Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুঃস্মৃতির ভেন্যুতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের হুংকার

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আশরাফুলের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড এখনো রেকর্ড বুকে অমøান। এই মাঠেই বাংলাদেশ এশিয়া কাপে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তারপরও শ্রীলংকার এই ভেন্যুটিতে বাংলাদেশ দলের অতীত দুঃসহ স্মৃতির। শ্রীলংকার ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের ভেন্যুতে বাংলাদেশের অতীত কিন্তু মোটেও ভালো নয়। ১০ ম্যাচে জয় মাত্র ১টি, তাও আবার হংকংকের মতো আইসিসি’র সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষে। এশিয়া কাপ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের এই ভেন্যুতে অন্য ৯টি ম্যাচে হারের ছবিগুলোও কিন্তু কম যন্ত্রণার নয়। কারন এই ভেন্যুতে শ্রীলংকার কাছে ৭৬ এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৭ রানে অল আউটের লজ্জা আছে বাংলাদেশের। ১৯৯৭ সালে এশিয়া কাপে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে এবং ২০০২সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২৪৫ রানের হার এখনো দুঃস্বপ্ন হয়ে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে সেই পারফরমেন্সকে। স্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে এই ভেন্যুতে যে ৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ,সেই ৪টিতেই হারের ব্যবধান বড়। ১০৩ এবং ৮৮ রানের হারের যন্ত্রণা পর্যন্ত আছে বাংলাদেশের! ওয়ানডে ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা পেয়েছে (৩৮/১০) জিম্বাবুয়ের এই মাঠেই। সেই ম্যাচে ভাসের ৮-৩-১৯-৮ বোলিং, প্রথম শ্রীলংকান হিসেবে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখানেই।
তবে কলোম্বোর পি সারা ওভালে অতীতের টেস্টে দুঃস্মৃতি ভুলতে পেরেছে বাংলাদেশ এবার, ডাম্বুলায় অতীতে ওয়ানডে লজ্জা ঢেকে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অতীতের স্মৃতি ভুলিয়ে দেয়া জয় ২টিতেও স্বাগতিকদের দিয়েছে জবাব বাংলাদেশ। যে ভেন্যুতে আগের তিনটি টেস্ট ইনিংস ব্যবধানে হারকে নিয়তি বলে নিয়েছে মেনে, টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর যে মাঠে, সেই পি সারা ওভালে এবার উল্টো চিত্র- দেশের শততম টেস্ট জয়ে অন্য এক বাংলাদেশের আবির্ভাব দেখেছে বিশ্ব। ডাম্বুলায়ও অতীতের ৩ টি ম্যাচে বড় হারের যন্ত্রনা লাঘব করতে পেরেছে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৯০ রানের জয়ে। এই দু’টি ভেন্যুতে অতীত মুছে ফেলায় সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ও তা পুনরাবৃত্তির টনিক পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। অতীতের যন্ত্রণা লাঘবে সিরিজের শেষ ম্যাচে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের হুঙ্কার দিয়েছেন মাশরাফি-‘রক্ষণাত্মক থাকলে ক্রিকেট ম্যাচ জিততে পারব না। তবে রিল্যাক্সড থাকাটা খুব জরুরি। টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে শ্রীলংকায় টানা দুই ম্যাচ জিতেছি আমরা। যে পরিকল্পনায় আমরা খেলেছি, সেই পরিকল্পনায় খেলাটা খুব জরুরি। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটাই যেন আমরা খেলতে পারি, এটাই চাইব।’
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে, দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ৩ ম্যাচের সিরিজে অন্তত হারছে না বাংলাদেশ, তা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। গল টেস্টে হারের পর বদলে গেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের রুদ্ধদ্বার সভার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় পরিবর্তন দেখে বিস্মিত হয়েছেন কোচ হাতুরুসিংহে। শরীরি ভাষায় এই পরিবর্তনকেই ইতিবাচক মনে করছেন অধিনায়ক মাশরাফিও-‘ ক্রিকেটে বা যে কোন খেলায় শরীরী ভাষা একটা বড় ব্যাপার। আমরা হারি বা জিতি, শরীরী ভাষা সব সময় ঠিক রেখে খেলতে চাই।’
শ্রীলংকার মাটিতে আগে কখনো সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। আজ জিতলে শ্রীলংকার মাটি থেকে প্রথম কোন ট্রফি জয়ের উৎসব করতে পারবে বাংলাদেশ। মাশরাফির নেতৃত্বে আর একটি ইতিহাস রচিত হবে। মাশরাফির নেতৃত্বে জয়ের রজত জয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ দল। কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর শ্রীলংকার মাটি থেকে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে এখন উন্মুখ মাশরাফি। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ভালো খেলতে হবে বলে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন বয়কট, শ্রীলংকা সফরে সেই চ্যালেঞ্জের জবাব পাচ্ছেন এখন ওই ইংলিশ লিজেন্ডারি। তবে তাকে জবাব দিতে নয়, নিজেদের তাগিদ থেকেই বিদেশের মাটিতে সামর্থের প্রমাণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাশরাফি- ‘জবাব দেয়ার কিছু নেই। প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো সব সময় সব কিছু হয় না। সারা পৃথিবীতেই সবার জন্য দেশের বাইরের ম্যাচ খেলা কঠিন। যত দল ভারতে এসে খেলেছে, তাদের জন্য তা কঠিন ছিল। আবার ভারত যখন অন্য কোথাও খেলতে যায় ওদের জন্য তা কঠিন। বাংলাদেশে যখন অন্য দল আসছে আমরা ভালো খেলছি। এটাই বাস্ততা। বাংলাদেশ দল হিসেবে গড়ে উঠবে তখনই, যখন আমরা দেশের বাইরে বেশিরভাগ ম্যাচ জিততে থাকব।’
২০১১ সালের ফ্রেব্রæয়ারির পর একদিবসীয় ক্রিকেট আয়োজনে ৬ বছর নির্বাসনে থাকা এই ভেন্যুতেই গড়াচ্ছে আগামী ১ এপ্রিল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ! নির্বাসনের আগে এই ভেন্যুর রেকর্ডটাও কিন্তু ভাবাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। কারণ, এই ভেন্যুর সর্বশেষ ৮ ম্যাচের মধ্যে ৬টিই বৃষ্টির কারণে হয়নি সম্পন্ন। যে ৬টি ম্যাচের মধ্যে ২০০৬ সালে শ্রীলংকা-ভারত ম্যাচে মাত্র ৩.৪ ওভার গড়িয়েছে মাঠে,২০১১ সালে শ্রীলংকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে সেখানে ক্যারিবিয়ান আদ্রিয়ান বারাথের সেঞ্চুরি (১১৩) গেছে বিফলে! ম্যাচ দু’টি আক্রান্ত হয়েছে বৃষ্টিতে ! অন্য ৪টি ম্যাচে গড়ায়নি একটিও বল! ডাম্বুলায় তাসকিনের হ্যাটট্রিক উদযাপন করতে দেয়নি বাংলাদেশকে। ১-০তে সিরিজ এগিয়ে থেকে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠটি থেকে প্রকৃতি কি বিমুখ করবে বাংলাদেশকে? ৬ বছর পর ওয়ানডে প্রত্যাবর্তনে সিংহলিজ স্পের্টস ক্লাব মাঠে সিরিজ জিতে ইতিহাস রচনা করবে বাংলাদেশ? এই অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর আজই পেয়ে যাবে বিশ্ব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ