Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড় জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

সাকিবের ৫ উইকেট

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ৮:১৯ পিএম | আপডেট : ৯:০১ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২১

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বল হাতে রুদ্ররূপে হাজির বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর তাতেই তছনছ জিম্বাবুয়ের ইনিংস। শুক্রবার হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যেমন দরকার ছিল তেমন সূচনা পায়নি জিম্বাবুয়ে। টাইগার পেসারদের তোপে শুরুতেই বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। শুরুটা সাইফুদ্দিন করলে শেষ কাজটা সারেন সাকিব। ফলে শেষ পর্যন্ত ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। আর তাতে ১৫৫ রানের বড় জয় পেয়ে সিরিজ শুরু করলো টাইগাররা। এটা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের। এর আগে ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১২১ রানের জয় ছিল সাকিবদের।

ম্যাচে লিটন দাসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর ঘূর্ণিজাদুতে সাকিব শিকার করেন ৫ উইকেট। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্বাগতিক দলের মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে নিজেদের স্কোর তুলতে সক্ষম হন। একমাত্র জিম্বাবুয়েন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবা ছাড়া আর কেউ জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে চাকাবাকেও বেশি দূর যেতে দেননি সাকিব। হাফসেঞ্চুরির পরই বিদায় নেন জিম্বাবুয়ে উইকেটরক্ষক। চাকাবা ৫১ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ের মারে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করে সাকিবের বলে মিরাজের ক্যাচে পরিণত হওয়ার পর জিম্বাবুয়ের সব আশা শেষ হয়ে যায়। অধিনায়ক টেইলর করেন ৩১ বলে ২৪ রান। তার ইনিংসে ৩টি চারের মার ছিল। ডিওনের সংগ্রহ ২৪ বলে ৩ চারের মারে ১৮ রান। 

সাকিব ৯.৫ ওভার বল করে মাত্র ৩০ রান খরচায় ৫টি উইকেট শিকার করেন। তাসকিন, সাইফুদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম পান ১টি করে উইকেট।

এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। নিজেদের ইনিংস খেলতে নেমে চাপের মুখে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে লড়াকু সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন লিটন দাস। ৯ উইকেটে ২৭৬ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে প্রথম দুই ওভারে প্রতিপক্ষ পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি ও টেন্ডাই চাতারার বিপক্ষে সুবিধাই করতে পারেননি তামিম ও লিটন। বেশ কয়েকটি বলে আউটের সম্ভাবনা জাগান এ দুই পেসার। অল্পের জন্য বেঁচে যান দুই টাইগার ওপেনার। তবে প্রথম দুই ওভার থেকে কোনো রান পায়নি বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি অফ স্ট্যাম্পের খানিক বাইরে করেছিলেন মুজারাবানি। এক্সট্রা বাউন্স থাকা ডেলিভারিটি কাট করতে  চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৯তম বারের মতো শূন্য রানে আউট হন তামিম। যা কি না বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড। শুধু তাই নয়, তিন ফরম্যাট মিলেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ডাকের মালিক এখন তামিম।

অধিনায়কের বিদায়ের পর তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মারেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ইনিংসে এটিই প্রথম রান। পরের ওভারে লেগসাইডে বিশাল ওয়াইডে বোনাস বাউন্ডারি দেন টেন্ডাই চাতারা। তামিম-লিটন সুবিধা করতে না পারলেও, শুরু থেকেই উইকেটে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকেন সাকিব। বিশেষ করে চাতারার ওভারে কাভার ড্রাইভে হাঁকান দর্শনীয় এক চার। কিন্তু  বেশিক্ষণ ব্যাট চালাতে পারেননি সাকিব। ইনিংসের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুজুরাবানির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৩ চারের মারে ২৫ বলে ১৯ রান করেন তিনি। তামিমের মতোই সাকিবের আউটের ডেলিভারিতেও ছিল এক্সট্রা বাউন্স। তবে ঠিকঠাক ব্যাটে নিতে পেরেছিলেন সাকিব। কিন্তু তার ব্যাটে ডাবল টাচ লেগে বল চলে যায় শর্ট এক্সট্রা কাভারে দাঁড়ানো রায়ান বার্লের হাতে।

সাকিব ফেরার পর মিঠুনের শুরুটাও ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন অফ ড্রাইভের পর জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা শটে কট বিহাইন্ড হন তিনি (১৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৯)। মিঠুনের মতো প্রায় একইভাবে সাজঘরে ফিরেন মোসাদ্দেক। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড এনগারাভার বল ফুট মুভমেন্ট ছাড়াই অফসাইডে খেলার  চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবার গ্লাভসে। ১৫ বল খেলে করেন মাত্র ৫ রান। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে লিটন দাস আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রতিরোধ দলকে এনে দেয় বড় পুঁজি। দারুণ খেলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন লিটন। মাহমুদউল্লাহ তার প্রথম ১৮ রান তুলেন কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই। ছক্কা মেরে পৌঁছান বিশের ঘরে। উইকেটে থিতু হওয়ার পর তারা দুজনই হাত খুলে মারেন। টানা পাঁচ ওভার আটের উপর করে রান নেন। এ জুটি  সেঞ্চুরির কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহকে স্লো বাউন্সারে বিভ্রান্ত করে উইকেট তুলে নেন লুক জঙ্গি। লিটনের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহ করেন ৩৩। ৫২ বলে ১ ছক্কায় এই রান করেন তিনি। সঙ্গী হারিয়েও লিটন তার মনোসংযোগ হারাননি। দেখেশুনে  খেলে ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার এবং বরাবরের মতো স্ট্রাইকরেটের কথা মাথায় রেখেই। জিম্বাবুয়ে বোধ হয় তার পছন্দের প্রতিপক্ষ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চার সেঞ্চুরি হলো তার, এর মধ্যে তিনটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে হারারেতে শুক্রবার লিটন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি করেছেন, তাতে আলাদা প্রশংসা পেতেই পারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার চোখ ধাঁধানো ইনিংসটির ইতি টানেন রিচার্ড এনগারাভা। জিম্বাবুইয়ান এই পেসারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হন লিটন। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ভুল করেননি বদলি ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ১১৪ বলে লিটনের ১০২ রানের ইনিংসটি ছিল ৮ বাউন্ডারিতে সাজানো।

এরপর আফিফ হোসেন ধ্রব ও মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে গড়েন ৫৮ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। ৪৮ ওভার পর্যন্ত তারা দেখেশুনেই  খেলেছেন। কিন্তু লুক জংউইর করা ৪৯তম ওভারে টানা তিন বলে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ কভারে ক্যাচ হন মিরাজ (২৫ বলে ২৬)। পরের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড আফিফ। হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো এ বাঁহাতি ৩৫ বল খেলে ১ চার আর ২ ছক্কায় করেন ৪৫ রান। জংউইর পরের ডেলিভারিতেও উইকেট। এবার দুই নিতে গিয়ে রানআউট হন তাসকিন আহমেদ (১)।

তবে বাংলাদেশকে অলআউট করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৬ বলে এক বাউন্ডারিতে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল লুক জংউই। ৫১ রানে ৩টি উইকেট শিকার করেন তিনি। ২টি করে উইকেট নেন ব্লেসিং মুজারাবানি আর রিচার্ড এনগারাভার। ম্যাচসেরার পুরস্কার পান লিটন দাস।



 

Show all comments
  • Ahmed hossain khan ১৬ জুলাই, ২০২১, ৮:২৫ পিএম says : 0
    Durdanto batting korar jonno liton das k donnobad.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ