নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শেষ বিকেলের মরে আসা আলোয় বাংলাদেশের শেষ আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জয়ের মধ্যে। কিন্তু জয়ের নায়ক নন, দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি হয়ে রইলের ট্র্যাজেডির নায়ক। মিরাজকে ফিরিয়েই অসাধারণ এক জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে ১৭ রানের জয়ে ২-০তে টেস্ট সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৭ উইকেট পতনের দিনে ম্যাচ শেষ চতুর্থ দিনেই।
রানের হিসেবে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট ব্যবধানের পরাজয় এটি। তবে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের সান্ত¡না হতে পারে না সেটিও। ২০১২ সালের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ। সেবারও ছিল ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেই। তবে এবারের এই আনকোরা দলটির লজ্জা যে একটু বেশিই!
এই পরাজয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের মুখও আর দেখা হলো না বাংলাদেশের। অথচ খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পুরো ১২০ পয়েন্টের আশায় সিরিজ শুরু করেছিল দল। তবে দিনটি শুরু হয়েছিল অন্যভাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রæত গুটিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের। চতুর্থ দিন নেমে সেই কাজটা দারুণভাবে করলেন বোলাররা। পেসার আবু জায়েদ রাহি শুরুতেই হানলেন জোড়া আঘাত। টার্ন-বাউন্সে প্রতিপক্ষকে খাবি খাইয়ে উইকেট নিলেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে হুড়মুড়িয়ে পড়ল ক্যারিবিয়ানরা। গতকাল লাঞ্চের পর পরই মাত্র ৪.৫ ওভারে গুটিয়ে ১১৭ রানে শেষ হয় উইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। মিনিট বিশেকেই হয়ে যায় সব তছনছ। তাতে ম‚ল ভ‚মিকা তাইজুলের। মাত্র ৩৬ রানে এই বাঁহাতি স্পিনার তুলেছেন ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে নিষ্প্রভ থাকা নাঈম হাসানের ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। সকালে প্রথম দুই উইকেট নেন আবু জায়েদ।
প্রথম ইনিংসে নেওয়া ১১৩ রানের সঙ্গে ২৩০ রানের লিড তাদের। সিরিজে সমতা ফেরাতে বাংলাদেশকে তাই করতে হতো ২৩১ রান। উইকেটের পরিস্থিতি বিচারে রান তাড়ায় স্বাগতিকদের সামনে ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই রান তাড়া করে জিততে হলে বাংলাদেশকে ভাঙ্গতে হতো দুটি রেকর্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এতরান তাড়া করে জেতার নজির নেই বাংলাদেশের। এর আগে দেশের মাঠে ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের ১০১ রান তাড়া করে জিততে গিয়েই ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের। দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে ২১৭ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। মিরপুরের মাঠেও কোন দল এরচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতেনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশের দেওয়া ২০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
তার কিছুই করতে পারেনি মুমিনুল হকের দল। শেষ দিকে কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ব্যবধান কমালেও দিনটিকে জয়ে রাঙাতে পারেননি মিরাজ। বলতে গেলে চতুর্থ দিন চা-বিরতির আগে হঠাৎ ঝড়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি দারুণ শুরু এনে দেওয়ার পরও হঠাৎ ধসে পড়ে গেছে ৩ উইকেট। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের পর ফিরে যান তিনে নামা নাজমুল হোসেনও। দুই বছর পর টেস্টে ফিফটি পাওয়া দেশসেরা ওপেনার তামিম থেমেছেন ঠিক পঞ্চাশে পৌঁছেই।
এরপর মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম ক্রিজে কিছুটা থিতু হওয়ায় আবার নড়েচড়ে বসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুজনে মিলে বাংলাদেশের রান ১০০ পার করিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এর পরই আবার জোড়া ধাক্কা। ১৮ বলের মধ্যে আউট হয়ে গেছেন মুশফিক ও মোহাম্মদ মিঠুন। মুশফিক ১৪ রান করে আউট হয়ে গেছেন, নেমেই রাকিম কর্নওয়ালকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে শুরু করা মিঠুন আউট হয়ে গেছেন ১০ রান করে।
এরপর আবার একই গল্প। লিটন ও মুমিনুল মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এবারও জোড়া ধাক্কা। ১৯ বলের মধ্যে আউট হয়ে গেলেন মুমিনুল ও লিটন। কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ দিলেন লেগ সিøপে। সেই কর্নওয়ালের বলেই কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিলেন লিটন। মাঝে তাইজুল ইসলামকে দেখেও অনেকেরই আশা জেগেছিল ‘হয়তো সম্ভব’। তিন্তু হতাশ করেছেন তিনিও। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম হাসান যখন আউট হন, বাংলাদেশের জিততে চাই আরও ৪৩। কঠিন হয়ে পড়া উইকেটে চরম আশাবাদীও তখন বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরবেন না। কিন্তু খানিক পর মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরালেন আশা, জাগালেন রোমাঞ্চ। ছয়-চারে রানের প্রয়োজন নামিয়ে এনেছিলেন বিশের নিচে। চোখ ধাঁধানো কিছুর প্রত্যাশা তখন বাড়াবাড়ি ছিল না। কিন্তু হলো না। জোমেল ওয়ারিকানের বলে সিøপে রাহকিম কর্নওয়াল অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় মিরাজের ক্যাচ লুফেই ছুটলেন বুনো উল্লাসে। কম শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে এসে দুর্দান্ত এক সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ানদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান শেষ ক্যাচটা যিনি নিলেন সেই কর্নওয়ালের। প্রথম ইনিংসে ৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। ম্যাচে ৯ উইকেট, সিরিজে ১৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১.৩ ওভারের মধ্যে তিনি একাই করলেন ৩০ ওভার।
শেষ দিকে এসে রোমাঞ্চ ছড়ানো এই টেস্টটা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কোনোভাবে জিতে গেলে অনেক প্রশংসা হতো, চারিদিকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের স্তুতি হয়তো ঝরত। কিন্তু তারকা ক্রিকেটারদের অনেককে দেশে রেখে বাংলাদেশ সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুই টেস্টের সিরিজে যখন বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়, বাংলাদেশের টেস্ট খেলার মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেই। প্রায় দশ মাস পর বাংলাদেশের টেস্ট খেলতে নামা, করোনার বিরতি কাটিয়ে প্রথম সিরিজ খেলতে নামাও হয়তো সেখানে কারণ দর্শানোর নিক্তিতে যথেষ্ট হয় না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪০৯ ও ২য় ইনিংস : ৫২.৫ ওভারে ১১৭ (ব্র্যাথওয়েট ৬, ক্যাম্পবেল ১৮, মোসলি ৭, বনার ৩৮, ওয়ারিকান ২, মেয়ার্স ৬, বø্যাকউড ৮, জশুয়া ২০, আলজেরি ৯, কর্নওয়াল ১, গ্যাব্রিয়েল ১* তাইজুল ২/৩৬, নাঈম ৩/৩৪, মিরাজ ১/১৫, জায়েদ ২/৩২)।
বাংলাদেশ : ২৯৬ ও ২য় ইনিংস : ৬১.৩ ওভারে ২১৩ (লক্ষ্য ২৩১) (তামিম ৫০, সৌম্য ১৩, শান্ত ১১, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ১৪, মিঠুন ১০, লিটন ২২, মিরাজ ৩১, তাইজুল ৮, নাঈম ১৪; কর্নওয়াল ৪/১০৫, আলজেরি ০/১৬, গ্যাব্রিয়েল ০/৮, ওয়ারিকন ৩/৪৭, ব্র্যাথওয়েট ৩/২৫)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রাহকিম কর্নওয়াল।
সিরিজ : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : এনক্রুমা বনার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।