Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভোগান্তির অস্ট্রেলিয়া সিরিজ

ম। ন্ত। ব্য প্র। তি। বে। দ। ন

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৬:২৮ পিএম, ২৫ আগস্ট, ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই টেস্ট সিরিজের জন্য ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষা। নির্দিষ্ট করে বললে ১১ বছরেরও বেশি সময়। সেই ২০০৬ সালের এপ্রিলে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া দুটি টেস্ট খেলে যাওয়ার পর এবার এলো স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া। এই দীর্ঘ সময়ে বদলেছে আরো অনেক কিছু। দুই দলের মধ্যেই প্রজন্মের ব্যবধান ঘটে গেছে। টি-টোয়েন্টি নামের শঙ্করায়িত ক্রিকেটের উন্মাদনায় সারা বিশ্বই উথালপাথাল। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আর টেস্ট খেলতে আসেনি। বাংলাদেশকেও তারা টেস্ট খেলতে ডাকেনি নিজের দেশে।
২০১১ সালে তিন ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজ অবশ্য খেলে গেছে, সে ছিল সান্ত¦না। বাংলাদেশকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড) আক্ষরিক অর্থে তখন সান্ত¦নাই দিয়েছিল এই বলে যে, আপাতত তিনটি ওয়ানডেই হোক, পরে সময়-সুযোগ বুঝে দুটি টেস্ট খেলে যাওয়া যাবে। দ্বিপক্ষীয় অনেক যোগাযোগ-প্রক্রিয়া শেষে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে সেই দুটি টেস্ট খেলতে রাজি হলো ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে। সবকিছু ঠিকঠাক, সারা বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া দলের আগমনের প্রতীক্ষায় সময় গুনছে। ঠিক তখনই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে দিলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। (সেই সময় বাংলাদেশ সফর করে গেছে ইংল্যান্ড)। বাতিল করার পর অস্ট্রেলিয়া অবশ্য বলেছিল, এ সফরটি তারা পরে সুবিধামতো এক সময়ে করবে। সেই ‘সুবিধামতো সময়টা’ অবশেষে এল। সেই ‘সুবিধামতো সময়টা’ বাংলাদেশের জন্য কতটা সুবিধাময়?
স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার বহুল প্রত্যাশিত এই সফর নিয়ে দুই দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের রয়েছে অনেক আগ্রহ। তবে সিরিজ মাঠে গড়ানোর আগে সবার মনে কাজ করছে একটি শঙ্কাÑ বৃষ্টি! প্রথম প্রতিবন্ধকতা।
অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ পরস্পরের মুখোমুখি হলেই যেন এক কাঠি সরস হয়ে বসে বৃষ্টি, সমর্থকদের কাছে যা ‘বেরসিক’ বটে। দুই দলের সর্বশেষ দেখা হওয়ার রেকর্ড দুটি সেই কথাই বলছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। ঐ ম্যাচে বল গড়ানো দূরে থাক, টস-পর্বটাও হতে দেয়নি বেরসিক এই বৃষ্টি। বড় মঞ্চে ‘আধুনিক’ বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সাক্ষাতের রোমাঞ্চ সেবার বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও ২০১৭ সালে এসেছিল আরেকটি সুযোগ। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ছিল একই গ্রæপের অন্তর্ভুক্ত। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচে টানটান উত্তেজনাকর লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল, জয়ী দল যেখানে পেয়ে যেত শেষ চারের টিকিট। ঐ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যাবে- এমন মুহূর্তে স্মিথ-ওয়ার্নারদের সামনে বাঁধ সাধল বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পতন না থামায় অমীমাংসিতভাবে শেষ হয় ম্যাচটি। ভাগ্যের ছোঁয়ায় শেষমেশ শেষ চারে খেলে বাংলাদেশ, আর সেমির স্বপ্ন অধরা রেখেই দেশে ফিরে যায় অস্ট্রেলিয়া।
বৃষ্টির ছোঁয়া দুবারই বাংলাদেশকে পরের পর্বে উত্থিত করে দিলেও আসন্ন টেস্ট সিরিজে নেই কোনো পর্ব-বিভাজন, পরিসংখ্যান কিংবা কুসংস্কারে বিশ্বাসীদের কাছে তাই বৃষ্টি হতে পারছে না কাক্সিক্ষত আশীর্বাদ। তবে আশীর্বাদ হোক কিংবা অভিশাপ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় টেস্টেই আগন্তুক হয়ে আবির্ভূত হতে পারে আলোচিত বৃষ্টি। সমর্থকদের মন যাই বলুক, আবহাওয়া অফিসের সরবরাহ করা তথ্য যে অস্ট্রেলিয়া কিংবা বাংলাদেশের বদলে বৃষ্টির জয়গানই গাইছে! বৃষ্টিতে আদৌ টেস্ট শেষ হবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।
ঢাকাতে নিয়মিত সকালে হচ্ছে বৃষ্টি। শুধু সকালে নয়, দিনের বিভিন্ন সময়েও হচ্ছে হালকা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। তবে মাসের শেষ দিকে টেস্ট চলাকালীন সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর, ’২৭ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখনকার চেয়ে আরো বাড়বে।’ শুধু ঢাকা কেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও আছে বৃষ্টির চোখ রাঙানি। সেখানকার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘ঐ কয়দিনসহ আরো বেশ কিছুদিন চট্টগ্রামের আকাশে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ’। সারাদেশের মতো ঢাকায় অতিবৃষ্টিতে অধিকাংশ রাস্তায় কোথায় কোমর, কোথাও গলা পানি। যেখানে একটু ভালো অবস্থা, সেটিও খোঁড়খুঁড়িতে যাতায়াতের অনুপযোগী। বৃষ্টিতে ভেন্যু বিড়ম্বনায় সিরিজের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটিও আয়োজনে ব্যর্থ বিসিবি। দীর্ঘ জ্যামে নাকাল নগরবাসী। এর মধ্যে যখন ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে চলাচল করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের বহনকারী বাস, তখন কোন সীমানায় গিয়ে পৌঁছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, সেটি কি একটিবার ভেবে দেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড? এর ব্যবস্থাপনার খরচের বিলাসিতা কি বিসিবি এখন করতে পারে?
প্রতিবন্ধকতা দুই, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দক্ষিণাঞ্চল মিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় এরই মধ্যে নিজের সমবেদনা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ ড্যারেন লেহম্যানও। বানভাসিদের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই অর্থ বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রসংশার দাবি রাখে। সেই একই উদারতা কি অস্ট্রেলিয়া সিরিজের বেলায়ও দেখানো যেতো না? এমন প্রশ্নই আজ সবার মুখে মুখে। সেই প্রশ্নের পালে জোর হাওয়া লাগাচ্ছে আরেকটি বিড়ম্বনা। সেটিই তিন নম্বর প্রতিবন্ধকতা।
৯৫ শতাংশ মুসলমানের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল আজহা আগামী দুই সেপ্টেম্বর। সংবাদপত্র বন্ধের হিসেবে ঈদের ছুটি ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর। ঠিক তার আগের পাঁচদিন এবং পরের পাঁচদিন দুই টেস্টের সময়সূচি কতটা সময়োপযোগী? আগামী ২৭ আগস্ট শুরু হয়ে মিরপুর টেস্ট চলবে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। মাঝে তিন দিন ঈদুল আজহার ছুটির পরদিনই শুরু হবে চট্টগ্রাম টেস্ট (৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর)। ঈদকে সামনে রেখে এখন থেকেই চলছে প্রস্তুতি। কেউ নাড়ির টানে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটবেন গ্রামের বাড়ি, কেউ নিজেই হয়তো বন্যাদুর্গতÑ পরিবার নিয়ে ছুটবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। এই ব্যস্ততায় ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশের মানুষই যদি ম্যাচগুলো দেখতে না পারে, তবে? প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি নিজের ক্যামেরাবন্দী করেছেন স্বয়ং অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। পাঁচ তারকা হোটেল রুমে বসে তোলা ট্রেনের ছাদভর্তি মানুষের বাড়ি ফেরার সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
আবহাওয়া অধিদফতরে গেলে পুরো এক বছরেরও পূর্বাভাস মেলে খুব সহজেই। বিসিবি কি পারত না একটি বার খোঁজখবর নিয়ে এই বৃষ্টির সময় সিরিজটি পিছিয়ে, অথবা বাতিল করতে? যেখানে নিরাপত্তার ‘অজুহাতে’ তিন বার যারা সিরিজ বাতিল করল, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি কি পারত না ৩০ বছরের ভয়াবহতম বন্যার কারণে সিরিজটি বাতিলের চিন্তা করতে? মুসলিম প্রধান দেশে ঈদের সময় সিরিজটি না করে ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশের মানুষ যাতে উপভোগ করতে পারে, তেমন কোনো সময়ে কি সিরিজটি করা যেতো না?
এমন তিনটি বড় প্রতিবন্ধকতায় বিসিবির মনে কী একটি বারের জন্য উঁকি দেয়নি ‘অসময়ে’ এই সিরিজটি বাতিলের চিন্তা?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ