Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইমাম-বাবরে রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২২, ৯:৩১ এএম

পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে তো আর এমনি এমনি 'আনপ্রেডিক্টেবল' বলা হয় না। প্রথম ম্যাচে যে দল ৩০০ এর বেশি রানের জয়ের লক্ষ্যে ২২৫ রানেই থেমেছিল, সে দল সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ রানের লক্ষ্য যেন টপকে গেল নিমিষেই। এ জন্যই বোধহয় পাকিস্তান দলের সাথে 'আনপ্রেডিক্টেবল' তকমা শোভা পায়। গতকাল (৩১ মার্চ) সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৪৯ রানের লক্ষ্যকে হাতের মোয়া বানিয়ে দলকে রেকর্ড গড়া জয় উপহার দিয়েছেন ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম। এ জয়ে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে প্রথমটিতে হেরে গেলেও ১-১ সমতা এনেছে পাকিস্তান।

লাহোরে প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল পাকিস্তান। আগের ম্যাচের চেয়ে ব্যাট হাতে বেশি চড়াও হন অজি ব্যাটাররা। বেন ম্যাকডারমটের শতক, ট্রাভিস হেড, মারনাস লাবুশেন, মার্কাস স্টয়নিসে ভর করে ৩৪৮ রান তুলে রেকর্ড গড়ে সফরকারীরা। পাকিস্তানের মাটিতে অজিদের ওয়ানডেতে এটিই সর্বোচ্চ রানের স্কোর।

এ বাধা টপকাতে হতে পাকিস্তানকেও ছুঁতে হতো রেকর্ড। সে রেকর্ড করেই জিতল তারা। গতকালের ম্যাচের আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩২৭ রানের লক্ষ্যে জেতা ম্যাচ ছিল ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।

সে রকর্ড ভেঙে গতকাল নিজেদের মাটিতে নতুন রেকর্ড গড়ল বাবর আজমের দল। ৩৪৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইমাম ও বাবরের শতকে ভর করে ৬ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় স্বাগতিকেরা। এটিই এখন পাকিস্তানের ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড।

দলের রেকর্ড গড়ার পথে ব্যক্তিগত রেকর্ডও গড়েছেন ম্যাচের নায়ক ও পাকিস্তান দলপতি বাবর। গতকালের শতক ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে বাবর আজমের ১৫তম সেঞ্চুরি। আর এতে রীতিমত রেকর্ড গড়েছেন তিনি। বাবর ওডিআই ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত ১৫ টি শতক হাঁকালেন। বাবরের ১৫ টি শতক করতে খেলতে হয়েছে মাত্র ৮৩ ইনিংস। এ রেকর্ড গড়ার পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন হাশিম আমল (৮৬ ইনিংস), বিরাট কোহলিকে (১০৬ ইনিংস) ।

৩৪৯ রানের রেকর্ড গড়া লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ব্যাটার ইমাম ও ফখর জামান । প্রথম উইকেট জুটিতেই আসে ১১৮ রান । ১৯তম ওভারে গিয়ে পরাস্ত হন ফখর। স্টয়নিসের করা স্লোয়ার আর খানিকটা অফ ব্রেকের মতো ছোঁড়া বল যেন বুঝতে পারেনি ব্যাট হাতে অনেকদিন পর ওয়ানডেতে ছন্দে থাকা ফখর। স্টয়নিসের এ ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হয়ে ফেরার আগে ৬৪ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের নায়ক।

ফখর আউট হলেও রানের চাকা ঠিক মতোই ঘোরাতে থাকেন অধিনায়ক বাবর ও ইমাম । দ্বিতীয় উইকটে জুটিতে মাত্র ১৫ ওভার ২ বল থেকে ১১১ রান তুলে এ জুটি। আগের ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ইমাম তুলে নেন নিজের টানা দ্বিতীয় শতক। ৩ টি ছক্কা ও ৬ টি চারের সাহায্যে ৯৭ বলে ১০৬ রান করে জাম্পার বলে ফেরেন ইমাম । ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ইমাম ক্যাচ আউট হলে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় দুই উইকেটে ২২১ রান।

তখনও জয় থেকে দূরে পাকিস্তান। কিন্তু এ দিনটি যেন বাবরের রেকর্ড গড়ার। প্রথমে ধীরে শুরু করা এ ব্যাটার ৪২ বলে অর্ধশতকের দেখা পাওয়ার পর পরের ২৩ বলে করে বসেন আরও ৫০!

মাত্র ৭৩ বলে নিজের রেকর্ড সবচেয়ে কম ইনিংসে ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের ১৫তম শতকটি হাঁকান। সেঞ্চুরির দেখা পাওয়ার পরের ১০ বলে ১৪ রান যোগ করে নাথান এলিসের বলে সফট ডিসমিসাল হন। ৪৫তম ওভারে যখন মিসটাইমিং শট খেলে ৮৩ বলে ১১৪ রান করে ক্যাচ আউট হন বাবর তখন দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গেছেন অনেকটা। পাকিস্তানের দরকার হয় ৩৪ বল থেকে ৪০ রান, আর হাতে ৭ উইকেট।

কিন্তু পরে বাবরকে শক্ত সঙ্গ দেওয়া রিজওয়ান ২৩ রান করে ফিরে গেলে আবারও শঙ্কা জাগে পাকিস্তান সমর্থদের মনে। তখনও যে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৪ বলে ৩১ রান। অবশ্য সে বাধা টপকে যান খুশদিল শাহ ও ইফতিখার আহমেদ। এ জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে এক ওভার বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের রেকর্ড গড়া জয়ে পাকিস্তানকে সিরিজে ফেরায়।

এর আগে টস হেরে ব্যাট হাতে সিরিজ জয়ের মিশনে বড় সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। যদিও সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে বাবর আজমের বোলিং করার সিদ্ধান্তকে প্রথম ওভারেই সঠিক প্রমাণ করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ফিরে গেলেও ম্যাকডারমটের শতকে ৩৪৮ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় অজিরা।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ট্রেভিস হেড ও ম্যাকডারমট ১৬২ রান যোগ করেন। হেডের কাছে আজও সুযোগ ছিল শতক হাঁকানোর। কিন্তু ৭০ বলে ৮৯ রান করে লেগ স্পিনার জাহিদ মাহমুদের শিকার হন বাঁহাতি ব্যাটার।

হেডের শতক মিসের দিনে ম্যাকডারমট অবশ্য ভুল করেনি। ১০৮ বলে ১০৪ রানে দুর্দান্ত এক শতক করেন এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল ১০ টি চার ও ৪টি ছয়ের মার। ৩৫ তম ওভারে ওয়াসিম জুনিয়রের শিকার হন বেন। দলীয় ২৩৭ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে।

শেষ দিকে মারনাস লাবুশেন ও মার্কাস স্টয়নিসের ব্যাটে ভর করে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ৩৪৮ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।

পাকিস্তানের হয়ে ৪টি উইকেট পান আফ্রিদি। ২টি উইকেট তুলে নেন ওয়াসিম জুনিয়র। আগামীকাল (২ এপ্রিল) সিরিজের শেষ ম্যাচটিও হবে লাহোরে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ