Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরেকটি ব্যর্থতার কাব্য

সিরিজ পাকিস্তানের বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১০৮/৭ পাকিস্তান : ১৮.১ ওভারে ১০৯/২ ফল : পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ডিপ মিড উইকেটে ফখর জামানের সহজ ক্যাচটা নিতে গিয়ে এমনভাবে গড়বড় করলেন সাইফ হাসান, শেষ পর্যন্ত সেটা হলো চার। ফখরের রান তখন ছিল ২৬। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকলেন ৫১ বলে ৫৭ রান করে। পরে আরও একবার উইকেটের সুযোগ তৈরি করেও উইকেট পেলেন না সেই আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। এবার শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। বিস্ময়করভাবে তা ফেলে দেন তাসকিন আহমেদ। ৩৮ রানে জীবন পাওয়া পাক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যন অবশ্য ফিরেছেন এক রান যোগ করেই। তবে ফখরের ওই ক্যাচটা সাইফ সে সময় নিলে ম্যাচের চিত্রটা বদলে যেত, সেটা অবশ্য জোর গলায় বলার উপায় নেই মোটেও। তৃতীয় ওভারে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ফেরার পরও যেমন আদতে বদলায়নি কিছুই।

আগের দিনের ম্যাচের সঙ্গে চিত্রনাট্যে বদল শুধু এটুকুই, ম্যাচটা নিদেনপক্ষে রোমাঞ্চও জাগাতে পারেনি। আগের দিন শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পর শুরুতে বোলাররা আশা জাগিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত সেটা উবে গিয়েছিল। গতকাল সে আশাও জাগেনি। ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরে বসেছে প্রথম ইনিংসেই! স্রেফ ১০৮ রানের পুঁজি নিয়ে যা ওয়ার কথা ছিল, হলোই তা-ই। লড়াই সেভাবে জমাতে পারল না বাংলাদেশ। ৮ উইকেটের জয়ে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করে ফেলল পাকিস্তান। শুরুতে বাবর আজমকে হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও ফখর জামানের ৮৫ রানের জুটিতে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় পাকিস্তান। হায়দার আলিকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন ফখর। ৫১ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন ফখর। এই নিয়ে টানা ৭ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। দেশের মাঠে টানা তিনটি সিরিজ জয়ের পর এবার সিরিজ হারের স্বাদও পেতে হলো।

গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জন্য ছিল আরেকটি হতাশার বিকেল। যদিও সহজ রান তাড়ায় নেমে সতর্ক শুরুর পর তৃতীয় ওভারে গিয়ে পাকিস্তানকে ধাক্কাটা দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আগের দিন তাসকিন আহমেদের বল স্টাম্পে টেনে যেভাবে বোল্ড হয়েছিলেন বাবর আজম। বোলার বদলালেই আউট হলেন সেই একই ধরণে। ১২ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তানকে পরে এক ওভারে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু দারুণ বল করলেও মেলেনি উইকেট। সেই ঝাঁজ সামলে ক্রিজে থিতু হয়ে যান রিজওয়ান-ফখর। রানের চাপ না থাকায় তাদের কাজটাও ছিল না কঠিন।

প্রথম ম্যাচে একাদশে থেকেও শেষ ওভারের আগে বল পাননি লেগ স্পিনার বিপ্লব। এবার নবম ওভারে বোলিংয়ে আসেন তিনি। পেতে পারতেন উইকেটও। ২৬ রানে থাকা বাঁহাতি ফখরের সহজ ক্যাচ ডিপ মিডউইকেটে ফেলে চার বানিয়ে দেন সাইফ হাসান। পরে তার বলে পড়ে ৩৮ রানে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচও। যদিও ওই ওভারেই রিজওয়ানকে আউট করে উইকেটের দেখা পান বিপ্লব। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের কেবল আনুষ্ঠানিকতাটুকুই বাকি। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ঠিক আগের দিনের মতই ব্যর্থ। এবার শুরুতে ফিরেছেন সাইফ হাসান। নিজের জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এই তরুণ প্রথম বলেই ফিরে যান। শাহীনের ভেতরে ঢোকা বল পুরোপুরি পরাস্ত হন। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় ওভারের ঠিক আগের ম্যাচের রিপ্লে দেখিয়ে বিদায় নাঈমের। মোহাম্মদ ওয়াসিমের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন সিøপে। ৫ রানেই ২ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের।

চার নম্বরে নেমে আফিফ হোসেন শাহিনের মুখোমুখি প্রথম বলেই ফ্লিক করে ছক্কা উড়ান। পরের বলেই ঘটে দৃষ্টিকটু ঘটনা। ডিফেন্সিভ শট খেলে ক্রিজেই থাকা আফিফকে জোরালো থ্রো করেন অকারণে। আঘাত পেয়ে আফিফ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। উঠে দাঁড়িয়ে আরেকটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন আফিফ। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। শাদাব খানের বলে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় সহজ ক্যাচে ফেরেন ২০ বলে ২০ রান করে। শান্ত শুরু থেকেই খেলছিলেন সাবলীল। চনমনে মেজাজ দেখা যাচ্ছিল তার ব্যাটে। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশের ৬৪ রানের ৩৪ রানেই আসে তার ব্যাট থেকে। তবে আরেক দফা হতাশ করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ক্রিজে এসেই ধুঁকতে থাকেন তিনি। মাঝে ওভারে খেলে ফেলেন অনেকগুলো ডট বল। তা পুষাতে পারেননি পরে। ১৫ বলে ১২ করা বাংলাদেশ অধিনায়কে হারিস রউফের বলে ক্যাচ দিন কিপারের হাতে।

দারুণ খেলতে থাকা শান্তর ইতিও পরের ওভারে। শাদাবের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোলারের হাতেই উঠিয়ে দেন ক্যাচ। দুর্দান্ত ডাইভে সেটি তালুবন্দী করেন শাদাব। ফেরার সিরিজে শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ৪০ রান। আগের দিন ঝড় তোলা শেখ মেহেদী এদিন আর পারেননি। নুরুল হাসান সোহানও ছিল ম্রিয়মান। বাংলাদেশ তাই কোনমতে পার করে তিন অঙ্ক। আগের ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে এসেছিল কেবল ৪০ রান, পরের ১০ ওভারে সেটা পুষিয়ে নেওয়া গিয়েছিল। এদিন প্রথম ১০ ওভারে ৬৪ এলেও, পরের ১০ ওভারে এলো কেবল ৪৪ রান। এরপর এই ম্যাচ নিয়ে আর আশা করাটাও যে ছিল বাড়াবাড়ি!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ