নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। গতকাল সেঞ্চুরিয়ানে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে হারায় স্বাগতিকদের। ৩৭ ওভারে সবক’টি উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ১৫৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ ২৬.৩ ওভারে মাত্র এক উইকেটে ১৫৬ রান করে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয়।
তাসকিন আহমেদের আগুনঝরা বোলিংয়ের পর জয়টা প্রায় বাংলাদশের হাতের মুঠোতেই চলে এসেছিল। বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার দায়িত্বটা পড়ে ব্যাটারদের ঘাড়ে। দেখার বিষয় ছিল, তারা কতটা স্বচ্ছন্দে দায়িত্ব পালন করেন। হ্যা, বোলারদের মতো ব্যাটাররাও ঠিকঠাক নিজেদের দায়িত্ব পালন করে দেশকে এনে দিলেন এক ঐতিহাসিক জয়। বাংলাদেশ বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে কম রানে অলআউট করে দিয়ে ম্যাচকে যতটা সহজে পরিণত করেছিলেন, ব্যাটাররা সেই সহজ কাজটাকে আরও বেশি সহজ করে নিলেন। বিশেষ করে ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আরেক ওপেনার লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ১২৭ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়কে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত লিটন আউট হলেও সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরিয়ানের সুপার স্পোর্টস পার্কে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। দক্ষিণ আফ্রিকার মত ক্রিকেটপরাশক্তি দেশের মাটিতে গিয়ে তাদেরই বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের ইতিহাস রচনা করলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এর আগে কোনো ফরম্যাটে একটিও জয় ছিল না বাংলাদেশের, সেখানে শুধু ম্যাচই নয়, ২-১ ব্যবধানের সিরিজ জয় রীতিমত অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতির দুর্দান্ত একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এই সিরিজ জয়।
তাসকিনের ৫ উইকেটের পর প্রতিপক্ষকে ১৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে বাংলাদেশ, সে আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনে একেবারেই জ্বলে-পুড়ে ছারখার স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। অতীতে অনেক ম্যাচে দেখা গেছে লো স্কোরিং বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তালগোল পাকিয়ে ম্যাচ হেরে বসে পরে ব্যাট করা দল। এই সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ তো দূরের কথা, কোনো ম্যাচ না জেতা বাংলাদেশ দল যে তা করতে পারে, সেই শঙ্কা জমাট বেঁধেছিল। তবে তামিম-লিটনের ‘নির্ভার’ ব্যাটিং সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। যদিও বিপদটা হতে পারতো বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই। রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারাতে বসেছিল টাইগাররা। ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান লিটন। কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পয়েন্টে বল মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হন কেশভ মহারাজ। তখন শূন্য রানে ব্যাট করছিলেন লিটন। সেই লিটনই পরে ফিরেছেন আক্ষেপকে সঙ্গী করে ৪৮ রানে। ২ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। লিটন না পারলেও ঠিকই হাফসেঞ্চুরি হাঁকান তামিম। স্ট্রাইক রেটের জন্য সমালোচিত বাঁহাতি ওপেনার কাল হাত খুলে খেলেছেন। দলীয় ৭৩ রানের যখন তখন ব্যক্তিগত ফিফটি তামিমের। তাও আসে মাত্র ৫২ বলে, ৯টি চারের মারে। তামিমের মতো লিটনও ছুঁটছিলেন ফিফটির দিকে। তবে ইনিংসের ২১তম ওভারে মাহারাজের বলে আউট হন তিনি। ফেরার আগে নিজের ৫৭ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চার দিয়ে। দুই জনের ১২৭ রানের উদ্বোধনী পর সাকিবকে নিয়ে জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন তামিম। বড় জয় পাওয়ার পরেও খানিক আফসোস আছে তামিমের। প্রতিপক্ষ আর কিছু রান করতে পারলে সেঞ্চুরিটা হয়তো পেয়ে যেতে পারতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে এমন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের কাছে কোনো আফসোস ধোপে টেকার কথা নয়। দারুণ জয় পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তামিম অপরাজিত থাকেন ৮২ বলে ৮৭ রানে। তার ইনিংসে ছয় না থাকলেও চারের মার আছে ১৪টি। সঙ্গে ২০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব আল হাসান। আগুনঝরা বল করে ৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের ইনিংসে ধ্বস নামানো বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ ম্যাচসেরার পাশাপাশি সিরিজ সেরারও পুরস্কার জিতে নেন। এটা তার ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ওপেনিং জুটিতে ভালো একটি সূচনা পেয়েছিল। কুইন্টন ডি কক আর জানেমন মালান ঝড়ো সূচনা করেন। ৪১ বলে তাদের ৪৫ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টাইগার অফস্পিনারকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅফে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ হন ডি কক (৮ বলে ১২)। এরপরই তাসকিন ঝলকে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায় লাল-সবুজরা। টানা দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন তাসকিন। উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন সাকিব, শরিফুলরা। বিনা উইকেটে ৪৬ থেকে এক ঝটকায় ৫ উইকেটে ৮৩ রানের দলে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩তম ওভারে এসে কাইল ভেরনানকে (৯) তুলে নেন তাসকিন। এই উইকেটে অবশ্য কিছুটা ভাগ্যের সহায়তাও ছিল। তাসকিনের ওয়াইড ডেলিভারি টেনে উইকেটে এনে বোল্ড হন ভেরনান। এক ওভার পর এসে তাসকিন তার দ্বিতীয় শিকার ধরেন। এবার আর ভাগ্যের সাহায্য নয়, দারুণ এক ডেলিভারিতে মালানকে (৩৯) উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান টাইগার গতিতারকা। তাসকিনের পরের ওভারে আরও এক উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে (২) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। তার আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। বাভুমা যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
১৯তম ওভারের প্রথম বলেই প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের আরেক ভরসা ভ্যান ডার ডাসেনকে (৪) আউট করেন শরিফুল। ডাসেন আকাশে বল ভাসিয়ে দিলে পয়েন্টে দারুণ এক ক্যাচ নেন মিরাজ। ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর কিছুটা সময় ধরে খেলেছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস আর ডেভিড মিলার। ৩৮ বলে তাদের জুটিতে উঠে ২৪ রান। এ সময় আবারও হাজির তাসকিন।
তার বেরিয়ে যাওয়া সুইং ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ভুল করেন প্রিটোরিয়াস (২০)। বল এজ হয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকুরের গ্লাভসে। ২৯তম ওভারে ফের জোড়া আঘাত তাসকিনের। এবার তিন বলের ব্যবধানে ডেভিড মিলার (১৬) আর কাগিসো রাবাদাকে (৪) উইকেটরক্ষক মুশফিকের ক্যাচ বানান তিনি। পূরণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফার। প্রোটিয়ারা অল্প রানে গুটিয়ে যাচ্ছে, সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছিল তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ের পরই। তবে ৩৬তম ওভারে শরিফুলের বলে ইয়াসির রাব্বি মিডঅনে কেশভ মহারাজের ক্যাচ ফেলে দিলে কিছুটা দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছিল। কারণ মহারাজ যে সেট হয়ে গিয়েছিলেন অনেকটাই। ক্যাচ ড্রপের সময় ছিলেন ২৭ রানে। তবে সেই ড্রপের মাশুল দিতে হয়নি বাংলাদেশকে। সাকিবের করা পরের ওভারেই রানআউটের ফাঁদে পড়েন মহারাজ (২৮)। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১৫৪ রানে। নয় ওভারে ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট পান সাকিব। একটি করে উইকেট নেন মেহেদি মিরাজ ও শরিফুল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।