Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রুগ্ন ব্যাটিংয়ে দৈন্যতার হার

আনুষ্ঠানিকতা সারতে খুব বেশি সময় নিল না পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

পঞ্চম দিনে উত্তাপ, উত্তেজনা বা দোলাচলের কিছুই ছিল না। পাকিস্তানের জন্য বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতার। সেই আনুষ্ঠানিকতার কাজ খুব বেশি কঠিনও করতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ওপেনারকে অবশ্য আউট করা গেছে। তাতে কেবল কমেছে হারের ব্যবধান। গতকাল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। বাকি ৯৩ রান তুলতে তারা খেলেছে ২৫.৩ ওভার। লাঞ্চের আগেই শেষ হয়ে গেছে ম্যাচ।
শেষ দিন সকালে তেমন কোন ঘটনার আভাস ছিল না। তবে সকালের সবচেয়ে বড় ঘটনা প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা আবিদ আলির দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আউট হওয়া। পাকিস্তানের এই ওপেনার আউট হন ৯১ রানে। আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক করেন ৭৩ রান। ২০২ তাড়ায় এই দুজনই খেলা করে দেন ম্যাড়ম্যাড়ে। বিনা উইকেটে ১০৯ রান নিয়ে দিন শুরুর পর আবিদ-আবদুল্লাহ শফিক মিলে খেলতে থাকেন সাবলীল ক্রিকেট। প্রথম দুই ওভার দেখেশুনে খেলার পর খোলস ছাড়েন তারা। ঝুঁকিহীন পথে আনতে থাকেন বাউন্ডারি, স্কোর বাড়তে থাকে সহজেই। দেড়শো পেরিয়ে যাওয়ার পর এই ওপেনিং জুটি অবশ্য ভাঙতে পারে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে বিবর্ণ থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিনে এলবিডবিøউ হয়ে বিদায় নেন শফিক। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করে এই অভিষিক্ত ওপেনার দ্বিতীয় ইনিংসেও করেন ফিফটি। আউট হন ১২৯ বলে ৭৩ করে।
অভিজ্ঞ আজহার আলিকে নিয়ে বাকি পথে এগুনো আবিদের ব্যক্তিগত মাইলফলকের হাতছানি ছিল। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার খুব কাছে ছিলেন তিনি। তবে তাইজুল ইসলাম তা হতে দেননি। তার বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউতে কাটা পড়েন আবিদ। ১৪৮ বলের ইনিংসে ১২ চারে ৯১ আসে তার ব্যাটে। বাকি কাজ দ্রæতই শেষ করেন আজহার আলি ও বাবর আজম।
খেলার ফল অনেকটা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল আগের দিনই। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ৮৩ রানের লিডটা খুব বেশি যে বড় করা হয়নি বাংলাদেশের। লিটন দাস ও ইয়াসির আলির ব্যাটে ২০২ রানের যে লক্ষ্যে দেওয়া গিয়েছিল পাকিস্তানি ওপেনাররা খেলতে নেমে সেটা করে দেন সহজ। উইকেটের আচরণ খুব একটা বিপদজনক না হওয়ায় বাংলাদেশের বোলাররা মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে দারুণ বল করা তাইজুল ইসলামও তার ত‚ণ থেকে বের করতে পারেননি বিশেষ কোন ডেলিভারি। মুমিনুল হকের দলকেও তাই হারতে হয় বড় ব্যবধানে। অথচ প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড নিয়ে একটা সময় জেতার আশাও জাগিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। টেস্টের টেম্পারমেন্ট, স্কিল আর অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্বাগতিকদের লাগাম ধরে রাখতে দেয়নি।
চট্টগ্রাম টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে খুব বেশি বাজি ধরার লোক ছিল না। সেটি টেস্টে বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ফর্ম আর পাকিস্তান দলের শক্তিমত্তা বিচার করেই। কিন্তু মাঠে নেমে বাংলাদেশ দল কিছুটা হলেও হিসাব এলোমেলো করে দিয়েছে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে চার দিন পাকিস্তান দলের চোখে চোখ রেখে লড়েছে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা আধিপত্য করেছেন পাকিস্তানি বোলারদের ওপর। কিন্তু লড়াই করার এই টেস্টও সুযোগ হাতছাড়া করার দোষে দুষ্ট। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়তো চট্টগ্রামে পাকিস্তানকে আরও কঠিন সময় দিতে পারত বাংলাদেশ।
টপ অর্ডারকে বাদ দিয়েই চট্টগ্রাম টেস্টের গল্প লিখতে হবে। দুই ইনিংসেই যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডাররা। প্রথম ইনিংসে শীর্ষ চার ব্যাটসম্যান দ্রæত আউট হয়ে যাওয়ার পরও মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের দুর্দান্ত এক জুটিতে বাংলাদেশ সংগ্রহটাকে ৩৩০-এ নিতে পেরেছিল। পরের দিকে খুব ভালো ব্যাটিং না হলেও টপ অর্ডারের ব্যর্থতার আক্ষেপটা বড় হয়েই দেখা দিয়েছে। সাদমান-মুমিনুল-সাইফ-নাজমুলদের কেউ একটু ভালো করলেই সংগ্রহটা আরও বাড়তে পারত। পাকিস্তানও আরও বড় রানের বোঝা নিয়ে ব্যাটিং করত।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারও টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ইনিংসেও লিটন দাঁড়িয়ে পড়ে কিছুটা লড়াইয়ের রসদ জুগিয়েছেন। অভিষিক্ত ইয়াসির আলীও আহত হয়ে মাঠ ত্যাগের আগে ভালো ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটিং প্রচÐ বাজে হওয়ায় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে সাদমান-সাইফ-মুমিনুল-নাজমুলদের ব্যর্থতা অমার্জনীয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে লিটনের সঙ্গে নুরুলের জুটি বাংলাদেশের লিড ১৯৭ রানে নিয়ে যায়। দুজন যেভাবে খেলছিলেন, সেই হিসাবে বাংলাদেশের লিড সহজেই আড়াই শ ছাড়াতে পারত। কিন্তু ম্যাচের এ অবস্থায় কিনা নুরুল ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন সীমানায় দাঁড়ানো ফিল্ডারকে ক্যাচ দিয়ে। ৩৮ রানে ভাঙা জুটিটি বাংলাদেশ দলের গড়া সম্ভাবনার সেতুও ভেঙে দেয়। এরপর বাংলাদেশ আর মাত্র ৪ রান যোগ করতেই বাকি ৪ উইকেট হারায়। ম্যাচের চার সেশন বাকি থাকতেই মাত্র ২০২ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামে পাকিস্তান। যা পঞ্চম দিন সকালের সেশনে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই তাড়া করে বাবর আজমের দল।
আরেকটি টেস্ট, আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া আর একরাশ ভুলের গল্প- এভাবে আর কত দিন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৩৩০ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ৫৬.২ ওভারে ১৫৭। পাকিস্তান : ২৮৬ ও দ্বিতীয় ইনিংস : (লক্ষ্য ২০২) ৫৮.৩ ওভারে ২০৩/২ (আবিদ ৯১, শফিক ৭৩, আজহার ২৪*, বাবর ১৩*; তাইজুল ১/৮৯, ইবাদত ০/৩০, মিরাজ ১/৫৯, জায়েদ ০/২৩)। ফল : পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আবিদ আলি। সিরিজ : দুই ম্যাচে প্রথমটি জিতে এগিয়ে পাকিস্তান।

 

 



 

Show all comments
  • সবুজ ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
    খেলোয়ারদের সুযোগ সুবিধা কমানো হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ