পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাবেয়া খাতুন। বয়স ত্রিশের কোটায়। আর মো. জামিনের বয়স ২৪ বছর। রাবেয়ার দুই বার বিয়ে হয়েছে। আগের দুই ঘরে আছে দুই কন্যা শিশু। এর মধ্যেই জামিনের সাথে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক, এরপর বিয়ে। তৃতীয় বিয়ের এগারো মাসের মধ্যেই রাবেয়াকে গলা কেটে হত্যা করে জামিন। কন্যা শিশুকে নিয়ে রান্না ঘরে ছিলেন রাবেয়া। শিশুকে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে রাবেয়ার গলায় ছুরি চালান জামিন।
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে আলোচিত গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার মূল আসামি জামিনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিকে খুনের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পুলিশ বলছে, স্ত্রী রাবেয়ার পরকীয়া সম্পর্ক আছে- এমন সন্দেহ থেকে শুরু হওয়া পারিবারিক কলহের জেরেই এই খুন। খুনের ঘটনায় সহযোগী হয়েছেন জামিনের আত্মীয় মো. মোস্তফাও (২২)। তাদের দেখানো মতে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছোরাটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর এ-বøকের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়কের ১১ নম্বর বাড়িতে রাবেয়াকে হত্যা করা হয়। খুনের পর পালিয়ে যান স্বামী জামিন। এই ঘটনায় রাবেয়ার পিতা আবদুল মালেক বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ আসামিদের ধরতে মাঠে নামে। এস আই সুফল কুমার দাশকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হালিশহর থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানা এলাকা থেকে মূল আসামি মো. জামিনকে গ্রেফতার করে। সে ওই এলাকার জনৈক শাহ আমিনের ছেলে। খুনের পর সে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে। এই ঘটনায় তার সহযোগী ছিল মো মোস্তফা। সে কিশোরগঞ্জের কিনলী এলাকার মো. শফিকুল ইসলামের পুত্র। তাকে নগরীর হালিশহরের বি-বøকের খালপাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেখানো মতে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছোরাটি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জামিন স্বীকার করে স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তাকে সে হত্যা করে। রাবেয়া ছিল তার মামীর বান্ধবী। মামীর বাসায় তাদের পরিচয়। সেই থেকে প্রেম এবং বিয়ে। বিয়ের পর তাদের সংসারে কলহ বিবাদ শুরু হয়।
উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য রাবেয়ার বাবা জামিনের নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে বৈঠকও করেন। রাবেয়া হালিশহরে বি-বøকে জনৈক হান্নানের মালিকানাধীন মিডওয়ে অ্যাপারেলস নামে ছোট গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। কিন্তু জামিন তাকে নানাভাবে সন্দেহ করত। এরফলে দুই মাস আগে রাবেয়া চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু জামিনের আয় রোজগার তেমন না থাকায় রাবেয়া বাসার অদূরে তার বাবার চা দোকানের পাশে পিঠা বিক্রি শুরু করেন। এ নিয়েও জামিনের সাথে তার ঝগড়া হতো। এর মধ্যে গত ১০ জানুয়ারি স্থানীয় একটি এনজিওর থেকে লোন নিতে রাবেয়ার স্বাক্ষর নিতে চায় জামিন। রাবেয়া তাতে রাজি না হলে দুজনের মধ্যে প্রচÐ ঝগড়া হয়। ওই দিনই জামিন তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার একটি ছোরা কিনে জামিন। ওই ছোরা এবং সাথে মোস্তফাকে নিয়ে বাসায় আসে সে। তখন রাবেয়া রান্না ঘরে নাস্তা তৈরী করছিলেন। ছোট মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। আর বড় মেয়ে মিম আক্তার জান্নাত ছিল মায়ের সাথে রান্না ঘরে। জামিন তাকে তার নানার দোকানে পাঠিয়ে দেয়।
রাবেয়া কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মোস্তফা তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। এসময় জামিন রাবেয়ার গলায় ছুরি চালায়। রাবেয়া ধাক্কা মেরে মোস্তফাকে ফেলে দিলে সে জামিনের কাছ থেকে ছোরা নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যপুরি আঘাত করে। এদিকে ছোরা হাতে জামিনকে দেখতে পেয়ে মীম তার নানাকে নিয়ে দ্রæত বাসায় ছুটে আসে। তার আগেই গলা কাটা অবস্থায় রাবেয়া বাসা থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে রাস্তায় এসে মাটিতে পড়ে যান। এই সুযোগে জামিন ও মোস্তফা বাসার পেছনের দেওয়াল টপকে পালিয়ে যায়। মায়ের মৃত্যুর পর মিম এবং তার দুই বছরের ছোট বোন এখন একা হয়ে গেছে। মায়ের জন্য তাদের আহাজারি থামছে না। রাবেয়ার পরিবারের সদস্যরা দুই খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।