পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংঘি লি সোমবার বলেছেন যে মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যের নয়টি টাউনশিপে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার কারণ মূলত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। এসব টাউনশিপের বেসামরিক জনগণের ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা।
এক ববৃতিতে লি বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। তাই আমার মনে হচ্ছে সেখানে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে যে নির্বিচার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে সেগুলো আড়াল করার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, রাখাইন ও চিন রাজ্যে ইন্টারনেট সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লি এবং সিপিজে এমন আহবান জানিয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, ভবিষ্যতে যেন এই সংযোগ বিঘিœত না হয়। ইয়াংহি লি সোমবার সতর্কতা দিয়েছেন এ বিষয়ে। মিয়ানমারের ৯টি শহর এলাকায় মোবাইল ফোনের ডাটা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। এতে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বর প্রভাব পড়তে পারে, রাখাইন ও চিন রাজ্যের মতো যুদ্ধকবলিত রাজ্যগুলোতে মানবিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ওপরও এর গুরুত্বর প্রভাব পড়ছে। ইয়াংহি লি বলেন, ওইসব এলাকায় মিডিয়ার কোনো প্রবেশাধিকার নেই এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর ওপর রয়েছে মারাত্মক সব বিধিনিষেধ। ফলে পুরো অঞ্চল রয়েছে অন্ধকারে। সেখানে অবস্থানকারী সব বেসামরিক জনগণকে নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। ওই এলাকার ভিতরে ও বাইরে অবস্থানরত লোকজন একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগের উপায় নেই। উল্লেখ্য, টেলিযোগযোগ আইন ২০১৩-এর অধীনে সব রকম মোবাইল নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট সুবিধা অস্থায়ীভিত্তিতে বন্ধ করে দিতে ২০শে জুন নির্দেশ দেয় পরিবহন ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাদের অভিযোগ, ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকা- সংগঠিত করা হচ্ছে। এতে শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। এ জন্য মোবাইলে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট রয়েছে যে, ১৯ জুন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মধ্য রাখাইনের মিনবায়া শহরে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। পরের দিন সিতওয়েতে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি নামের উগ্রপন্থিরা। এতে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য নিহত ও আহত হয়েছে। ইয়াংহি লি বলেছেন, আমাকে বলা হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একটি ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে। এমন অপারেশনে আমরা জানি যে, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। আমাদেরকে এটা ভুলে গেছে চলবে না যে, এই একই বাহিনী দুই বছর আগে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা তাদের সেই অপরাধের বিচার থেকে দূরে রয়েছে। ২০১৮ সালের শেষের দিক থেকে আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এর শিকার হচ্ছেন বেসামরিক লোকজন। এতে কমপক্ষে ৩৫০০০ বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শিশু সহ কয়েক ডজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা ও টার্গেট করে হামলাকারীরা। ওদিকে ২২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, মোবাইলে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। বার্তা সংস্থা এএফপি এক রিপোর্টে বলেছে, যেহেতু ইন্টারনেট সেবা শুধু মোবাইল ফোনে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তাই রাখাইন ও চিন রাজ্যের হাতেগোনা কিছু মানুষ কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। সিপিজের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র প্রতিনিধি শাওন ক্রিসপিন বলেছেন, মিয়ানমারে মোবাইলে ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় সাংবাদিকদের রিপোর্ট পাঠানো, রিপোর্ট পাওয়া ও তা প্রকাশ করায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। ওই অঞ্চলগুলোর লড়াই নিয়ে মুক্তভাবে রিপোর্ট প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত সেন্সরশিপমুলক নির্দেশ প্রত্যাহার করা। ওদিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েভিত্তিক ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপ নামের বার্তা সংস্থায় একজন সাংবাদিক বলেছেন, মঙ্গলবারও ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে সেখানে। সরকার প্রতিশোধ নেবে এই আশঙ্কায় ওই সাংবাদিক তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হন নি। পরিবহন ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি সিপিজের ফোনকল রিসিভ করেন। এএফপি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।