নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এবারের বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে দীর্ঘ ৬১৮ দিন পর ফিরল মাঠের প্রাণ- দর্শক। ৫০ শতাংশ হলেও ভক্ত-সমর্থকদের নিবেদনে ঘাটতি ছিল না এতটুকু। নিজেদের কণ্ঠ দ্বিগুণ করে অর্ধেক গ্যালারিকে তারা দিয়েছিলেন পূর্ণতা। তবে আরো একবার নিবেদনে ঘাটতি দেখা গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। ক্রিকেটারদের এটা নিয়মিত চিত্র, দর্শকদেরও যেন নিয়তি তাই। তারপরও গাঁটের টাকা খরচ করে, শিক্ষার্থীরা হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে, চাকুরেরা অফিসে হাড়ভাঙা খাটুনির পরও নিজেদের মূল্যবান পারিবারিক সময়টুকু আর অসহনীয় জ্যামের হ্যাপা পেড়িয়ে যখন মিরপুর স্টেডিয়ামে যান দেশের খেলা দেখতে, সেখানেও তাদের নিয়তি- অসম্মান আর যন্ত্রণা।
দু’দিন আগে মুস্তাফিজুর রহমানের এক ‘পাগলাটে ভক্ত’ নিরাপত্তা বেষ্টনি, জৈব সুরক্ষা বলয় ভেদ করে ঢুকে পড়েছিলেন মাঠে। এটা তাদের আবেগ আর ভালোবাসার নির্মল বহিঃপ্রকাশ। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের সেই আবেগ ছোঁয়নি এতটুকু। রাসের নামের সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে তার ভালোবাসার মূল্য মেটাতে হয়েছে গারদবাস করে। এটাই যেন তাদের নিয়তি। তবে, করোনাকালের জৈব-সুরক্ষা বলয়ের বিধিনিষেধ না হয় সমর্থকদের ভালোবাসার কাছে হেরে গেছে, কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী কিংবা দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবি কি পারে নিজেদের দায় এড়াতে?
শুধু বাংলাদেশেই নয়, এমন ঘটনা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই হরহামেশাই হচ্ছে, হবেও! এটাই ক্রীড়াপ্রেম। এমন প্রেম এর আগেও দেখেছে দেশের ক্রিকেট। এই শেরে বাংলায় এর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজার এক ভক্ত মাঠে ঢুকে পড়েন। সিলেট স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েন মুশফিকের ভক্ত। আর চট্টগ্রামের মাঠে ঢুকেছিলেন সাকিব আল হাসানের ভক্ত। এবার জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে একজন ঢুকে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা উচ্চকিতই হবে। তারপরও, সমর্থকদের ভালোবাসার প্রতিদান কি আমরা সত্যিকার অর্থেই দিতে পারছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা? হারের পর হারের গøানিতে ডুবতে থাকা দেশের ক্রিকেটকে তাদের ভালোবাসায়ই যে টিকে আছে, সেটিও যে আমরা ভুলে যাই। আর তাতে আক্ষেপের সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে সমর্থকদের ক্ষোভও। এবারের সিরিজ দেখতে গিয়ে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, তা জানিয়ে আতিক মোহাম্মদ শরীফ নামে এক সমর্থক চিঠি পাঠিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এক দৈনিকে। সেটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো সেটি-
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা দেখা অনেকের মতো আমারও একটা শখ। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং বিপিএল মিলিয়ে প্রায় ৯৮টি ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছি। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর বিরতির পর গতকাল (পরশু) আবারও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গেছি। তবে এখানে মাঠের খেলা বাদ দিয়ে আমি অন্য আলোচনায় যেতে চাই। যাদেরকে বলা হয় মাঠের প্রাণ, সেই দর্শকদের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভাবনা আসলে কতটা?
শুরুতেই আসি টিকিট কেনা প্রসঙ্গে। দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে গোটা জাতির কত গর্ব, অথচ টিকিট বিক্রি করতে গিয়ে বিসিবির ভরসা এখনো সেই বাঁশ! বাঁশের খাঁচা তৈরি করেই চলছে সনাতন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি। করোনার আতঙ্ক ভুলে টিকিটের জন্য সারিতে দাঁড়ালাম। তবে সেখানে আসলে খেলা দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে তেমন কেউ দাঁড়াননি, বরং বেশির ভাগ মানুষই এসেছেন দুই পয়সা লাভের আশায় কালোবাজারি করতে। খেলা শুরুর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে গেলে যে কেউ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন।
আমার টিকিট ১ নম্বর গেটের, কিন্তু দর্শকের সারি এত দীর্ঘ ছিল যে ৪ নম্বর গেটের কাছে সারিতে দাঁড়াতে হলো। এত দীর্ঘ সারি পার হতে হতে ভাবছিলাম, হয়তো টিকিট স্ক্যান বা কোভিডের টিকা কার্ড দেখা হচ্ছে বলেই এমন চাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাছে গিয়ে অবাক হলাম। এসবের কোনো বালাই-ই নেই! অর্ধেক গেট বন্ধ রেখে দর্শক মাঠে ঢোকার ব্যবস্থা করাতেই আমাদের চাপ আর ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়েছে।
মাঠে ঢোকার সময় যাঁরা দর্শকের টিকিট চেক করবেন, তল্লাশি করবেন, সেই নিরাপত্তাকর্মীদের আচরণে মনে হলো, তারা যেন দয়া করেই আমাদের মাঠে ঢুকতে দিচ্ছেন! যাহোক, এত প্রতিক‚লতা পেরিয়ে গ্যালারিতে ঢোকার পর বিপত্তি আরও বেড়ে গেল। কোভিডের জন্য গ্যালারিতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হলেও নিচের গ্যালারি ফাঁকা রাখায় দর্শকের চাপ বেড়ে যায় ওপরের দিকে। কোথাও গিয়ে বসবেন, সে উপায় নেই। দুই বছর কেউ মাঠে না যাওয়ায় বিসিবি সম্ভবত এদিকটাতে নজর দিতেই ভুলে গেছে। ধুলোর আস্তর জমেছে আসনগুলোতে। গ্যালারিতে দর্শক ঢোকানো হয়েছে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করেই। বিসিবি হয়তো ভেবেছে, এত দিন পর মাঠে এসে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছে। গ্যালারি পরিষ্কার করার কাজটাও দর্শকেরাই করে নেবেন।
গ্যালারির আসনগুলোও বেহাল। ৩০০ টাকায় টিকিট কেটে যাঁরা খেলা দেখতে ঢুকেছেন, তাঁদের কপালে এবার জুটেছে ভাঙা আসন। অনেক আসনই বসার অনুপযোগী হওয়ায় দর্শকদের বড় একটা অংশ খেলা দেখেছে দাঁড়িয়ে বা গ্যালারির সিঁড়িতে বসে। এর মধ্যে যদি কারও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ। আর গ্যালারিতে নিম্নমানের খাবারও যে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়, তাতে মনে হয় দর্শকেরা যেন মানুষই নন! এক বোতল পানি বিক্রি হচ্ছিল নির্ধারিত ম‚ল্যের প্রায় তিন গুণ দামে।
এত কষ্ট আর মানসিক নির্যাতন সহ্য করে বাংলাদেশের হারই দেখতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, বিসিবির ৯০০ কোটি টাকা সঞ্চয়ে দর্শকদেরও তো বড় অবদান আছে। আর মাঠে কিনা সেই দর্শকের অধিকারই সবচেয়ে অবহেলিত! হতে পারে, মিরপুরে খেলা দেখতে যাওয়াটাই একটা অপরাধ। তারপরও হয়তো ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জানাতে সেই ধুলোমাখা গ্যালারিতেই যাব। আমরা, মানে দর্শকেরাই যে ক্রিকেটের প্রাণ!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।