নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দুই হাজার চৌদ্দ সালে ভারতের অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলটি ব্যাঙ্গালোর ছাড়ার আগে নওশাদ খান তার ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।
পনের সদস্যের সেই দলটিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন সরফরাজ খান। সাথে ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার, সাঞ্জু স্যামসন, দিপাক হুডা, কুলদীপ ইয়াদাভের মতোন ক্রিকেটাররা।
ভারতের পেস বোলিং বিপ্লবের নেপথ্যে থাকা ভারত অরুণ এই দলটির কোচ ছিলেন।
অরুণকে যখন বলা হয় নওশাদ খান তার ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছে, তিনি তাকে রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেন, "কোনও কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, সব ঠিক থাকবে"।
নওশাদ খান স্মৃতিচারণ করেন, "আমি কোচকে বলেছিলাম 'আমার ছেলে সরফরাজ একটু ডানপিটে একটু খেয়াল রাখবেন'।"
অরুণ তাকে বলেছিলেন সরফরাজের আমুদে স্বভাব দলের জন্য সম্পদ।
ভারত অরুণ বলেন, "অস্ট্রেলিয়ান বা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ভয় পেতেন না সরফরাজ, এমনকি কৌতুকও করতেন। এটা দলের মেজাজ হালকা রাখতে সাহায্য করতো। এটাই তার স্বভাব, যেদিন সরফরাজ এর ব্যতিক্রম হবেন তার খেলাতেও প্রভাব ফেলবে।"
সেদিন থেকে আজকে তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি, সরফরাজ এখনও তেমনই কৌতুকবাজ আছেন।
মুম্বাইয়ের হয়ে ভারতের শীর্ষ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে খেলছেন সরফরাজ।
মুম্বাইয়ের কোচ অমল মজুমদারের ভাষ্যমতে ,'সরফরাজ দলের প্রাণ'।
মাঠে তিনি অকুতোভয় এবং ব্যাট হাতে রান করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
গত দুই মৌসুমে ১২ ম্যাচে ১৩৬.৪২ গড়ে ১৯১০ রান তুলেছেন সরফরাজ।
এই ১২ ম্যাচে ১৮ ইনিংস ব্যাট করেছেন সরফরাজ খান, ৭টি সেঞ্চুরি ও ১১টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি।
রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ভিভিএস লাক্সমানের। তিনি ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে ১৪১৫ রান তুলেছিলেন। ভারতের ক্রিকেটে এই রেকর্ডকে স্বর্ণক্ষচিত বলা হয়ে থাকে।
সেবার লাক্সমান নয় ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সরফরাজ গেল দুই মৌসুমে ছয়টি করে ম্যাচ খেলেছেন, নবম ম্যাচের পরে তার রান ছিল ১৪৭৯।
সরফরাজের প্রভাব এমনই ভারতের শীর্ষ লীগে, এর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়, তার বাবা নওশাদও এখানে ভূমিকা রেখেছেন।
নওশাদ খান, তার দুই ছেলে সরফরাজ খান ও মুশীরের প্রাথমিক কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। মুশীরের বয়স ১৭, তিনিও ধীরে ধীরে ক্রিকেটের অঙ্গনে পা রাখছেন।
সরফরাজ যখন নিজের শৈশবের কথা মনে করেন চোখ ছলছল করে ওঠে, যদি তার বাবা দেখভাল না করতেন কী হতে পারতো ভাবেন সরফরাজ।
নওশাদ তার ছেলের উইকেটের ওপর একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতেন। যে বোলার সরফরাজকে আউট করতে পারবেন সে-ই পাবেন ৫০ রুপি।
তার ছেলে যাতে ক্রিজে কঠিন সময় পার করে এটা নিশ্চিত করতেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন সরফরাজ।
কখনো কখনো একদিনে ৩০০-৪০০ রুপিও খরচ হয়ে যেত। ভারতের একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটা অনেক টাকা।
যে কারণে সরফরাজ পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতেন যাতে সহজে তার উইকেট না নেয়া যায়।
বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন সরফরাজ, "তিনি, আমার বাবা বলেই আমি এটা বলছি এমন না, তার মতো একটা মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাবার মতো লেগে থাকা মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। তার হাঁটুতে সমস্যা আছে এবং আট বছর আগে তাকে চিকিৎসকরা বলেছিলেন সার্জারি করাতে। কিন্তু সার্জারি করালে তাকে হুইলচেয়ারে বসে পড়তে হবে এবং আমাদের কোচিং করানো হবে না। এই কারণে তিনি সার্জারি করাননি।"
মুম্বাইয়ের স্কুল পর্যায়ের ক্রিকেটে পৃথ্বি শ ও আরমান জাফরের সাথে সরফরাজ ছিলেন অসাধারণ ক্রিকেট প্রতিভা।
কিন্তু নওশাদ সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেকে নিয়ে উত্তর প্রদেশ যাবেন, কারণ তার মনে হয়েছে মুম্বাই থেকে ক্রিকেট দলে জায়গা পাওয়াটা হবে অনেক কঠিন।
কিন্তু উত্তর প্রদেশের হয়ে খুব একটা ভালো যায়নি সময় তাই আবারও সরফরাজের পরিবার মুম্বাই ফিরে আসে।
মুম্বাইয়ের হয়ে আবারও খেলার আগে একটা বাধ্যতামূলক বিরতিও নেন তিনি।
এরপর এল আইপিএল- ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত এই ক্রিকেট লিগের দল রয়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে সুযোগ পান।এমনকি ২০১৮ সালে যে তিনজন ক্রিকেটারকে ধরে রাখে দলটি তাদের একজন সরফরাজ খান। বাকি দুজন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ভিরাট কোহলি।
আরসিবির একজন বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, সরফরাজ দ্রুতগতিতে এমন সাবলীলভাবে বল পেটাতে পারেন যা অবিশ্বাস্য।
যদিও সেবার সরফরাজের ফর্ম তেমন ভালো ছিল না এবং শৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
তবে তিনি চারদিনের ম্যাচে পারফর্ম করতে থাকেন এবং মুম্বাইয়ের হয়ে তার ব্যাটিং সরফরাজকে জাতীয় দলের জন্য একজন সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট হিসেবে তৈরি করেন।
সরফরাজের ওজন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে, কিন্তু এসব তাকে স্পর্শ করে না।
"যখন আমার হাতে ব্যাট থাকে আমি একটা জোনে চলে যাই। তখন নির্বাচকরা দেখছেন কি না, দর্শক দেখছেন কি না, আমি পরো করি না। যদি আল্লাহ চান আমি সুযোগ পাবো।"
সরফরাজ নিজের পরিশ্রমের ওপর এবং তার বাবার প্রশিক্ষণের ওপর ভরসা রাখেন।
প্রতি বছর অনুশীলন করার জন্য তাকে 'যাযাবর' হয়ে যেতে হয়।
তার বাবা উত্তর প্রদেশে নিয়ে যান বৃষ্টি এড়িয়ে খেলার জন্য। মুম্বাইয়ে ভরা বরষায় প্রায় প্রতিটি অনুশীলনের জায়গাই বন্ধ থাকে। এই ১৪০০ কিলোমিটার গাড়ির যাত্রাকালে যেখানেই অনুশীলন করার সুযোগ পান সেখানেই থামেন পিতা ও পুত্র।
ছেলে ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলবে, এই স্বপ্ন পূরণ করতে বাবার সাথে যে পরিশ্রমটা চালিয়ে যান, সেটার একটা উদাহরণ মাত্র এই যাত্রা।
এখন গণমাধ্যমে সরফরাজকে নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে, সেই দিন খুব দূরে বলে মনে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।