প্রতি বছর
বিবর্ণ হয় রঙের ধরন- একটা করে যায় মিলিয়ে।
সবিস্ময়ে সকল দুয়ার মুক্ত হলো-
যেদিন রাতের শেষ প্রহরে ধূসর রঙের আঁধার চিরে
ষাটটি ফুলের ঘোমটা হলো উন্মোচিত;
রহস্যময় বৃক্ষ আমার গূঢ়তত্ত্ব বুঝিয়ে দিলো-
আর মাত্র একটি ফুলের ক্ষীণ আলো জ্বলছে একা।
একদিন এক অন্ধকারে ঝরে গেলাম অন্তরালে-ৃ
গাছটি তখন উধাও হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।