শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
অবাক বিষ্ময়ে সওদাগর বলল, প্রাণের তোতা আমার! একি অবস্থা তোমার! কিছুই তো বুঝতে পারছিনা! হি’দুস্তানী ঐ তোতা কী সংকেত দিয়ে ছিল, কী বলেছিল তোমাকে? তোতা বলল, আসলে হি’দুস্তানী ঐ তোতা মরেনি। মরার ভান করেছিল মাত্র। এবং এর দ্বারা আপনার মাধ্যমে আমার নিকট এ বার্তা পাঠিয়ে ছিল যে, যদি বাঁচতে চাও মুক্তি চাও তবে মরার আগে মর, মরার ভান কর। আমি তাই করেছি। এই বলে এবং আরও কিছু উপদেশ দিয়ে সে উড়ে গেল।
মাওলানা রূমী এ গল্পের মধ্য দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন, মানুষ মূলত এ পার্থিব জগতের নয়, সে লাহুত জগতের। এখানে সে ব’িদ হয়ে আছে দুনিয়া-খাঁচায়। যদি সে মুক্তি চায়, অনন্ত জীবনে চিরস্থায়ী শান্তি ও কল্যাণ চায়, তবে মরার আগে মরতে হবে, মৃতবত থাকতে হবে, অর্থাৎ মরার ভান করতে হবে।
মসনবী :
১৭০৩. এক যে ছিল সওদাগর এক তোতা ছিল তার
ব’িদ করে রাখত তাকে খাঁচায় অনিবার।
১৭০৪. একদা এই বনিক- ভারত সফর করার তরে
দরকারি সব মাল ও সামান নিল জোগাড় করে।
১৭০৫. যাত্রাকালে দাস-দাসীদের শুধান একে একে
বল আমায়, কী উপহার আনব ভারত থেকে।
১৭০৬. বলল তারা মনের খোশে যাহার যেটা চাই
সওদাগরও কথা দিল আসবে নিয়ে তাই।
১৭০৭. অবশেষে শুধান তিনি সখের তোতার পাশ
কী আনিবেন তাহার লাগি, কী তার অভিলাষ।
১৭০৮. বলল তোতা চাইনা কিছু- আপনি গিয়ে হোথা
দেখতে পাবেন আমার মত অনেক অনেক তোতা।
১৭০৯. আরয আমার : এই সমাচার দিবেন তাদের কাছে
তোমাদের এক বন্ধু তোতা ব’িদ হয়ে আছে।
১৭১০. তোমা সবায় সালাম দিয়ে বলছে জানিবার
ব’িদ দশা হইতে কীবা মুক্তি-উপায় তার।
১৭১১. বলবে আরো, একি শোভন! তাদের প্রেমের আমি
বিচ্ছেদে কি ধুকে ধুকে মরব দিবস-যামি ?
১৭১২. একি উচিত! থাকব আমি এই ভাবে বন্ধনে
আর তোমরা ডালে ডালে নাচবে বনে বনে !
১৭১৩. তোমরা বেড়াও কুসুমবাগে মন হরষে ভারি
এবং আমি ব’িদ- এটা কেমন ওফাদারি ?
১৭১৪. মহত প্রাণ বন্ধুরা মোর! একটি বারের তরে
এক পিয়ালা শরাব পিয়ো আমায় স্মরণ করে।
১৭১৫. বন্ধুগণের স্মরণ- করে আন’িদত মন
বিশেষ করে হলে লায়লা-মজনু উভয় জন।
১৭১৬. তোমরা হোথা ফুল্ল মনে মত্ত সুরা পানে
আর বেদনায় রক্ত আমি পান করি এই খানে।
১৭১৭. ওগো আমার স্বজন সাথী বন্ধু মেহেরবান
এ নিঃস্বকে স্মরে বারেক শরাব করো পান।
১৭১৮. আর কিছুনা পার যখন পান করিবে সুরা
খানিকটা তার দিও ঢেলে যমিনে বন্ধুরা।
১৭১৯. কোথায় গেল কথামালা সেই ভালবাসার
গেল কোথায় মিশ্রি-মিঠে-অধর অঙ্গীকার !
১৭২০. পারিনি হক করতে আদায় আমি ভালবাসার
তাই ভুলেছ ? ফরক কিবা তবে তোমার আমার ?
১৭২১. যুদ্ধ বা রোষ যাহাই কর আমার পরে বঁধু
সঙ্গীত ও সুর থেকে তাহা আমার কাছে মধু।
১৭২২. তোমার যুলুম হীত হতেও অধিক হীতকর
দাদ নেয়াও প্রাণের চেয়ে অধিক প্রিয়তর।
১৭২৩. নারই এ্যামোন নূর তা হলে কতই না সু’দর
কান্না এ্যামোন, আন’দ ভোজ কতইনা বেহ্তর !
১৭২৪. বিরহানল তোমার যখন এমন মধুময়
মিলন তোমার তখন যেন কেমন মধুর হয় !
১৭২৫. সুপ্ত তোমার যুলুম মাঝেও অনন্ত কল্যাণ
চূড়ান্ত সেই সূ²তা-কে করবে অবধান !
১৭২৬. ঘোর বিপদে কাঁদি এবং ভয়ে কাতর থাকি
হাল দেখে মোর বিপদ আবার দূর করে দাও নাকি !
১৭২৭. ভালবাসি দয়া তোমার, কোপও ভালবাসি
দুই বিপরীত রূপের তব আমি গো প্রত্যাশী।
১৭২৮. যেতেই হলে ফুলের বনে- ত্যজি কাঁটার বন
বিরহী বুল্বুলের মত কাঁদব সে কারণ।
১৭২৯. এ বড় বিস্ময়ের ব্যাপার, এ বুলবুলি হায় !
একই সাথে কাঁটা ও ফুল উভয় খেতে চায় !
১৭৩০. বুল্বুলি নয়, এ আগ্নেয় কুমীর অভিনব
প্রেম-পরশে দুখ্্ জ্বালা তার আন’দময় সব।
১৭৩১. ‘কুলের’ প্রেমিক অবশেষে নিজেই হয় ‘কুল’
নিজেই নিজের প্রেমিক সে হয় স্বপ্রেমে মশগুল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।