পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল একরাম হোসেন (২০)। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের সাথে ছুটে যান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- বিপিআই সদস্যরা। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় অনেক আলামত। তবে কোন কিছুতেই খুনিদের চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে অদূরে রাখা একটি অটোরিকশার সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে নেয় পিবিআই।
অবশেষে হত্যাকাÐের পাঁচ মাস পর আসে সাফল্য। অটোরিকশার সূত্র ধরেই ধরা পড়ে খুনি চক্রের চার সদস্য। আর তার মধ্যদিয়ে উদঘাটন হয় আলোচিত একরাম হোসেন হত্যার রহস্য। গতকাল শনিবার খুনিচক্রের সদস্যদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। আসামিদের দেখানো মতে, উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছুরি ও সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা।
চট্টগ্রামের সীতাকুÐের পৌর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এই খুনের ঘটনা ঘটে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। নির্মম খুনের শিকার একরাম হোসেন অটোরিকশা চালক। সে সীতাকুÐের বাড়বকুÐ এলাকার নতুন পাড়া গ্রামের চাঁন মিয়া চৌকিদার বাড়ির মো. নুরুল আবছারের পুত্র। ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে মালিক কামরুলের বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। মালিকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা জমা চুক্তিতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাটি চালাতো একরাম।
অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে খবর আসে সীতাকুÐ পৌরসভা এলাকায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে একরাম। মহাসড়কের পাশে এনজিও ইপসা অফিসের সামনে তার অটোরিকশাটিও ছিল। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সীতাকুÐ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার আগেই কুমিরা এলাকায় একরাম মারা যায়।
এ ঘটনায় একরামের ভাই মো. নুরুল হুদা সীতাকুÐ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ক্লুলেস হত্যা মামলাটির তদন্ত করে থানা পুলিশ। আর ঘটনার পর থেকে ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। আর তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসআই মো. শাহাদাত হোসেনকে। একপর্যায়ে পিবিআই মামলার তদন্ত অধিগ্রহণ করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই খুনিচক্রের চার সদস্যকে শনাক্ত ও চিহ্নিত করে।
এসআই শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম সীতাকুÐের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো- সীতাকুÐ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. তাজুল ইসলামের পুত্র মো. জাহেদ হোসেন (২০), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জাফরের পুত্র নূর আহাম্মদ (৪০), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আজগর আলীর পুত্র মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব (২০) ও বাড়বকুÐ ইউনিয়নের মো. রুহুল আমিনের পুত্র মো. ইসমাইল হোসেন রানা (২৪)।
গ্রেফতারের পর পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৬ জানুয়ারি রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ খান সাকিব ও রানাকে তিন দিন এবং নূর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনকে চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা হত্যাকাÐের দায় স্বীকার করে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তাদের দেখানো মতে, ঘটনাস্থলের পাশর্^বর্তী একটি পুকুর থেকে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, খুনিচক্রের মূলহোতা নূর আহাম্মদ। সে সীতাকুন্ড থানাধীন দক্ষিণ বাইপাস সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। অপরাপর সহযোগী আসামিগণও পেশায় অটোরিকশা চালক। নূর আহাম্মদের পরিকল্পনায় একরাম হোসেনকে হত্যাকাÐে সরাসরি সহযোগিতা করে অপর তিন আসামি।
মালিক সমিতির নেতা হওয়ায় নূর আহাম্মদের রুটে অটোরিকশা চালাতে প্রতি চালককে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে তাকে চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু একরাম হোসেন ওই রুটে অটোরিকশা চালালেও তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত নূর আহাম্মদ একরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন তিন সহযোগীকে নিয়ে বাড়বকুন্ড বাজারে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। উক্ত বৈঠক নূর আহাম্মদের নেতৃত্বে আসামিরা একরামকে হত্যার চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক সন্ধ্যা ৬টায় তারা নূর আহাম্মদের অটোরিকশাযোগে একরামকে অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একরাম তার অটোরিকশা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নূর আহাম্মদ তার অটোরিকশা দিয়ে একরামের গতিরোধ করে। এ সময় নূর আহাম্মদসহ চারজন একরামকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তার বুকে, তলপেটে ও পিঠে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে।
এসময় তার শোর চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে নূর আহাম্মদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব অটোরিকশাযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অপর আসামি মো. ইসমাইল হোসেন রানা দ্রæত রাস্তা পার হয়ে লোকাল বাসে উঠে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে আসামি জাহেদ হোসেন পালানোর আগেই লোকজন এসে যাওয়ায় সে ধরা পড়ার ভয়ে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একরামকে উদ্ধার করতে শুরু করে।
একপর্যায়ে সে একরামকে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা তার অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে কুমিরা এলাকায় একরাম মারা যায়। এ সুযোগে আলামত লুকাতে একরামের পকেট থেকে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় জাহেদ হোসেন। এরপর জাহেদ হোসেন একরামের জানাজা দাফনেও শরিক হন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও ফুটেজে একরামের অটোরিকশার অদূরে আরও একটি অটোরিকশা দেখা যায়। তবে রাতের বেলা হওয়ায় অটোরিকশার নাম্বার দেখা যাচ্ছিল না। এর ফলে অটোরিকশা নাম্বার বের করে আসামিদের শনাক্ত করতে সময় লাগে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। তারা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে হত্যাকাÐের পরও এলাকা ছেড়ে যায়নি। খুনের দায়ে গ্রেফতার হবে এটা তারা চিন্তাও করেনি বলে রিমান্ডে জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।