Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাউল সাধক

শাহ আব্দুল করিম

শাহনূর শহীদ | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত শিক্ষক বাউল শাহ আব্দুল করিম ছোট বেলা থেকেই অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা। পিতা ইব্রাহিম আলীর চাচা নচিব উল্লা নামে শাহ আব্দুল করিমের এক দাদা ছিলেন,তিনি তাঁকে আদর করে কূলে তুলে গান গাইতেন--‘ভাবিয়া দেখ মনে মাটির সারিন্দা রে বাজায় কোন জনে..’ সেই গানই কচি মনে প্রভাব বিস্তার করে এবং গানের প্রতি ক্রমে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।নানাবিধ অনটনের সাথে সংগ্রাম গানের নিশা থেকে তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি। শিশু অবস্থায় ক্ষুদা নিবারণের জন্য অল্প বেতনে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে চার বছর চাকুরি করতে হয়েছে। কাজ গরু চড়ানো ও ফুটফরমাশ।মাঠে গরু ছড়াতে ছড়াতে মনের সুখে উল্লাসে গান গাইতেন।এরপর ধল বাজারে গড়ে উঠলে এক মুদি দোকানে চাকুরী নিলেন। বেতন যা পেতেন সংসার খরচের জন্য বাবার হাতে তুলে দিতেন।দিনে দোকান আর রাতে হিন্দু মুসলমান ছেলেরা মিলে চলত দলগত জারি গান,নিমাই সন্ন্যাস,পালাগান (সিলেটি ভাষায় মালজুড়া গান) ইত্যাদি। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল ধল গ্রামে ব্রিটিশ শাসক একটি নাইট স্কুল খুলেছিল। আব্দুল করিম ও সেই স্কুলের ছাত্র হিসেবে নাম লেখান। গুজব উঠলো, নাম দস্তখত শিখিয়ে ব্রিটিশরা জার্মানিতে যুবকদের যুদ্ধে পাঠাবে,তাই মাত্র আট দিনের মাথায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটলে শাহ আব্দুল করিম স্কুল থেকে যে বইটি নিয়ে আসছিলেন তা থেকে নিজের চেষ্টায় এবং শিক্ষিতজনের সাহায্যে পড়তে, লিখতে শিখেন।হয়ে উঠেন স্বশিক্ষিত, যা জ্ঞান সাধনায় তাঁকে দীপ্ত করেছে।
শাহ আব্দুল করিম খুব ছোটবেলায় তার গুরু বাউল শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বকশ থেকে সঙ্গীতের প্রাথমিক দীক্ষা নিয়ে নিজে গান রচনা করে সুর দেন, নিজে গান।বিভিন্ন গবেষক তাঁর বহুল প্রচারিত পাঁচ শত গানের কথা বললেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় মুলতঃ প্রায় দেড় হাজারের অধিক গান তিনি রচনা করে গেছেন।
বাংলার মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসা, সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে তাঁর গান কথা বলে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহ,পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।স্ত্রীকে হারিয়ে গেয়েছেন--“দুঃখে আমার জীবন গড়া, সইলাম দুঃখ জনমভরা হইলাম আমি সর্বহারা এখন যে আর নাই বেলা আর জ্বালা, আর জ্বালা সয়না গো সরলা..”।
সাধক রশীদ উদ্দীন এর কাছ থেকেও তিনি বাউলগানের দীক্ষা লাভ করেছেন। শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান, সারি গান এবং গানের অন্যান্য শাখায় চর্চা করে তালিম দিয়েছেন শতাধিক শিক্ষানবিশ শিল্পী সাধককে। তাঁর লেখা গান গেয়ে দেশে-বিদেশে অনেক তরুণ-তরুণী এখন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। “তুমি সুজন কান্ডারি নৌকা সাবধানে চালাও,

“মহাজনে বানাইয়াছে ময়ূরপঙ্খি নাও..”
‘বসন্ত বতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে,
বন্ধুর বাড়ীর ফুলের গন্দ আমার বাড়ি আসে...১৯৬৪ সালে এবং ১৯৮৫ সালে বাঙ্গালিদের আমন্ত্রণে দু-বার যুক্তরাজ্যে যান গান গাইবার জন্য।এটাই তাঁর জীবনের বিদেশ সফর।

‘গ্রামের নওজোয়ানৃ হিন্দু মুসলমান

মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ...’

সাম্যের কবি, মানবতার, অহিংসার মরমি কবি শাহ আব্দুল করিমের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মাজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ সহ অসংখ্য খ্যাতিমান গুণী ব্যক্তিবর্গ। কুড়িয়েছেন অন্তহীন প্রসংশা, সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২১ শে পদক সহ শতাধিক সম্মাননা।এ ছাড়াও ‘বেদ্বীন’ সহ অনেক ছায়াছবিতে তাঁর গান স্থান পেয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে বাংলার লোক সঙ্গীতের মুকুট হীন সম্রাট তাঁর ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
‘কেন পিরিতি বাড়াইলায় রে বন্ধু ছেড়ে যাইবায় যদি..’
ভাটি বাংলার কালনী নদীর তীর ঘেষা তৎকালীন সিলেট জেলা, বর্তমান : সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণে দিরাই থানা বর্ষায় ছয় মাস অথৈ পানি বেষ্টিত উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি (১৩২২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার) এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন-লোক গানের প্রায় দেড় হাজার গানের গীতিকার, সুরস্রষ্টা,সঙ্গীত গুরু পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।তিনি তাঁর নিজের পরিচয় গানের মাধ্যমে দিয়েছেন এভা--›পিতা ইব্রাহিম আলী, মাতা নাইওরজান,
ওস্তাদ সমরু মিয়া মুন্সি পড়াইলেন কোরান।
একতারা সম্বল, সরলা সঙ্গীনি নিয়ে থাকি উজানধল।গ্ধ সেই ছোট্ট বেলা থেকে গানই ধ্যান,গানই জ্ঞান,জীবনের চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে গানকেই নিয়েছেন একমাত্র পরম ব্রত করে।সহজ সরল গান পাগল মানুষটির ভাষায়--


গান গাই আমার মনরে বুঝাই,
মন থাকে পাগলপারা
আর কিছু চাই না মনে গান ছাড়া.গ্ধ.

গীতি কবি শাহ আব্দুল করিমের অপ্রকাশিত অনেক গানের মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো -- আফতাব সংগীত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->