নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সেবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ‘নাগিন ড্যান্স’, গ্যালারিতে লঙ্কান দর্শকদের উন্মাদনা, একটি ‘নো’ বলের সূত্রে মাঠে উত্তেজনাময় পরিস্থিতি আর দুই দলের বেশ কজন ক্রিকেটারের মুখোমুখি হয়ে যাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে এই দুই দলের লড়াই মানেই মাঠের বাইরে উত্তপ্ত অবস্থা। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
দুই দলের জন্যই বাঁচা-মরার লড়াইয়ের আগে কথার লড়াইয়ে যে উত্তাপ উঠেছিল ব্যাটে-বলেও ছড়াল তা। বারবার রঙ বদলালো, মোড় নিল নাটকীয়তার। তবে উত্তেজনায় কাঁপা প্রহর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত আরেকটি হৃদয়ভাঙার বেদনায় পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পা রাখল শ্রীলঙ্কা। গতকাল রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের করা ১৮৩ রান তারা পেরিয়ে যায় ৪ বল আগে।
৮টি ওয়াইড, ৪টি নো বল- অতিরিক্ত কলামের এ দুই খাতে বাংলাদেশের খরচ। এর আগে শ্রীলঙ্কা কোনো নো বা ওয়াইড করেনি। শেষ পর্যন্ত এমন সূক্ষè ব্যবধানের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল সেটিই? শেষ ওভারে জয়ের সমীকরণেও যে ছিল ‘নো’ বলের হাত! শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান। এই অতিরিক্ত বল করায় মন্থর ওভার রেটের কারণে পাওয়া ‘অন ফিল্ড পেনাল্টি’তে শেষ ওভারে বাংলাদেশকে ফিল্ডিং করতে হয়ে বৃত্তের ভেতর ৫ ফিল্ডার নিয়ে। বোলিংয়ে আসা মেহেদি হাসানের জন্য কাজটি হয়ে ওঠে আরো কঠিন। প্রথম বলে আসে লেগ বাই থেকে এক রান। পরের বলে দারুণ শটে চার মেরে দেন অভিষিক্ত আসিথা ফার্নান্দো। তৃতীয় বলে আসে আরও দুই রান। পরে তৃতীয় আম্পায়ার সঙ্কেত দেন ‘নো’ বলের। জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
১৮৩ রান তাড়ায় কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কার ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ইবাদত হোসেনের স্বপ্নের অভিষেক ওভার, তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের পর মুস্তাফিজুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এনে দেওয়া ব্রেকথ্রুতে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুতেই মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেন মুশফিক, এ ছাড়া ফিল্ডিংয়ে এদিন ঠিকঠাকই ছিল বাংলাদেশ। তবে ভোগালো ওই অতিরিক্ত খাতও। মেন্ডিস অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছেন নানাভাবে। চার বার জীবন পাওয়ার পর ৩৭ বলে তিনি করেন ৬০ রান। এরপর শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক শানাকা খেলেন ৩৩ বলে ৪৫ রানের ইনিংস।
শানাকা ফেরার পর আবার এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত আবার এলোমেলো হয়ে পড়ে তারা। অভিষিক্ত পেসার আসিথা ফার্নান্দো, বল হাতে ৪ ওভারে যিনি দিয়েছেন ৫১ রান, শেষ সময়ে নায়ক হয়ে উঠলেন ব্যাট হাতে। শেষ দুই ওভারে তার দুটি বাউন্ডারি গড়ে দিল ব্যবধান। ৩ বলে ১০ রান করে তিনিই শেষের নায়ক। ১৮৩ বা এর বেশি রান করেও এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হারল বাংলাদেশ। দুটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এই মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটিই। আর তাতে দুবাইয়ে আরেকটি রাত উপহার পেল শ্রীলঙ্কা। এই জয়ে সুপার ফোরে আফগানিস্তানের সঙ্গী তারাই। বিদায় নিল বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপের আগ থেকেই ক্রিকেটাঙ্গণ সরব ছিল আগ্রাসী খেলায় নতুন শুরু নিয়ে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার ছিটেফোঁটা ছিল না। এই ম্যাচে দেখা যায় আভাস। প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামেন সাব্বির রহমান-মেহেদী হাসান মিরাজ। সাব্বির (৫) রান করলেও তার ব্যাট চালানোতে ছিল আগ্রাসীভাব। প্যাডল সুইপ করে খুলেছিলেন রানের খাতা। আউট হয়েছেন পুল করতে গিয়ে। আর মিরাজকে নিয়ে ধরা বাজি নিশ্চিতভাবে করেছে বাজিমাত। ২টি করে চার-ছয়ে ২৬ বলে ৩৮ রান করে থামেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা।
মিরাজের আগ্রাসী শুরুতে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫৩ রান করে। যা ২১ ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাকিব আল হাসান ব্যাট চালালেও শুরুর দিকে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ১৫তম বলে পেয়েছেন প্রথম বাউন্ডারির দেখা। শেষ পর্যন্ত থামেন ২২ বলে ২৪ রান করে। মুশফিকের ব্যাট এদিনও ছিল নিষ্প্রভ (৫ বলে ৪)। তার আগে নামার কথা ছিল আফিফ হোসেনের। কিন্তু দুই বাঁহাতি একসঙ্গে ব্যাটিং করতে চাননি সাকিব। তাই মুশফিককে আনান ব্যাটিংয়ে। সাকিব-মুশফিক দুজনেই ফিরলে খেলার হাল ধরেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ।
আফিফ ছিলেন আগ্রাসী আর মাহমুদউল্লাহ এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন। দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৩ বলে ৫৭ রান। নিখুঁত টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলেন আফিফ। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ২ ছয়ে ২২ বলে ৩৯ রান। আফিফের পরের ওভারেই মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ২৭ রানে আউট হয় শংকা জাগে ১৭০ রানের। তবে মোসাদ্দেক তা হতে দেননি। ক্রিজে এসেই হাসারাঙ্গাকে হাঁকান ২ চার। চাপমুক্ত হয়ে খেলেন শেষ পর্যন্ত। মাঝে মেহেদী এসে ফিরলেও তাসকিন দারুণ সঙ্গ দেন। শেষ ওভারে দুজনে নেন ১৭ রান।
কিন্তু এমন বৃত্তভাঙা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পরও ক্যাচ মিস আর এলোমেলো বোলিং দিনশেষে জুটলো পরাজয়ের গøানি!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।