Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইসেন্সবিহীন দুই-তৃতীয়াংশ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চলছে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া। ২০১৮ সাল থেকে বৈধ লাইসেন্স না থাকলেও, তেমন কোনো ঝামেলা তাদের পোহাতে হয়নি। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নোটিশ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছাড়া এগুলোর বিরুদ্ধে আর কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক আমিনুল হাসান বলেন, ২০১৮ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড করার কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যে কারণে তখন থেকেই লাইসেন্স নবায়ন ধীর গতিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ হাজার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে পাঁচ হাজারের যথাযথ লাইসেন্স রয়েছে। বাকিরা লাইসেন্স নবায়ন করতে আসেনি।
প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারে না বলে তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, যখন এসব অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা, তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যকর ভ‚মিকা দেখা যায়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক প্রফেসর সামিউল ইসলাম সাদী লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালালে একটি মহলের চাপে পরবর্তীতে তাকে সরে যেতে হয় পদ থেকে। এরপর আর অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’র অধীনে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালিত হয়। এই আইন অনুযায়ী, এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা ছাড়া আমরা আর কিছু করতে পারি না। যাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি, তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে উল্লেখ করেন আমিনুল হাসান। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত তাদের নোটিশ দিই এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকি। এক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতিও একটি বড় কারণ বলে জানান আমিনুল হাসান। ঢাকার প্রায় পাঁচ হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের বিষয়টি দেখার জন্য মাত্র তিন জন কর্মকর্তা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি জানা সত্তে¡ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি গত সপ্তাহে জনসম্মুখে আসে। এরপর থেকেই লাইসেন্স নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক আমিনুল হাসানের যোগসাজশেই রিজেন্টের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতনরা রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করতে চাননি। কারণ এই হাসপাতালটি মানসম্পন্ন ছিলোনা এবং মানুষের কাছে পরিচিত ছিল না। কিন্তু আমিনুল হাসানের পীড়াপিড়িতে অধিদফতর বাধ্য হয় চুক্তি করতে। যদিও এ বিষয়ে আমিনুল হাসান ইনকিলাবকে বলেছেন, সবার সম্মতিতেই চুক্তি হয়েছে। এটা আমার একার বিষয় ছিলো না।
সূত্র মতে, গত ৭ জুলাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালায় এবং করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ উদ্ধার করে। তখন জানা গেছে, রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালটি তাদেরকে রিপোর্ট দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নজির আহমেদ বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অনিয়মের যে স্ত‚প, সেটির অগ্রভাগে রয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। এই সেক্টর সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা ‘বাকেট টেস্টে’র সঙ্গে পরিচিত। এর মানে হলো নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো একটি বাকেটে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর যথেচ্ছভাবে পরীক্ষার ফল দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বে-নজির আহমেদ বলেন, এটি কমন প্র্যাকটিস। এই কারণে রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভুল চিকিৎসা পায়। ভুক্তভোগীদের জন্য এর পরিণতি দুঃসহ। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব অনিয়মের দায় এড়াতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে, এর জন্য পুঙ্খানুপঙ্খ ও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, শুধু সরঞ্জাম কেনাই তাদের কাজ নয়। চিকিৎসার নামে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যে দুর্নীতি করছে, তার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকেও দায়বদ্ধ হতে হবে। এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে উল্লেখ করেন তিনি।
সাবেক পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ বে-নজির আহমেদ বলেন, লাইসেন্সের প্রক্রিয়াটি বিকেন্দ্রীভ‚ত করে এটি কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। উদাহরণস্বরূপ- উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের কাজ করবেন। তেমনি জেলা পর্যায়ে একইভাবে কাজ করবেন সিভিল সার্জনরা।
যোগাযোগ করলে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভ‚ঁইয়া। কিন্তু, লাইসেন্স না থাকা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ