শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
১৫৮৩. খোলা ও মুক্ত রাখিলে মনের কানÑ
কেটে যাবে ধাঁধাঁ পাইবে সঠিক সত্যের সন্ধান
বুঝিবে খোদার নিগুঢ় তত্ত¡ থাকিবে না সংশয়
যাহেরী বাতেনী অর্থ ও মানে হবে মনে বাঙময়।
১৫৮৪. ওয়াসওয়াসা* তুলো মনোকান হতে ছুড়ে ফেল দূরে সব
শুনিবে তখন আকাশবার্তা, সত্য সঠিক রব।
১৫৮৫. রূহানী কর্ণ হইবে তখন ওহী নাযিলের ধাপ
ওহী তো মনের অনুভূতিজাত নিভৃত সংলাপ।
১৫৮৬. চোখ আর কান অংশ তোমার বাহ্য ইন্দ্রিয়ের
দেখিতে শুনিতে পায়নাকো তারা ঊর্ধ্ব আসমানের
দৃশ্য ও কথা। সেই অনুভূতি বাহ্য অঙ্গে নাই
দেখিতে শুনিতে সে সবÑ রূহানী চক্ষু কর্ণ চাই।
১৫৮৭. ‘জাবরিয়া’ মত করেছে আমায় খোদাপ্রেমে বেকারার
এই মতবাদ ওদেরে করেছে কয়েদী জেলখানার।
১৫৮৮. সাধ্য ক্ষমতা নেই কারো কিছুÑ খোদাই শক্তিময়
এ নহে দোষের; চন্দ্রালোক এÑ কুয়াশা, জলদ নয়।
১৫৮৯. খোদা ছাড়া বাকি সকলই অসার এ যদি ‘জাবর’ হয়
এ জাবর ওই নফসের দাস জাবরের মত নয়।
১৫৯০. এ জাবর মহাতারীফের, এই জাবরী ভাগ্যবান
এ জাবর চেনে খোদা যাকে করে হৃদয় চক্ষু দান।
১৫৯১. এই যে জাবরীÑ গায়বী বিষয় ভেসে ওঠে চোখে তার
অতীত কী ছাড়! দেখে আগামীও ক্ষমতায় আল্লার।
১৫৯২. এই জাবরীর ইখতিয়ারের জানিও ভিন্ন শান
শুক্তির বুকে বারি কণা হয় মুক্তা মূল্যবান।
১৫৯৩. বাদলের ফোটা বাহিরে যখন, তখন কেবল জল
শুক্তির বুকে সেই জল হয় মুক্তা সমুজ্জ্বল।
১৫৯৪. খোদার আরিফ বান্দাগণের কী স্বভাব মরি মরি!
দৃশ্যতঃ লহু মূলে সুরভিত মৃগনাভী কস্করি।
১৫৯৫. এ সোয়াল তুমি করনা বৎসÑ যা ছিল শোনিত ধার
কী রূপে তা হল সুরভিত মেশ্ক পাল্টে স্বভাব তার ?
১৫৯৬. ওই যে তাম্র অতি সাধারণ পদার্থ, অতঃপর
পরশমনির পরশ লভিয়া কিরূপে রূপান্তর
হয় তা’ স্বর্ণে ? পুছনা একথা। এটাই খোদার শান
তাঁর ই’ছায় একই চিজের বদলায় রূপ-মান।
১৫৯৭. তব চেতনায় শুধু মতবাদ জবরিয়া, কদরিয়া
তাই হয়ে যায় প্রোজ্জ্বল নূর আরিফের মাঝে গিয়া।
১৫৯৮. দস্তরখানে যেই রুটি শুধু জড়চিজ নি¯প্রাণ
পাকাশয় গিয়ে তা-ই হয়ে যায় শক্তির উপাদান।
১৫৯৯. দস্তরখানে থাকা কালে রুটি আপন রূপেই থাকে
জৈবিকপ্রাণ পাকাশয় মাঝে বদলিয়ে ফেলে তাকে।
১৬০০. জৈবিকপ্রাণ করে যেই খানে এরূপ রূপান্তর
ভাবহে বৎস, সে প্রাণের প্রাণ কত না শক্তিধর।
১৬০১. মাংস পিন্ড মানবÑ বোধি ও প্রাণ-শক্তিতে তার
সাগর, পাহাড়, খনি সব ভেঙে করে ফেলে একাকার।
১৬০২. ডাল ভাত রুটি খোরাক মোদের এই দেহ সত্তার
কী খোরাক হবে প্রাণের প্রাণ, চিন্ময় সত্তার ?
১৬০৩. খন্ডিত করে এই প্রাণবল পর্বত ভূ-লোকের
প্রাণের প্রাণ খন্ডিত করে চন্দ্রিমা আকাশের।
১৬০৪. অন্তর যদি খুলে দেয় তার রহস্য ভান্ডার
ছুটিবে পরাণ আরশের পানে গতিবেগে উল্কার।
১৬০৫. যবান খুলিয়া রহস্যরাজি প্রকাশ করিলে তবে
ছড়িয়ে পড়িবে ফিৎনা-ফাসাদ আগুন জ্বলিবে ভবে।
১৬০৬. লক্ষ্য করিয়া দেখ হে বিশ্ব-মাঝÑ
খোদার যেমন কর্ম রয়েছেÑ আমাদেরও আছে কাজ।
১৬০৭. বান্দার যদি কোনই কাজের না থাকে ইখতিয়ার
‘কেন করিয়াছ’ ? অধিকার তবে থাকেনা জিজ্ঞাসার।
১৬০৮. কর্মটা করে বান্দা তাহার খাটিয়ে শক্তি বল
সৃষ্টি করেন আল্লাহ, কাজটি তারই সৃজন ফল।
১৬০৯. বান্দার আছে কর্ম সাধার ক্ষমতা ইখ্তিয়ার
এরই কারণে নারের শাস্তি নূরের পুরস্কার।
১৬১০. বক্তৃতা কালে মুখ্য ভাষা বা বিষয়বস্ক হয়
একই সঙ্গে দু’টিই মুখ্য সম্ভব কভু নয়।
১৬১১. ভাষাকে মুখ্য করিলে গৌণ হইবে বিষয় ঠিক
সম্ভব নয় এক সাথে দেখা সমুখ-পেছন দিক।
১৬১২. সমুখ-পেছন একই সঙ্গে দেখিবে তাহা কি হয় ?
বিপরীত দিক এক সাথে দেখা সম্ভব কভু নয়।
১৬১৩. ভাষা ও মর্ম একই সঙ্গে না আসিলে বোধে তবে
বুঝহে বৎস! দু’য়ের স্রষ্টা কেমনে একই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।