পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০২০ সালের ১৭ মার্চ পালিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গণেও থাকছে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটও থাকছে। এ উপলক্ষে বিসিবি নিয়েছে এশিয়া একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি টি-টুয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করবে। আগামী বছরের ১৮ মার্চ থেকে ২২ মার্চের মধ্যে এই সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হবে দুটি ম্যাচ। এর সাথে আরেকটি ম্যাচ যুক্ত হতে পারে এবং তা হতে পারে ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের নতুন স্টেডিয়ামে। সমস্যা দেখা দিয়েছে এশিয়া একাদশ নিয়ে। এই দলে পাকিস্তানী কোনো ক্রিকেটারকে না রাখার পক্ষে ভারত। দেশটি এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের যুগ্ম সচিব জয়েস জর্জের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এশিয়া একাদশে কোনো পাকিস্তানী ক্রিকেটার থাকছেন না বলে তারা জেনেছেন। জয়েস জানিয়েছেন, দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) ক্রিকেটারদের একই দলে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। দলে ভারতের পাঁচ ক্রিকেটার থাকবেন। আর তা ঠিক করবেন সৌরভ গাঙ্গুলি। তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এমন কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটার থাকছে বলেই পাকিস্তানী ক্রিকেটার রাখা হবে নাÑএমন কোনো কথা নেই। তিনি বলেছেন, বিশেষ এই সিরিজের সময় পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) চলবে বলে দেশটির ক্রিকেটারদের এশিয়া একাদশে না-ও দেখা যেতে পারে। আমাদের সঙ্গে এমন কোনো কথা হয়নি যে পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার থাকবে না। খেলা হবে এশিয়া একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে। কাজেই সবারই থাকার সুযোগ রয়েছে।
বহু বছর ধরেই ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তার মতামত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করার প্রবণতা রয়েছে, যা কারো দৃষ্টি এড়ায়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেটেও সে খবরদারি করা শুরু করেছে। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন এগুতে না পারে, এমন মনোভাব বরাবরই তার মধ্যে ছিল এবং আছে। বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে না আসা কিংবা ভারতে বাংলাদেশের খেলতে না যাওয়ার প্রশ্নে বরাবরই শৈথিল্য প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি বাংলাদেশে যাতে বিপিএল জনপ্রিয়তা না পায়, তার জন্যও প্রচ্ছন্নভাবে বিরোধিতা করে আসছে। বিপিএলে ভারতীয় কোনো ক্রিকেটারের অংশগ্রহণ করা না থেকেই তা স্পষ্ট হয়। এর কারণ, ভারত চায় না বিপিএল আইপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠুক। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলার ক্ষেত্রেও ভারত নানাভাবে বাংলাদেশকে নিরুৎসাহিত করে। ভারতের সাথে পাকিস্তানের নানা সমস্যা ও বৈরিতা থাকলেও খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তেমন কোনো সমস্যা নেই। পাকিস্তান বরাবরই বাংলাদেশের সাথে খেলতে আগ্রহী এবং ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো সমর্থন দিয়ে যায়। পাকিস্তান সুপার লীগে (পিএসএল) যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিয়মিত অংশগ্রহণ করে, তেমনি পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও বিপিএল-এ অংশগ্রহণ করে। চলতি বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার খেলছেন। বলা যায়, খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক রয়েছে। এটিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এখানেও এখন রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। মূলত ভারত এ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। পাকিস্তানে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি সিরিজের সফর নিয়ে এখন টানাপড়েন চলছে। শুরুতে বাংলাদেশ পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার কথা বললেও, এখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে খেলতে যেতে চাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে ভারতের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকতে পারে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও অনেকটা ভারতের সুরে কথা বলছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার সফর নিয়েও ভারত বিরোধিতা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শ্রীলঙ্কা যদি পাকিস্তানে যায়, তাহলে আইপিএলে দেশটির কোনো ক্রিকেটারকে খেলতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছিল। অর্থাৎ পাকিস্তানের সাথে ভারতের শত্রুতার বিষয়টি এশিয়ার অন্য দেশগুলোর উপরও চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এটা ভারতের অত্যন্ত হীনমন্যতা ছাড়া কিছুই নয়। তার সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া গেল, প্রীতি টি-টুয়েন্টি সিরিজে এশিয়া একাদশে পাকিস্তানী ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার মধ্য দিয়ে। ক্রীড়াঙ্গণ নিয়ে ভারতের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সাথে ভারতের বৈরীতা ও শত্রুতা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। ভারত পাকিস্তানের সাথে খেলতে না-ও যেতে পারে, তাই বলে অন্য দেশগুলোকেও পাকিস্তানের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ করতে পরোক্ষভাবে বাধ্য করা অত্যন্ত নীচুমনের পরিচায়ক ছাড়া কিছুই নয়।
ভারত বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বরাবরই ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে থাকে। সর্বশেষ ভারত সফরে বাংলাদেশের টেস্টের পারফরমেন্স নিয়েও সমালোচনা করেছে। চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে ভারতের ম্যাচের সময় ভারতীয় সমর্থক এমনকি দেশটির পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরা অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এবং সুসম্পর্কের সূত্র ধরে বাংলাদেশের সাথে এমন আচরণ করা মোটেও শোভনীয় ছিল না। অথচ ’৯৯ সালে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানকে হারায়, তখন পাকিস্তান বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিল এবং সে সময় পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম বাংলাদেদেশের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ছোট ভাইয়ের কাছে বড় ভাই হেরেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে পাকিস্তান বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে বরাবরই বলে আসছে। ভারতের কাছ থেকে এ ধরনের উৎসাহমূলক কথা শোনা যায় না বললেই চলে। বরং নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে ভারতের সহায়তা দূরে থাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাকÑএটা যে সে চায় না, তা তার আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আসন্ন আইপিএলের জন্য বাংলাদেশের পাঁচ জন ক্রিকেটারকে তালিকায় রেখে তাদের কাউকে সুযোগ না দেয়া থেকেও তা বোঝা যায়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিতব্য প্রীতি টি-টুয়েন্টি সিরিজে এশিয়া একাদশে পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটারকে রাখার ক্ষেত্রে ভারত বাগড়া দিয়ে বসেছে, যা খুবই অসৌজন্যমূলক এবং নিন্দনীয়। ভারতের চাপের কাছে নতিস্বীকার কিংবা তাকে অন্যায়ভাবে তুষ্ঠ করার মনোভাব থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।