নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কী অবিশ্বাস্য এক রূপকথা লিখে ফেললেন আফিফ ও মিরাজ! কেউ ভাবেনি বাংলাদেশ জিতবে! ১৮ রানের মধ্যে যখন লিটন-তামিমের পর মুশফিক আর সাকিবও ফিরে গেলেন, তখন বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে হাসাহাসিই হয়েছে। ৪৫ রানের মধ্যে যখন আরও দুই উইকেট গেল, তখন তো বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড নিয়ে ঘাঁটাঘাটি শুরু হয়েছে। ২১৬ রানের লক্ষ্য? ও নিয়ে তখন কে ভাবে! ভাবতে বাধ্য করলেন দুই তরুন- আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা দুই ব্যাটসম্যান গড়েছেন রেকর্ড জুটি। তাদের ব্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছে অবিশ^াস্য এক জয়। যেন ব্যাটিং শেখালেন গোটা বাংলাদেশ দলকেই! গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ২১৫ পেরিয়ে গেছে ৭ বল বাকি থাকতে। দলের বিপর্যয়ে নেমেছিলেন দুজনেই। দেখেশুনে খেলেছেন, কিন্তু কখনোই রানরেট নাগালের বাইরে যেতে দেননি। মিরাজ খেললেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস, ৮ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতককেই স্মরণীয় বানিয়ে রাখলেন আফিফ। বাংলাদেশ এক শ পেরোলো, দেড় শ, দুজনের জুটিতে এক শ হলো। দুজনের জুটি রেকর্ডই গড়ল। শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য রূপকথায় শেষ শব্দ হয়ে এল আফিফের ব্যাটের চার। ৭ বল হাতে রেখেই জিতে গেল বাংলাদেশ। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে এটি বাংলাদেশের নবম জয়। আফগানদের প্রথম হার।
জিততে হলে করতে হবে ২১৬। এই লক্ষ্যে শুরুটা হওয়া উচিত কেমন? ইনিংসটা যেহেতু ৩০০ বলের, ওভারপ্রতি তুলতে হবে ৪.৩২ রান করে। অর্থাৎ, একটু সময় নিয়ে উইকেটে থিতু হওয়াই যায়। এই লক্ষ্য তাড়া করে জিততে স্বাভাবিক ব্যাটিংটাই যথেষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশ কি সেভাবে জিততে পেরেছে? সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে সাত ও আটে নামা দুই তরুণের ব্যাটে ভর করে। অথচ, বাংলাদেশ দলে এমন চারজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, যাদের সম্মিলিত ওয়ানডে ম্যাচসংখ্যা অন্য যেকোনো দলের জন্য ঈর্ষণীয়। বর্তমানে অন্য কোনো দলে কি একসঙ্গে এমন চার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দেখা যায়- সে প্রশ্ন উঠতে পারে। বলা হচ্ছে, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহর কথা। চারজনের সম্মিলিত ওয়ানডে ম্যাচসংখ্যা আফগানিস্তানের এই দলে খেলা সবার ম্যাচসংখ্যার চেয়ে বেশি। কত বেশি? তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ মিলে খেলেছেন (এই ম্যাচসহ) মোট ৮৬৫ ম্যাচ। ওদিকে আফগানিস্তান দলের সবাই মিলে খেলেছেন ৫৪১ ম্যাচ। পার্থক্যটা ৩২৪ ম্যাচের! কিন্তু ম্যাচে বাংলাদেশের রান তাড়ায় কি এই ‘চতুষ্টয়’ অভিজ্ঞতার পার্থক্যের ছাপ রাখতে পারলেন? একেবারে যে পারেননি তা নয়। ২১৫ রান তাড়ায় বাংলাদেশের জয়ের সুবাস পাওয়ায় তাঁদের সম্মিলিত অবদান ২৯। খটকা লাগলেও এ নিয়ে পড়ে থাকার কিছু নেই। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, বাজে দিন যেতেই পারে। তবে এ কথাও সত্য, আজ অন্তত বাংলাদেশের এই চার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রান তাড়ায় প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ২২০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতালব্ধ তামিম ৮ বলে ৮ রান করে আউট হন। ফজলেহক ফারুকির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮বার এলবিডব্লু হন তামিম। ২২৮ ম্যাচ খেলায় অভিজ্ঞতাপুষ্ট মুশফিকও ৩ রান করে একইভাবে আউট হন। ফারুকির ভেতরে ঢোকানো বল খেলতে পারেননি দুজন। ২১৬ ম্যাচ খেলা সাকিব ১০ রান করে স্টাম্পে বল টেনে আনেন। আর মাহমুদউল্লাহ? ২০১ ম্যাচ খেলে ফেললেও লেগ স্পিনে চিরায়ত দুর্বলতাটুকু কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ৮ রান করে রশিদ খানের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন খোঁচা মেরে। সেই তুলনায় দুই নবীণ যেন বাটিংটা শেখালেন অগ্রজদের। ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে হাল ধরে দলকে টেনেছেন আফিফ-মিরাজ। বয়সেও পিঠা-পিঠি দুই তরুন কেবল ক্রিজ আঁকড়ে পড়েই থাকলেন না, রানও বাড়িয়েছেন সময়ের দাবী মিটিয়ে। সপ্তম উইকেট জুটিতে ৫০ রান এসেছে ৫৮ বলে। তাদের যে কেউ আউট হলেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার ভয়কে জয় করে ৬৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন আফিফ।
অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর আফিফ একটু ধীরলয়ে খেলেছেন। মিরাজ দায়িত্ব নেন আগ্রাসনের। পরপর দুই চারে ছাড়িয়ে যান নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস (৫১)। ৭৯ বলে ফিফটি আসে চমৎকার এক পুল থেকে পাওয়া বাউন্ডারিতে। ১৪৩ বলে তারা স্পর্শ করেন জুটির সেঞ্চুরি। পরে আর থামতে হয়নি তাদের। চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়া আফিফ অপরাজিত থাকেন ৯৩ রানে। তার ১১৫ বলের অসাধারণ ইনিংস গড়া ১১ চার ও এক ছক্কায়। বল হাতে আলো ছড়ানো মিরাজ ৯ চারে ১২০ বলে করেন ৮১ রান। দলের চরম বিপর্যয়ে দুর্দান্ত এক জুটিতে রেকর্ডও গড়েছেন আফিফ-মিরাজ। ওয়ানডেতে সপ্তম উইকেটে তাদের অপরাজিত ১৭৪ রানের জুটিই এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। তারা পেছনে ফেলেছেন ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের জুটিতে। ২০১৮ সালে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েছিলেন ইমরুল-সাইফুদ্দিন। এদিন ৩০০ বলের ম্যাচের ২২৫ বলই খেলেছেন আফিফ-মিরাজ। রেকর্ড-টেকর্ড সব ছাপিয়ে যেন সিনিয়রদের বেহিসেবি ব্যাটিংয়ের দায় চুকালেন এই দুই নবীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।