শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ভালোবাসো মন খুলে
আলম শামস
বৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চাল
বর্ষার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘর
ভাদ্রের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি।
তুমি শুধু একা।
ভয় শঙ্কায় হারিয়ে গেছে ভাষা
জীবন সংগ্রামের নেই কোন আশ্বাস।
জীবনে একবার বলেছিলে ভালোবাসি।
সেই ভালোবাসা হাঁটি হাঁটি পা পা করে
আজ রক্তে মাংসে পরিপূর্ণ যুবক।
সেই যুবকের হাতে হাত ধরে
চোখে চোখ রেখে এগিয়ে যাও আগামীর পথে।
স্বপ্নের সোনালি জীবন রাঙাতে
সব হারানোর শোক এখন শক্তিতে পরিণত করে
ভালোবাসাকে আলিঙ্গন জানাও।
জড়তা জীর্ণতা হতাশা ভুলে
ভালোবাসো মন খুলে।
পরাজয় আমার মাথা ছুঁয়েছে
হাসান রুহুল
কুয়াশার পায়ে চুমু খেয়ে পথ চলছি দিকভ্রান্ত বালিহাঁস
স্বপ্নরা বুঁনোহাস হয়ে ডানা ঝাপটায় তামপাটে দিগন্তে
শয়তানের হিস হিস শব্দে কাঁপছে সবুজ শাড়ির আঁচল
অসমাপ্ত ইচ্ছাগুলো বিউগলের সুর তুলে কাঁদে
শিকারীর ভাগাড়ে।
তাল বেতালের তালগোলে তলিয়ে গেছে
শিশিরসিক্ত সোনালি সকাল
গণমানুষের চোখের জলে ভাসছে লাল ফাইল
অধিকার যখন পড়শির হাতে
অধিকর্তা বাজায় করতাল।
ভেজা বিড়াল হয়ে বেদনাবিভোর চিত্তে
দাঁড়িয়ে থাকে সময়ের নাবিক।
প্রেমার্দ্র বুকে নরকের ঘণ্টা হয়ে বাজে
প্রেয়সীর উতলা যৌবন।
পরাজয় আজ মাথা ছুঁয়েছে
আমার কবিতা আজ অন্তপ্রাণহীন
স্মৃতিগুলো সব বিস্মৃতি।
যাযাবর সময়ের খোঁজে
এ.কে. আজাদ
চিরচেনা সময়ের নাগপাশে
আটকে আছেÑ
কোজাগরী রাতে
রঙ-বেরঙের জোনাকির আলো,
মৃত্তিকার শরীরের সবুজ ফসিল
আজন্মকাল দাঁতে কাটে
মানবরূপী মর্কট।
স্বপ্নময় রঙিন জীবন
যাযাবর সময় খোঁজে
আদিম ভালোবাসায় জীবন্ত শরীরী স্বাদ,
কালের চক্রে ভেসে চলে
বহুরূপী সোনালি কাবিন।
নতুন সকালের নরম আলোয়
কষ্টের দিন ফুরালে
কবির চোখের রেটিনায়
জ্বলজ্বল করে
গোধূলীবেলার বাহারী সূর্যের সুখ।
ময়নাতদন্ত
কালীপদ দাস
হিমসকালে রোদ খুঁটে হিম খোঁজা,
অর্থহীন
সব খোঁজাতেই আবিষ্কারের আনন্দ নেই
পেঁয়াজের খোসার মতো ¯েœ্হ ছাড়াতে যাওয়া
কিংবা,
বুকের কাপড় সরিয়ে ফেলে ভালোবাসা খুঁজতে যাওয়া
অর্থহীন,
এই তো সেদিন
আমার বন্ধু খালেদ মিঞা
ব্লাড-ব্যাঙ্কের সামনে পড়ে মরে গেল পুলিশ এলো,
বেওয়ারিশ লাশ বলে তুলে নিয়ে গেল থানায়।
তারপর লাশকাটা ঘরে
মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে
খালেদের শরীরটাকে করল ফালা-ফালা
ভেবেছিলাম চিৎকার করে বলি,
খোঁজার কিস্সু নেই,
সত্যটা আমি জানি,
ক’দিন না খেয়ে থেকে
ও আবার গিয়েছিল রক্ত দিতে।
বেঁচে থাকতে খালেদই বলত,
গভীরে যাওয়াটাও একটা আর্ট,
শিখতে হয়।
খালেদভাই আরও অনেক কথাই বলত
তবু সে হেরে গেল
অনেকটা উপরে উঠেও সাপের মুখে পড়ে
গড়গড়িয়ে তলিয়ে গেল।
এ-যাত্রা আর তার একশো’তে ওঠা হলো না।
মই চড়ে, তাইÑ
হিমসকালে রোদ খুঁটে হিম খোঁজা
অর্থহীন।
কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
চিলেকোঠার বারান্দায় বসেছিলাম আলতোভাবে।
কর্মব্যস্ততায় কাটে দিনভর অফিসপাড়ায়।
গুমোটবাঁধা ভ্যাপসা গরমের ক্লান্তি ভোলানো
আকাশভাঙা ঝমঝম বৃষ্টির হিমাবহে
আমার সর্বাঙ্গে যেন এনে দিল এক
মধুময় প্রশান্তির আমেজ।
রাস্তার ওপাশে মুখোমুখি দ্বিতল বারান্দায় বসাÑ
প্রলম্ব বেণিখানা উলম্ব ঝুলে পড়া, যারÑ
সুরম্য মুখ অষ্টাদশী; মুগ্ধচিত্ত ছিল নৃত্যরতা তার;
বিস্ময়াভিভূত হয়ে দেখা Ñ অপলক, আনমনা,
চক্ষুস্থির ছিল যার, ছন্দের বর্ষাধারায়;
শ্রাবণের সেই সন্ধ্যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।