পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আদালত গত কয়েক বছর ধরে এগুলো বন্ধে দফায় দফায় নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর ৭২ ঘন্টার মধ্যে এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশব্যাপী অভিযান শুরু হয়েছে এবং লাইসেন্সবিহীন প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করা হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৭ হাজার ২৪৪টি। এগুলোর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ৫ হাজার ৫শ’ ১৯টির। বাকিগুলো লাইসেন্সবিহীনভাবেই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ হিসাব যথাযথ নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এর বাইরে আরও হাজার হাজার অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তা নাহলে, এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিভাবে বছরের পর বছর ধরে চলেছে? এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের গাফিলতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
রাজধানীসহ সারাদেশে পাড়ামহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগেরই নেই কোনো মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা। বরং নি¤œমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিন, রি-অ্যাজেন্ট, অদক্ষ টেকনিশিয়ান, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে চালিয়ে আসছে। বাসা-বাড়ির কোনো ফ্ল্যাট এমনকি দোকানেও হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা হোক বা না হোক, যার কাছ থেকে যেমন পারছে সেবার নামে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অনেক ঘটনাও ঘটছে। ভুল রিপোর্টের কারণে রোগীর ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামি-দামি চিকিৎসকের সাইনবোর্ড ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। অনেক চিকিৎসক সপ্তাহে বা মাসে একবার কিছু সময়ের জন্য হাজিরা দিয়ে সেগুলোর বৈধতা দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসা নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষ এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটে যায়। মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতম এই সময়কে চিকিৎসার নামে তারা অনেকটা জিম্মি করে ফেলে। মোটা অংকের টাকা দাবি করে বসে এবং তা অগ্রিম আদায় করে থাকে। অসহায় ও নিরূপায় মুহূর্তে অনেকে ধারদেনা করে হলেও অর্থের সংস্থান করে। তবে দাবি মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করলেও রোগী মানসম্পন্ন চিকিৎসা পায় না। অনেক সময় অপচিকিৎসার শিকার হয় রোগী। প্রতিবাদ করতে গেলে রোগীর স্বজনদের মারধরের ঘটনাও অহরহ ঘটে। এমনকি অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় লাশও আটকে রাখে। নামী-দামী বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ভাংচুরও হয়েছে। অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, যেগুলো কোনো নিয়মকানুন না মেনে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে গড়ে উঠেছে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এগুলোতে না আছে পর্যাপ্ত শিক্ষক, না আছে শিক্ষার্থীদের প্র্যাক্টিক্যাল ও ইন্টার্নশিপ করার ব্যবস্থা। শিক্ষাবর্ষ শেষে এসব মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে বের হচ্ছে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এসব মেডিক্যাল কলেজ নামমাত্র হিসেবে গড়ে উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। তবে দেরিতে হলেও অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদফতর যে অভিযান শুরু করেছে, তা অভিনন্দনযোগ্য।
এ কথাও মনে রাখা দরকার, যেসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে সেগুলো মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনের জন্য গড়ে উঠেছে। জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় হাতের কাছে থাকায় মানুষ নিরুপায় হয়ে সেগুলোতে ছুটে যায়। এ সুযোগটিই সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ নিচ্ছে, রোগীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যথাযথ তদারকির মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মানসম্পন্নভাবে গড়ে তোলা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। যারা মানসম্পন্নভাবে গড়ে তুলতে চায় তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করার জন্য আল্টিমেটাম দেয়া যেতে পারে। এমনও অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যেগুলো পঁচিশ-ত্রিশ বছর ধরে চলছে। তদারকির মাধ্যমে সেগুলোতে যথাযথ ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় কিনা, তা সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে ভেবে দেখতে হবে। যেকোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের জন্য লাইসেন্স অত্যাবশ্যক। সরকারের রাজস্ব, তথ্য ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য এর অবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। নতুন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন দেয়ার আগে সেগুলোর মান নিশ্চিতে কঠোর শর্তাবলী দিতে হবে। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে একটি ডাটাবেজ করার প্রয়োজনীয়তা অনেক দিন ধরে অনুভূত হচ্ছে। সেটা যত দ্রæত সম্ভব করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভুল ও ত্রæটি-বিচ্যুতিও থাকতে পারে। সেগুলো সংশোধন ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।