নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ক’দিন আগেই চট্টগ্রামে চারদিন বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের ভাগ্য দু’দিকেই দুলছিল পেন্ডুলামের মতো, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের অসামান্য দক্ষতায় জিতে ক্যারিবিয়ানরা দেখিয়েছিল কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। দুবারই ব্যর্থ বাংলাদেশ। গতকাল তাই টাইগারদের যেন আরেকবার দেখিয়ে দিলো ভারত।
এএম চিদাম্বরম স্টেডিয়াম টেস্টের ভাগ্য নিয়ে আগ্রহ শেষ সাতসকালেই। এই চেন্নাইয়েই সপ্তাহান্তে আইপিএলের নিলাম। ম্যাচের শেষ দিকে যেন সেদিকেই নজর ছিল মঈন আলীর। একটু লড়াই করে যে টেস্টকে দ্বিতীয় সেশনে নেবেন, সে আশাও নেই। তাই একের পর এক বল ঠেকিয়ে টিকে থাকার পরিকল্পনার দিকে গেলেনই না এই অলরাউন্ডার। বরং হাত খুলে মারা শুরু করলেন।
কুলদীপ যাদবকে এক ছক্কা ও এক চারে শুরু করেছিলেন। শেষ করলেন ওই কুলদীপের বলেই। মাঝে অক্ষর প্যাটেলের বলে ছক্কার হ্যাটট্রিক করেছেন, অশ্বিনকেও টানা দুই বলে চার-ছয় মেরেছেন। যখনই মনে হচ্ছিল টেস্ট ক্রিকেটে দ্রæততম ফিফটির রেকর্ডটা এই বাঁহাতির দখলে যাবে, তখনই কুলদীপের বলে স্টাম্পড মঈন। ১৮ বলে ৪৩ রান করেই থামলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। আর ইংল্যান্ডও থামল ১৬৪ রানে। ভারতকে হারানোর লক্ষ্যটা তখনো ৩১৮ রান দ‚রে।
মঈনের এই ঝোড়ো গতির ৪৩ রানেই দুটি কাজ হলো। দুই ইনিংস মিলিয়েই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ইনিংস মঈনের ৪৩। আর মঈনের এমন ক্ষণিকের ঝড়ে শেষ উইকেট জুটিতে এল ৩৮ রান। দুই ইনিংস মিলেই যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রান! কতটা দাপটে ভারত ম্যাচটা জিতেছে, তার প্রমাণ তো এখানেই। ভারত যে ঘুরে দাঁড়ানোকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে, সে প্রমাণও মিলল।
গত সপ্তাহে এ মাঠেই খেলেছে দুই দল। করোনাকালে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচটা হতাশ করেছে স্বাগতিকদের। ভারত মাত্রই অস্ট্রেলিয়া জয় করে এসেছে। ওদিকে শ্রীলঙ্কাকে গলে ধবলধোলাই করে এসেছে ইংল্যান্ড। আত্মবিশ্বাসী দুই দলের খেলায় যেমন লড়াই হওয়ার কথা ছিল, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রথম দুই দিনেই ম্যাচের ভাগ্য লিখে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ২২৭ রানে ভারতকে চেন্নাইয়ের উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড।
এমন এক হারেও ভারতজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়নি। হারের হতাশা ছিল। কিন্তু এই ভারত দলের ওপর আস্থা হারায়নি কেউ। ভারত দল যে এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে জানে, সেটা তো অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা গেছে। প্রথম টেস্টে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার পর সবাই ভারতকে উড়িয়েই দিয়েছিল। বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে ক্ষীণশক্তির চোটগ্রস্ত ভারতই অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জিতে এসেছে।
আস্থার প্রতিদান দিতে ভারত এবারও দেরি করেনি। চেন্নাইয়েই হয়েছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্টে ২২৭ রানের হারের বদলা রেকর্ড গড়েই নিয়েছে। ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারানোর নিজেদের রেকর্ডটা নতুন করে লিখেছে কোহলিদের ভারত। ৩১৭ রানের এ জয়ের পেছনে ইংলিশ বিশ্লেষকেরা উইকেটের দায় খুঁজতে চাইছেন। অনেকেই টস ভাগ্যকেই জয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছেন। এ সিরিজে যারা আগে ব্যাট করবে, তারাই জিতবে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। দুটি প্রায় সমশক্তির দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই টস গুরুত্বপ‚র্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ভারতের স্পিনবান্ধব উইকেটে।
ভারত অবশ্য কাজেই দেখিয়েছে ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটারদের ভুল। যে উইকেটে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩৪ রান তুলেছে, সেখানেই ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৬ রান করেছে। যে উইকেটে রান তুলতে নাভিশ্বাস ইংল্যান্ডের, সেখানেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন সেঞ্চুরি পেয়েছেন। কোহলিও চাপের মুখে দলকে পথ দেখিয়েছেন।
জয়ের ভিতটা গড়া হয়েছিল যদিও আগের দিনই। এরপর খুব একটা লড়াই করতে পারল না ইংল্যান্ড। চেন্নাইয়ের স্পিন সহায়ক উইকেটের সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামালেন অভিষিক্ত আকসার প্যাটেল। রেকর্ড ব্যবধানে জিতে সিরিজে সমতা আনল ভারত। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন ইংল্যান্ডকে ৩১৭ রানে হারিয়েছে ভারত। ৪৮২ রানের লক্ষ্যে সফরকারীরা গুটিয়ে গেছে ১৬৪ রানে। চার ম্যাচের সিরিজটি এখন ১-১ সমতায়। টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রানের হিসেবে এটি ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। আগের রেকর্ড ছিল ১৯৮৬ সালে লিডসে, ২৭৯ রানের জয়। একই হিসেবে যেকোনো দলের বিপক্ষে এটি তাদের পঞ্চম সর্বোচ্চ জয়। রানের বিচারে এশিয়ায় ইংল্যান্ড এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারেনি আর কোনো দলের বিপক্ষে। আগের বড় হারটিও ছিল ভারতের বিপক্ষে, ২০১৬ সালে ২৪৬ রানে। ইংলিশদের উড়িয়ে দেওয়ার পেছনের ম‚ল কারিগর প্যাটেল। বাঁহাতি স্পিনে তিনি নেন ৬০ রানে ৫ উইকেট। ভারতের হয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া ষষ্ঠ স্পিনার তিনি।
৩ উইকেটে ৫৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা ইংল্যান্ড এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে দল হারাচ্ছে উইকেট, অন্য প্রান্তে মইন আলি বইয়ে দেন ঝড়। প্যাটেলের ওভারে মারেন টানা তিন বলে তিন ছক্কা। মইনের তাÐব থামিয়েই ইংল্যান্ড ইনিংসের সমাপ্তি টানেন কুলদিপ। ১৮ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৩ রান করে তিনি আউট হন স্টাম্পিং হয়ে। রিশাব পান্ত ও ফোকস মিলে এই টেস্টে পাঁচটি স্টাম্পিং করেছেন। এক টেস্টে ৫ বা এর চেয়ে বেশি স্টাম্পিংয়ের ঘটনা আছে আর পাঁচটি।
ম্যাচে দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন অশ্বিনও। সেঞ্চুরির পাশাপাশি নিয়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেট। তিনবার এই কীর্তি গড়ে তিনি আছেন সবচেয়ে বেশি পাঁচবার করা ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামের পরেই। দারুণ কীর্তি গড়ে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন অশ্বিন।
আগামী ২৪ ফেব্রæয়ারি আহমেদাবাদে শুরু ইংল্যান্ড-ভারতের তৃতীয় টেস্ট। প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৩২৯ ও ২য় ইনিংস : ২৮৬। ইংল্যান্ড : ১৩৪ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৪৮২) (আগের দিন ৫৩/৩) ৫৪.২ ওভারে ১৬৪ (লরেন্স ২৬, রুট ৩৩, স্টোকস ৮, পোপ ১২, ফোকস ২, মঈন ৪৩, স্টোন ০, ব্রড ৫*; ইশান্ত ০/১৩, অক্ষর ৫/৬০, অশ্বিন ৩/৫৩ , সিরাজ ০/৬, কুলদ্বীপ ২/২৫)। ফল : ভারত ৩১৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সিরিজ : ৪ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।