মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সংস্থাটি ত্যাগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় সংস্থাটি ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েল বিরোধী ও এটির সংস্কার সম্ভব নয়। অধিকার কর্মীরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। খবর বিবিসি ও রয়টারস।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল ত্যাগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, কপট ও স্বার্থপরায়ণ সংস্থাটি মানবাধিকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবাধিকার রক্ষার এ কাউন্সিলকে ‘মানবাধিকারের দুর্বল রক্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
কাউন্সিলকে সংস্কার করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যাহত করার জন্য রাশিয়া, চীন, কিউবা ও মিসরের সমালোচনাও করেন মার্কিন এই ক‚টনীতিক। একই সঙ্গে যে সব দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সমমনা ম‚ল্যবোধ রয়েছে এবং ওয়াশিংটনকে এ ব্যাপারে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে, অথচ ‘স্থিতাবস্থা চ্যালেঞ্জ করতে অনিচ্ছুক’ তাদেরও সমালোচনা করেন হ্যালি।
ভেনেজুয়েলা, চীন, কিউবা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর নাম উল্লেখ করে হ্যালি বলেন, কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দিকে দেখুন। মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি অধিকাংশ দেশেরই ভয় পাওয়ার মতো অসম্মান রয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সউদী আরবের নাম উল্লেখ করেননি।
২০০৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত হয়। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখা জেনেভা ভিত্তিক এই কাউন্সিলের লক্ষ্য। কিন্তু মানবাধিকারের রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এমন দেশগুলোকে সদস্য করার জন্য পরিষদ সমালোচনার শিকার হয়েছে। বিশে^র বিভিন্ন অঞ্চলের ৪৭টি দেশ তিন বছরের জন্য সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকে।
এর আগে গত বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিরুদ্ধে ‘চরম ইসরায়েল বিরোধী’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নিকি হ্যালি। তিনি বলেছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ধারাবাহিক ইসরাইল বিদ্বেষী ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, সংস্থাটির সদস্যপদের বিষয়টি ম‚ল্যায়ন করছে আমেরিকা।
কিছু দেশ ও ক‚টনীতিকরা মার্কিন প্রত্যাহারের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইউএনএইচআরসির বর্তমান সভাপতি ¯েøাভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত ভই¯øাভ সুক বলেন, বিশ^ব্যাপী মানবাধিকার সমস্যা ও পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়ার এটিই একমাত্র সংস্থা। আমাদের একটি শক্তিশালী ও গতিশীল কাউন্সিল সমুন্নত রাখা অত্যাবশ্যক।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক।
বহু দাতা ও সাহায্যদাতা গ্রæপ মার্কিন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন মৌলিক মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে সমন্বিত ও আগ্রাসী চেষ্টা চাূলাচ্ছে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক গ্রæপ হিউস্যান রাইটস ওয়াচ মার্কিন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। তারা ট্রাম্পের মানবাধিকার নীতিকে এক চোখা বলে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেইন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাব্যঞ্জক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অধিকারকর্মীরাও এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার মুখপাত্রের মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই কাউন্সিলে যুক্তরাষ্ট্রের থাকার বিষয়টিকে অধিকতর শ্রেয় মনে করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সব সময়ই বিরোধ মূলক ছিল। ২০০৬ সালে কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার বছরেই বুশ প্রশাসন সংস্থাটিকে বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন যে সব কারণ দেখানো হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন একই কারণের কথা উল্লেখ করেছে। তখন জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন জন বোল্টন যিনি বর্তমানে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের কট্টর সমালোচক।পরে ২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় কাউন্সিলে যোগ দেয়।
সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আন্তর্জাতিক কয়েকটি অঙ্গীকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই তালিকায় সবশেষ যুক্ত হলো জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্রই তাকে কাউন্সিলে থাকার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অনেকেই সংস্থাটির প্রতি ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের সমালোচনার সাথে একমত হলেও মনে করে যে সরে গিয়ে নয়, বরং এতে থেকেই এর সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় থাকা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে একে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেছে ইসরায়েল।
ইসরাইল আরো একঘরে হবে: হামাস
এদিকে, ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসী পদক্ষেপকে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরার কোনো উপায় নেই। অন্যায় আগ্রাসনের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আমেরিকা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গেছে।
সংগঠনটি এক বিবৃতিতে আরো বলেছে, আমেরিকার এ পদক্ষেপের কারণে বর্ণবাদী ইসরাইল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও একঘরে হয়ে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।