নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথম দফায় যখন বৃষ্টি হানা দিল মুশফিকুর রহিম তখন সেঞ্চুরি থেকে ১৫ রান দ‚রে। বৃষ্টি শেষে ম্যাচ গড়াল মাত্র ২ ওভার। ঝড়ো ব্যাটে ওই ২ ওভারে ১১ রান তুলে নিয়ে পৌঁছে গেলেন সেঞ্চুরি থেকে নিঃশ্বাস দ‚রত্বে। ক্রিজে তখন ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ারের ৮ম ওয়ানডে সেঞ্চুরির প্রহর গুনছেন মুশি। কিন্তু হল না। আবার বৃষ্টি হানা দিলে এক দৌঁড়ে চলে যান ড্রেসিং রুমে। প্রায় ৪০ মিনিট পরে আবার খেলা গড়াল। তবে এবার আর কালক্ষেপন নয়। দুশমন্থ চামেরাকে ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে ঠেলে দিয়ে দিয়ে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে গেলেন লাল সবুজের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ব্যাটার।
সেঞ্চুরির পথে তিনি বল খেলেছেন ১১৩ টি। যেখানে ¯্রফে ৬টি চারের মার ছিল, ছিল না কোন ছয়ের মার। ৮৭.৬১ স্ট্রাইকে রেটে তিনি এই তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেয়েছেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন তখন নামের পাশে ১২৭ বলে জ্বলজ্বলে ১২৫। দলের রানের অর্ধেকেরও বেশি একাই করেছেন বহু ম্যাচের এই কাÐারী।
‘আমি রাসেল কিংবা পোলার্ড নই’- একদিন আগে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিজের সামর্থ্যরে কথা জানিয়ে বলেছিলেন মুশফিক। ক্যারিবীয় দুই ব্যাটসম্যানের মতো পাওয়ার হিটিংয়ে পারদর্শী নন তিনি। তবে দলের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করার ম‚ল কাজটা নিয়মিতই করছেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই দলের বিপর্যয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভুল হয়নি।
আগের ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচে আরও কঠিন পরিস্থিতির সামনে ছিলেন এই উইকেটকিপার। ওই অবস্থা থেকে ঠাÐা মাথায় খেলেছেন দারুণ একটি ইনিংস। দলকে দিয়েছিলেন জয়ের ভিত। গতকাল যখন ব্যাটিংয়ে নামেন টিম বাংলাদেশ তখন ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুকছে। মুশি এসে অবতীর্ণ হলেন ত্রাতার ভুমিকায়। এসেই সঙ্গী হিসেবে পেলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কিন্তু লম্বা সময় ক্রিজের অপর প্রান্তের সতীর্থকে সঙ্গ দিতে পারলেন না মোহাম্মদ মিঠুনের বদলে সুযোগ পাওয়া এই অলরাউন্ডার। নামের পাশে মাত্র ১০ রান যোগ করে ফিরে গেলেন সৈকত। থেকে গেলেন মুশফিক। ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ বেশ খানিকটা সময় অবশ্য মুশিকে সঙ্গ দিলেন। ৯৭ রানের জুটিতে ইনিংসের মেরামত করে দলকে ১৬১ রানের সংগ্রহ পাইয়ে দিলেন দুই অভিজ্ঞ টাইগার। কিন্তু ঠিক তারপরেই সান্দাকানের বলে পা হড়কালেন মাহমুদউল্লাহ। ৪১ রানে থেমে তার উইলো।
ইনিংসের প্রায় পুরোটাই মুশফিক গড়েছেন সিঙ্গেল ও ডাবলসের ওপর ভিত্তি করে। ১৮.২ ওভারে দাসুন শানাকার বলে প্রথম বাউন্ডারি নেন মুশফিক। তখন তার রান ২৭ থেকে ৩১ পৌঁছে। ৩৮তম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে দ্বিতীয় চার মেরে ৭৪-এ পৌঁছান মুশফিক। ৮০’র ঘরে গিয়ে বেশ কিছু বাউন্ডারি মেরেছেন। পাওয়ার হিটিংয়ে স্কিল কম থাকলেও কীভাবে সিঙ্গেল ও ডাবলস নিয়ে স্কোর গড়তে হয়ে, সেটি এই ম্যাচে ভালো করেই দেখালেন মুশফিক।
মুশির সবশেষ সেঞ্চুরিটি এসেছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। নটিংহ্যাম্পশায়ারে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৭ বলে অপরাজিত ১০২ রানের দাপুটে ইনিংস খেলেছিলেন লাল সবুজের এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই বছর বা ৭০৫ দিন। কিন্তু সেঞ্চুরি তার কাছে ক্রমেই দ‚রের বাতিঘর মনে হচ্ছিল। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্যপ্রান্তে যোগ্য সঙ্গীর অভাবে সেবার সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচে নিজের ভুলেই সেঞ্চুরি পাননি। দুর্দান্ত খেলতে থাকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রিভার্স সুইভ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন। অবশেষে দেশের মাটিতে সেই লঙ্কানদের বিপক্ষেই ছোঁয়া হল ম্যাজিক্যাল ফিগার।
এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বরাবরই জ্বলে ওঠে তার ব্যাট। ক্যারিয়ারের ৮ সেঞ্চুরির মধ্যে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই মুশফিকের সর্বোচ্চ দুটি করে সেঞ্চুরি রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রয়েছেন একটি করে সেঞ্চুরি। গতকালের এই সেঞ্চুরির পথে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ হাজার রানও প‚র্ণ করেন মুশফিক।
লঙ্কানদের বিপক্ষে এই সিরিজেও দারুণ ধারাবাহিক মুশফিক। প্রথম ম্যাচে ফিরেছিলেন নামের পাশে ৮৪ রান যোগ করে। তাতে আক্ষেপ ছিল শতক ছোঁয়ার। শতক ছোঁয়ায় সেই আক্ষেপই নিশ্চয়ই ঘুচল। তবে সেটিও অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাসের এক দুর্দান্ত রসায়নে।
এই কীর্তিতে মুশফিক পাশে বসলেন বাঘা বাঘা সব বিশ্ব তারকাদেরও। চারে ব্যাট করে অষ্টম সেঞ্চুরি নিয়ে পাঁচে উঠে গেলেন মুশফিক। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে রস টেলর (১৭৯ ইনিংসে ১৯টি), ১২৫ ইনিংসে ১৫ শতক নিয়ে এরপরই আছেন প্রোটিয়া বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। পরের দুটি নাম শ্রীলঙ্কান দুই কিংবদন্তি অরবিন্দ ডি সিলভা (১৯৭ ইনিংসে ১০টি) ও মাহেলা জয়াবর্ধনের (২১৯ ইনিংসে ৮টি)। এই টালিটিও প্রমাণ দিচ্ছে কতটা ধারাবাহিক আর সময়োপযোগী ব্যাটসম্যান মুশি। এই পজিশনে ৮টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ১০৪ ইনিংসে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।