পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজকের লেখার প্রধান বিষয় হলো পাক-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা হ্রাস। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গণফোরাম থেকে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত গণফোরামের অপর সদস্য সুলতান মনসুর আগামী ৭ মার্চ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। এই মর্মে তারা সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। খবরটি খুব অপ্রত্যাশিত না হলেও এই মুহূর্তে কিছুটা বিস্ময়কর। কারণ, নির্বাচিত হওয়ার পর পরই তারা দু’জনেই যখন শপথ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তখন ঐক্যফ্রন্ট থেকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, মনসুর এবং মোকাব্বিরসহ যে ৮ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা কেউই শপথ গ্রহণ করবেন না। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের গৃহীত ঐ সিদ্ধান্তে বলা হয়, ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে মানে না। তারা মনে করে, ৩০ ডিসেম্বরে কোনো নির্বাচনই হয় নাই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আসলে ৩০ তারিখের পরিবর্তে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ৫০ শতাংশ ব্যালট পেপারে নৌকার সিল লাগানো হয়েছে। পরের দিন সকাল ১০টার মধ্যেই অবশিষ্ট ব্যালট পেপারগুলোতে সিল মারা হয়েছে। ১০টার পর ব্যালট পেপার নিঃশেষ হয়ে গেছে। এভাবে কোনো ভোট হয় না। এধরনের ভোটের নামে গণতন্ত্রকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ঐক্যফ্রন্ট এই মহা ভোটডাকাতির নির্বাচনকে মানে না, তাই এই ভোটডাকাতির নির্বাচনে গঠিত সংসদকেও মানে না। যেহেতু ভোটডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদকে ঐক্যফ্রন্ট মানে না তাই সেই সংসদের মাধ্যমে গঠিত সরকারকেও ঐক্যফ্রন্ট মানে না। এমন একটি ভোটডাকাতির সংসদে সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই। বরং সেই শপথ গ্রহণ ঐক্যফ্রন্টের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রতিই বিশ্বাসঘাতকতা।
ঐক্যফ্রন্টের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মোকাব্বির খান এবং সুলতান মনসুর কিছু দিন নীরব থাকেন। তবে তারা সরাসরি না বললেও তাদের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়, শপথ গ্রহণের সময় শেষ হয়ে যায়নি। যেদিন প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে সেদিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অন্যদের শপথ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং উপযুক্ত সময়ে মোকাব্বির এবং মনসুর ঠিকই শপথ গ্রহণ করবেন।
এ ব্যাপারে গণফোরাম এবং ড. কামালের অবস্থান স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট নয়। ওই দুই সদস্য প্রথমে বলেছিলেন, তাদের শপথ গ্রহণের ব্যাপারে তাদের নেতা ড. কামালের মনোভাব ইতিবাচক। মোকাব্বির খান গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেন, ড. কামালের সাথে আলোচনা করে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অবশ্য সুলতান মনসুর ইলেকশনের পর থেকে অধিকাংশ সময় সিলেটেই কাটাচ্ছেন। তিনি ঢাকায় খুব কম আসছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। পর্যবেক্ষকরা অনেক আগেই বলেছেন, মনসুর এবং মোকাব্বির ঠিকই শপথ গ্রহণ করবেন। তবে তারা এখন সময়ক্ষেপণ করছেন।
আগামী ৭ তারিখে তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে গণফোরামের সেক্রেটারি মোস্তাফা মহসিন মন্টু বলেন, তাদের শপথ গ্রহণের ব্যাপারে তাঁর দল গণফোরাম এবং প্রধান ড. কামাল হোসেন কিছুই জানেন না। তারা শপথ গ্রহণ করলে তখন দেখা যাবে কি করা যায়। এ ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ৮ সদস্যের মধ্যে কেউই শপথ গ্রহণ করবেন না। সেই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়, ওই দু’ জন সদস্যের শপথ গ্রহণের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। মোদ্দাকথা হলো, তারা জানুন আর না জানুন তারা শপথ ঠিকই নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিএনপি ও ঐকফ্রন্টের যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার কথা সেটি তারা এখনো নেয়নি।
দুই
পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি চূড়ান্ত পরিণামে মনসুর এবং মোকাব্বির শপথ গ্রহণ করেন তাহলে তাদের এই শপথ গ্রহণ সংক্রামক ব্যাধির মতো অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এরা দু’ জন শপথ গ্রহণ করলে অবশিষ্ট যে ৬ জন থাকেন তাদের মধ্যে একজন হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাই বিএনপির ওই ৬ জন সদস্যের শপথ গ্রহণ অত সোজা হবে বলে মনে হয় না।
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামালের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই পর্যবেক্ষক মহল বলতে চায়, ড. কামালের দলে দলীয় শৃঙ্খলা এত শিথিল এবং নড়বড়ে কেন? তার দলে কি শৃঙ্খলা এবং আচরণবিধি বলতে কিছু নাই? যেই আসে তাকেই দলের উচ্চপদ দেওয়া হয়? উচ্চপদ দেওয়ার আগে দলীয় আনুগত্য, আদর্শের প্রতি অবিচলতা ইত্যাদি বিষয় কি বিবেচনা করা হয় না? তারা যদি শপথ গ্রহণ করেন তাহলে সেটি শুধুমাত্র ড. কামালেরই ডিসক্রেডিট নয়, সেই সাথে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান অংশীদার বিএনপি এবং তার নেতা মির্জা ফখরুলেরও ডিসক্রেডিট। নমিনেশন দেওয়ার সময় দেখা গেছে, গণফোরামে যেন প্রার্থীর আকাল পড়েছে। তারা কোনো প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছিলো না। তাই নাম ডাকওয়ালা যেই এসেছে তাকেই নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। পাবনার অধ্যাপক আবু সাইদ দু’ দিন আগেও নমিনেশনের জন্য আওয়ামী লীগে তদবির করেছেন। সেখানে ব্যর্থ হয়ে কামাল হোসেনের কাছে এসেছেন এবং কামাল হোসেন তাকে লুফে নিয়েছেন। অথচ আবু সাইদ একজন কট্টর আওয়ামী লীগার। অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিনকে নমিনেশন দেওয়ায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ তিনি যখন সেনা বাহিনীর মেজর জেনারেল ছিলেন তখন থেকেই লোকে জানতো, আমসা আমিন সেনা অফিসার থাকা কালেই মনে প্রাণে কঠিন আওয়ামী লীগার ছিলেন। গতবার আওয়ামী লীগের টিকিটে ইলেকশন করে হেরে যান। এবারেও আওয়ামী লীগের টিকেট পাননি। রেজা কিবরিয়া একজন ভালো মানুষ। কিন্তু তার পিতা শেখ হাসিনার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। একজন কট্টর আওয়ামী লীগার ছিলেন। রেজা কিবরিয়াও পিতার রাজনৈতিক আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী। আমসা আমিন এবং রেজা কিবরিয়া কামাল হোসেনের কাছে নমিনেশন চাইলেন। আর ওমনি তিনি তাদেরকে দিয়ে দিলেন। আবু সাইদ, আমসা আমিন এবং রেজা কিবরিয়া যদি নির্বাচিত হতেন তাহলে তারাও সুলতান মনসুর এবং মোকাব্বির খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। যাই হোক, মনসুর ও মোকাব্বির শপথ গ্রহণের পর তাদের বিরুদ্ধে ড. কামাল হোসেন বা ঐক্যফ্রন্ট কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটি দেখার জন্য মানুষ প্রতীক্ষা করছে। কারণ তাদের যোগদানের পরে তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে ঐক্যফ্রন্টের সমগ্র নমিনেশন প্রদানের ক্রাইটেরিয়াই জনগণের কাছে হাস্যাস্পদ হয়ে দাঁড়াবে।
তিন
এবার আসছি পাক ভারত বিমান সংঘর্ষের কথায়। ‘সংঘর্ষ’ শব্দটি এই কারণেই উচ্চারণ করলাম যে দেশ দুটির মধ্যে সরাসরি সর্বাত্মক যুদ্ধ লাগেনি। তবে ভারত যেটা করেছিল তারপর সর্বাত্মক যুদ্ধ লাগলে অবাক হতাম না। কারণ ভারতের এক স্কোয়াড্রন অর্থাৎ ১২টি মিরাজ-২০০০ জঙ্গি বিমান নিয়ন্ত্রণ রেখা ভেদ করে পাকিস্তানের ৫০ মাইল অভ্যন্তরে ঢুকে বালাকোট নামক পাখতুন খোয়ার (সাবেক সীমান্ত প্রদেশ) একটি স্থানে প্রচন্ড বোমা বর্ষণ করে। তারা যেসব বোমা নিক্ষেপ করে সেগুলো ছিল ইসরাইলের নির্মিত রাফায়েল স্পাইস-২০০০ স্মার্ট বোমা। এই তথ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কলামিস্ট এবং বুদ্ধিজীবী রবার্ট ফিস্ক। নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে আকাশসীমা ভেদ করে ভারতীয় এই হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কল্পনাতীত ধৈর্য্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যদি যুদ্ধবাজ হতেন তাহলে ঐ একটি ঘটনাই তার পক্ষে পাল্টা সর্বাত্মক আঘাত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেটি না করে তিনি গণচীনের নির্মিত কয়েকটি জে-১৭ জঙ্গি বিমান পাঠান, তাও দ্বিতীয় রাউন্ডে ভারত যেসব মিগ জঙ্গি বিমান পাঠায় সেগুলিকে তাড়া করার জন্য। অভিনন্দন নামে ভারতের যে জঙ্গি বিমানের পাইলট গ্রেফতার হন তাকে কোনো রকম চাপ ছাড়াই বিনা শর্তে ইমরান খান মুক্তি দেন, এই প্রত্যাশায় যে পাকিস্তানের এই কাজের ফলে উদ্ভুত উত্তেজনা নিরসন হবে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের এই বদান্যতার কোনো মূল্য দেননি। আর দেবেন কেন? পাকিস্তানের ওপর তিনি যে বিমান হামলা করেন সেটির উদ্দেশ্য তো ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। সেটির উদ্দেশ্য ছিল অনুষ্ঠিতব্য ভারতীয় লোক সভায় বিজয় অর্জন।
আগামী এপ্রিল মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপির নির্বাচনে জয়লাভ অনিশ্চিত। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে ভারতের রয়েছে গভীর আবেগ এবং সেন্টিমেন্ট। তেমনি একই বিষয়ে পাকিস্তানিদেরও রয়েছে গভীর আবেগ এবং সেন্টিমেন্ট। তাই এখন যদি ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানের ওপর এক হাত নিতে পারে তাহলে সেটি আগামী নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জন্য হবে একটি বিরাট প্লাস পয়েন্ট। এজন্যই ভারতীয় হামলা। ভারতের সামরিক বাহিনীকে আসন্ন নির্বাচনে পরোক্ষভাবে নরেন্দ্র মোদি ব্যবহার করায় ভারতের বিরোধী দলসমূহ মুশকিলে পড়ে। তারা মোদির কূটচাল ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী বলে কথা। তাই দু’ দিন তারা অপেক্ষা করেন এবং সামরিক বাহিনীকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু তার পরেই ভারতের ২১টি বিরোধী রাজনৈতিক দল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার নামে সামরিক বাহিনীকে ইলেকশনের খেলার অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করার তীব্র নিন্দা করেন। যারা মোদির এই নিম্ন স্তরের নির্বাচনী রাজনীতির সমালোচনা করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, তৃণমূল সভানেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতা মায়াবতী ও অখিলেশ যাদব, বিহারের লালু প্রাসাদ যাদব প্রমুখ।
চার
১৪ ফেব্রুয়ারি যেসব কাশ্মীরী গেরিলা ভারতীয় সেনা কনভয়ের ওপর হামলা করে ৪৪ জনকে হত্যা করেছে তাদেরকে জঙ্গি বলা হচ্ছে। তাদেরকে হত্যা করার কারণে পশ্চিমা দুনিয়া থেকে আসছে সহানুভূতির বন্যা। কিন্তু ভারতীয় সৈন্যদের হাতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার স্বাধীনতাকামী নিহত হয়েছে। জঙ্গি বলে এদের জন্য এক ফোটা অশ্রুও পশ্চিমা দুনিয়া এবং ভারত বিসর্জন দেয়নি। আসলে এরা কি সত্যিই জঙ্গি? আসলে এরা কারা? এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। আর স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে আমাদেরকে ভারত বিভক্তি এবং কাশ্মীরের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে হবে। সেই ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে প্রথমে ৭০ বছর আগে ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সালে এবং দ্বিতীয় দফায় ৫৩ বছর আগে ১৯৬৫ সালে। ওয়ার অন টেরর বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আমেরিকা এক মেরুর পৃথিবীতে একমাত্র পরাশক্তি হওয়ার সুবাদে শত বৎসরের লালিত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে বিকৃত ও ধ্বংস করেছে। আজ তাদের বদৌলতে মূল্যবোধ সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে সত্য, ন্যায় ও নীতিনিষ্ঠতা উধাও হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সন্ত্রাস। স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছে উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদ। গায়ের জোরে পররাজ্য দখল হয়েছে জনগণের মুক্তি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণহত্যা হয়েছে জঙ্গি নির্মূল। সেজন্যই কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধারা ছাপার অক্ষরে ‘সন্ত্রাসী’ হয়েগেছে। ইসলামী বিপ্লবীরা হয়েগেছে ইসলামী বা ‘মুসলিম মিলিট্যান্ট’ বা ‘জঙ্গি’। ভারতের দখলদার বাহিনী চিত্রিত হয় ‘সরকারি বাহিনী’ হিসাবে, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তাদের বর্বর নির্যাতন অঙ্কিত হয় ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান’ বা ‘সন্ত্রাস দমন অভিযান’ হিসাবে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির নামে আসলে বিভক্ত হয় দুইটি প্রদেশ। সেই দুটি হলো পাঞ্জাব এবং বাংলা। এসব প্রদেশ ছাড়াও ব্রিটিশ ভারতের অধীনে ছিল অনেকগুলো দেশীয় রাজ্য। এরমধ্যে বিরোধ বাঁধে হায়দারাবাদ, জুনাগড়, জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় কাশ্মীর। কাশ্মীর ভারতে যাবে, নাকি পাকিস্তানে যাবে, নাকি স্বাধীন থাকবে এ ব্যাপারে ব্রিটিশরা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন হিন্দু হরি সিং। কিন্তু কাশ্মীরের ৯৪ শতাংশ অধিবাসী ছিল মুসলমান। তারা পাকিস্তানে যোগদান করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদান করেন। ফলে এক দিকে যেমন গণঅভ্যুত্থান ঘটে, অন্যদিকে তেমনি সেই অভ্যুত্থান দমনের জন্য ভারতীয় বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের কোনো নিয়মিত বাহিনী ছিল না। উপজাতীয়দের সহায়তায় পাকিস্তান ভারতীয় বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গেলে দুই দেশে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। এই যুদ্ধ চলে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত। যুদ্ধ থামানোর জন্য বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত হয়। নিরাপত্তা পরিষদে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। জনগণ ভারতে যেতে চাইলে কাশ্মীর ভারতে যোগ দেবে, পাকিস্তানে যেতে চাইলে পাকিস্তানে যোগ দেবে এবং স্বাধীন থাকতে চাইলে স্বাধীন থাকবে। এই শর্তে যুদ্ধ বিরতি হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশ দখল করে এবং ভারত দুই তৃতীয়াংশ দখল করে। পাকিস্তানী অংশের নাম আজাদ কাশ্মীর এবং ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীরের নাম জম্মু ও কাশ্মীর। আজাদ কাশ্মীর একটি পর্বত সংকুল এলাকা। পক্ষান্তরে ভারতীয় কাশ্মীর সুজলা সুফলা। ভারতীয় কাশ্মীরের ৯৫ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ভারত গণভোট অনুষ্ঠানে অস্বীকৃতি জানালে এই ৯৫ শতাংশ মানুষ বিশাল ভারতীয় বাহিনীর মোকাবেলায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার কাশ্মীরী গেরিলা এবং মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতীয় বাহিনী হত্যা করেছে। তারপরেও ৭০ বছরের গেরিলা যুদ্ধ বা মুক্তি স্তব্ধ হয় নাই।
আজ এই গেরিলা যোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বলা হচ্ছে জঙ্গি। আর ভারতীয় বাহিনীর ভূমিকা দখলদার বা হানাদার বাহিনীর ভূমিকার মতো। যত দিন ভারত কাশ্মীরীদেরকে তাদের ইচ্ছার মর্যাদা দিয়ে কাশ্মীরের ভবিষ্যত নির্ধারণের সুযোগ না দেবে ততদিন এই গেরিলা যুদ্ধ চলবে, যেটিকে ভারতীয়রা বলবে জঙ্গি হামলা। আর এই গেরিলা যুদ্ধ চললে অবধারিতভাবে মাঝে মাঝেই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।