নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টেস্টের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামা নতুন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরেই বেশ কয়েকবার পঞ্চম দিনের ধস দেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পঞ্চম দিনে ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একই বছরে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে ১২৯ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ২০১৭ সালে ৪১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারানোর ঘটনা আছে বাংলাদেশের।
গতকাল পাল্লেকেলেতেও তেমন কিছু হতে পারত। কিন্তু তামিম ইকবালের প্রতিআক্রমণে তেমন কিছু দেখতে হয়নি। বৃষ্টিতে পঞ্চম দিনের বাকি খেলা বাতিল হওয়ার আগে ২ উইকেটে ১০০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। খেলা আর মাঠে নামানোর অবস্থা না থাকায় স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে আম্পায়াররা ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বৃষ্টির কারণে আগেভাগেই ড্রতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দুই দলকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। মুমিনুলের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৭৩। বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৮৬ বলে ২৩ রান করে।
দেশের বাইরে টানা ৯ টেস্ট হারার পর একটি ম্যাচ বাঁচাতে পারল বাংলাদেশ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম পয়েন্টের দেখাও মিলল। এই টেস্ট থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুদল পাচ্ছে ৩০ পয়েন্ট করে। আট নম্বরে থাকা লঙ্কানদের পয়েন্ট দাঁড়াল ১৫০। বাংলাদেশ ৩০। এই আসরে অবশ্য ফাইনালের হিসাব নিকেশ আগেই ঠিক হয়ে গেছে। ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের ৫৪১ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ৬৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায়। নতুন বলে সুরাঙ্গা লাকমল দ্রæত আউট করেন সাইফ হাসান ও আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি করা নাজমুল হাসানকে। ভয়, শঙ্কার জন্ম হয় তখনই। এই বুঝি আরেকটি পঞ্চম দিনের ধস নামল! ওপেনার তামিম ইকবাল সেটি হতে দেননি। পাল্টা আক্রমণে তিনি দ‚র করেছেন স্নায়ুর চাপ। শ্রীলঙ্কা যা একটু ম্যাচের ফেরার আশায় ছিল, সেই শঙ্কাও দ‚র করেছেন ৫৬ বলে ৭ চার, ২ ছয়ে করা ফিফটিতে। ফিফটি করে ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিকুর রহিমকে, টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এখন আবার তামিমের।
শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণের নেতা সুরাঙ্গা লাকমলের নতুন বলের হুমকি পাত্তাই দেননি এই অভিজ্ঞ বাঁহাতি। বাঁহাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডোর বলে খেলেছেন চোখধাঁধানো ড্রাইভ, পুল। ফার্নান্ডোর এক ওভারেই তিন চার মেরে ফিফটির ওপারে যান এই বাঁহাতি ওপেনার। তবে তার সিংহভাগ রান এসেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফ স্পিনে। ৯৮ বলের ইনিংসে তিনটি ছক্কার তিনটিই খেলেছেন ধনঞ্জয়ার অফ স্পিনে। আর কাভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি তো আছেই। অথচ বাঁহাতি ওপেনারের বিপক্ষে ধনঞ্জয়ার অফ স্পিন লঙ্কান অধিনায়কের আক্রমণের উপায় হওয়ার কথা। তার বলেই দ্রæত রান তুলেছেন তামিম। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মেরেছেন ছক্কা। তার যখন ফিফটি হলো, দলের রান তখন ৫২। ফিফটির পরও এগোতে থাকেন একই গতিতে। ধনাঞ্জয়াকে টানা দুটি বাউন্ডারির পরের ওভারে ছক্কা মারেন আরেকটি। পরে চা বিরতির আগে আবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করেন সময়। বিরতির পর আর সময়ই পেলেন না!
পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম ইনিংসের প্রথম সকালের স্নায়ুর চাপও তামিম এভাবেই দ‚র করেছিলেন। ৯০ রানের ইতিবাচক ইনিংস খেলে বাংলাদেশ ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়ে যান। সেঞ্চুরি হতে পারত। নিজের ভুলেই তা হয়নি।
সবুজ উইকেটে পেসারদের চোখ রাঙানিতে শুরু ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকল ব্যাটসম্যানদের একপেশে দাপটের। প্রথম চার দিন মিলিয়ে উইকেট পড়েছিল কেবল ১০টি। সব মিলিয়ে মাত্র ১৭ উইকেট হারিয়ে রান উঠেছে ১ হাজার ২৮৯। উইকেট প্রতি ৭৫ রানের বেশি! টানা ২৮ টেস্টে ফল হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় ড্র হলো কোনো টেস্ট। বাংলাদেশের তাতে আপত্তির কারণ নেই। সাম্পতিক দুঃসময়ের পর বড় স্বস্তির উপলক্ষ এই ড্র।
ব্যাটিংয়ের দিক থেকে এই টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় খেলেন ১৬৩ রানের ইনিংস। দেশের বাইরে প্রথম ও টেস্টে একাদশতম সেঞ্চুরি তুলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। তবে বল করতে নেমে হতাশায় পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। লঙ্কানদের হয়ে দাপট দেখিয়ে অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ করে ফেলেন ২৪৪ রান, ১৬৬ রান আসে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাটে। বোলারদের জন্য কোন সহায়তা না থাকা উইকেটে দারুণ বল করেছেন তাসকিন আহমেদ। অনেকদিন পর টেস্টে ফেরা এই পেসারকে শুরু থেকেই দেখা গেছে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে জায়গায় বল করতে। লম্বা স্পেলে বল করেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন। ৩০ ওভার বল করে ১১২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। আগামী ২৯ এপ্রিল একই ভেন্যুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটিও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৭৩ ওভারে ৫৪১/৭ (ডিক্লে.)। শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৭৯ ওভারে ৬৪৯/৮ (ডিক্লে.) (করুনারতেœ ২৪৪, থিরিমান্নে ৫৮, ওশাদা ২০, ম্যাথিউস ২৫, ধনঞ্জয়া ১৬৬, ডিকভেলা ৩১, হাসারাঙ্গা ৪৩, লাকমাল ২৩*; আবু জায়েদ ০/৭৬, তাসকিন ৩/১১২, ইবাদত ১/৯১, মিরাজ ১/১৬০, তাইজুল ২/১৬৪)। বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২৩ ওভারে ১০০/২ (তামিম ৭৪*, সাইফ ১, শান্ত ০, মুমিনুল ২৩*; লাকমাল ২/১৪ , বিশ্ব ০/১৮, ধনঞ্জয়া ০/৪৫, হাসারাঙ্গা ০/১১)।
ফল : ড্র। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : দিমুথ করুনারতেœ।
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে ০-০ সমতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।