শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ.
১৫২৬. দেখাটাই সেরা গুণ মানবেরÑ বাকিটা খোলস তার
আর দেখা? সে তো বন্ধুর দেখাÑ বাদ বাকি নচ্ছার।
১৫২৭. দেখেনা সখাকে, না থাকাই ভাল এমন দুই নয়ন
সেই সখা থেকে দূরে থাকা ভাল যে নহে যে চিরন্তন।
১৫২৮. হৃদয় গ্রাহী কথাগুলো অদ্ভুুতÑ
১৫২৯. শুনিল যখন লোকদের কাছে তখন রোমান দূত
আগ্রহী হয়ে উঠিল দারুন খলীফাকে দেখিবার
কোন খানে তিনি? ব্যাকুল নয়ন খুঁজিয়া বেড়ায় তার।
১৫৩০. ছিল যেখানেতে সেখানেই রেখে অশ্ব, মাল-সামান
বাহির হইল করিতে খলীফা ওমরের সন্ধান।
মানেনা হৃদয় তারÑ
১৫৩১. পাগলের মত খুঁজে, আর করে জিজ্ঞাসা বারেবার
লোকদের কাছে, খলীফা কোথায়? ভাবে মনে মনে হায়
১৫৩২. এমন বিশাল মহান মানবও রহিয়াছে দুনিয়ায়
কীযে বিস্ময়! অথচ মানুষ খবর রাখে না তাঁর
থাকে না খবর দেহ-মাঝে যথা লুকে থাকা আত্মার।
১৫৩৩. প্রবল কাঙ্খা জাগিল হৃদয় রোমান রাজদূতের
গোলাম হইয়া রবে আজীবন হযরত ওমরের।
১৫৩৪. হযরত ওমরের সাক্ষাৎ পেলেন রাজদূত
বিদেশীর হাল দেখিয়া জনৈক বেদুঈন নারী বলে
দেখ হে! ওমর শুয়ে আছে ওই খেজুর গাছের তলে।
১৫৩৫. দেখ, চেয়ে দেখÑ আল্লার ছায়া খলীফা শান্ত মনে
ঘুমিয়ে আছেন গাছের ছায়ায় নিরালায় নির্জনে।
১৫৩৬. লঘু পায় এসে স্বল্প দূরে সে দাঁড়াইল সাবধানে
থর থর করে কাঁপে দেহ তার তাকিয়ে ওমর পানে।
১৫৩৭. এক দিকে মহাত্রাস আর ভয় জাগিল দূতের মনে
প্রশান্তি আর পুলক-দোলাও জাগিল তাহার সনে।
১৫৩৮. ভাবে মনে মনেÑ গিয়েছি তো বহু দরবারে বাদশার
পেয়েছি অনেক মান-সম্মানÑ আসন মর্যাদার।
১৫৩৯. পেয়েছি খাতির যতœ তাদের। কখনো হৃদয় মাঝ
জাগেনি তো কভু ভয় এই মত? কী হইল তবে আজ!
১৫৪০. এই লোকটিকে দেখে কী কারণে কম্পিত হল চিত
কেন হইলাম সম্বিত হারা, এমন আতঙ্কিত ?
১৫৪১. বহু জঙ্গলে গিয়েছি তো আমি সিংহ ব্যাঘ্র কত
সামনে পড়েছেÑ কখনো তো আমি হইনি আতঙ্কিত ?
১৫৪২. রণ ভূমে আমি গিয়েছি তো বহুÑ প্রবল শত্রæ সনে
সিংহ-বিক্রমে করেছি লড়াইÑ জাগেনিতো ভয় মনে !
১৫৪৩. আঘাত হেনেছি, আঘাত খেয়েছি, দেখিয়েছি বাহু বল
সেই ভয়াবহ সমর মাঠেও রয়েছি তো অবিচল।
১৫৪৪. অথচ একটি নিরস্ত্র লোক নিদ্রিত বালু ’পরে
তাকে দেখে কেন এতো ভয়-ত্রাস জাগিল এ অন্তরে ?
১৫৪৫. এ ভয় দৈব, এই ভয় মহাকুদরতি শক্তির
নিশ্চয়ই নয়Ñ এই ভয় এই ফকীর মানুষটির।
১৫৪৬. আল্লাহকে ভয় করে যেই জনÑ সাচ্ছা ঈমানদার
তাকে ভয় পায়-মানব দানবÑ সব জীব দুনিয়ার।
১৫৪৭. হাত বেঁধে দূত দাঁড়িয়ে রহিল শ্রদ্ধাপ্লুত মনে
নিদ্রা ছাড়িয়া উঠিল জাগিয়া ওমর ততক্ষণে।
আমীরুল মুমিনীনে খিদমতে দূতের সালাম আরয
১৫৪৮. আদবের সাথে খলীফাকে দূত সালাম আরয করে
নবীজী বলেন : অগ্রে সালাম, কালাম তাহার পরে।
১৫৪৯. ‘ওয়ালাইকা’ বলিয়া ওমর নিকটে ডাকিল তার
অভয় দানিয়া স্থান দিল নিজ পাশে বসিবার।
১৫৫০. ‘ভয় পেয়োনাকো’ ’তাদেরই জন্য অভয় সম্ভাষণ
ভয় পেয়ে যারা মুত্তাকী* রূপে করেন দিন যাপন।
১৫৫১. পায় যারা ভয় তাদেরেই তিনি করেন আমান দান
ভীত কম্পিত হৃদয়ে দানেন প্রশান্তি অফুরান।
১৫৫২. ভয় নাই যার ‘ভয় পেয়নাকো’ বলিবেন কেন তাকে
কেন বা সবক দিবেন তাকেÑ যে প্রয়োজন নাহি রাখে ?
১৫৫৩. ভীত কম্পিত দূতকে ওমর অভয় দিলেন, আর
সাহস শক্তি করিলেন তার অন্তরে সঞ্চার।
১৫৫৪. সূ² নিগুঢ় তত্তে¡র কিছু দিলেন বয়ান, আর
করিলেন মহামহিম বন্ধু প্রশংসা আল্লার।
১৫৫৫. করুণাময়ের করুণা ও দয়া আউলিয়া*১ আবদাল*২
লভেন যে রূপ, বুঝান তাহাকে, বুঝান মকাম’*৪ ‘হাল’*৩।
১৫৫৬. ‘হাল’Ñ কন্যার ভর মজলিসে ক্ষণেকের সাক্ষাৎ
‘মকাম’Ñ তাহার বরের সহিত কাটানো বাসর রাত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।