Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবন ১৪৩১, ২০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার বিষয়ক রেজুল্যুশন গৃহীত

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১৭ পিএম

জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি’ বিষয়ক একটি রেজুল্যুশন গৃহীত হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রেজুল্যুশনটি ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দিদের মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রেজুল্যুশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। রেজুল্যুশনটি ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোনও সদস্য ভোট অথবা ভেটো দেননি। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।
ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন ও নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজুল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করার প্রশংসা করে এবং এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে রেজুল্যুশনটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানায়।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, এই রেজুল্যুশন রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসঙ্ঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গ সংস্থার শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজুল্যুশনটি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন।
এই রেজুল্যুশন অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একইসাথে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে।
রেজুল্যুশনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে- বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়।
এছাড়া, এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘের কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব ও মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন রেজুল্যুশনে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সাথে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজুল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয় তা নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, রেজুল্যুশনটির ‘পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর)’ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিনমাস ধরে আলোচনা শেষে এটি নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বরের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে রেজুল্যুশনটি গৃহীত হলো। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হলো বাংলাদেশ।



 

Show all comments
  • Rahman Insafi ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:২৪ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের বিনা অপরাধে মারার জন্য মায়ানমারের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। সে সাথে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত মায়ানমারে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Mushfiqur Rahman Insafi ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:২১ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ