Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফসোস-আক্ষেপেই দিন পার

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ চার স্পিনার নিয়ে নামায় মনে হচ্ছিল উইকেট থাকছে সেই আগেরবারের মতই। প্রথম দিন থেকেই মিলবে টার্ন আর অসমান বাউন্স। কিন্তু খেলা শুরু হতেই বদলে গেল সে ধারণা। শুষ্ক আর সমান বাউন্সের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল বেশ ভালো। প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া হয়েছে তাই সোনায় সোহাগা। কিন্তু তা কতটা কাজে লাগাতে পারল বাংলাদেশ। বেশিরভাগ আউটেই যে বোলারদের খাটুনির চেয়ে বড় হয়ে গেল ভুলের খেসারত!
গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে টস জয়, আগে ব্যাটিং, স্বস্তিময় শুরু। প্রায় ১ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে আর কী চাই! রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বাংলাদেশের শুরুটাও হলো ঝলমলে। হাতছানি দারুণ একটি দিনের। কিন্তু তা মিলিয়ে গেল নিজেদের দায়ে। সময় যত গড়াল, হারাতে থাকল ব্যাটিংয়ের আলো। কিছু বাজে শট আর রিভিউ না নেওয়ার বিস্ময়কর কা- মিলিয়ে সম্ভাবনাময় দিনটি শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল ম্লান। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২৪২। উইকেট প্রথম দিনে ছিল ব্যাটিং সহায়ক। কিছুটা টার্ন মিলেছে বটে। তবে বাউন্স ছিল বেশ সমান, বল ব্যাটে এসেছে ভালোভাবেই। এখানে আগে ব্যাটিংয়ের ফায়দা পুরোপুরি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
স্কোরকার্ডে হয়তো খুব হতাশার কথা বলছে না, তবে দিনটি ভালো হতে পারত আরও অনেক। দলের স্কোরে পুরোপুরি ফুটে উঠছে না দিনের চিত্র। সেটি খানিকটা ফুটিয়ে তুলতে পারে ব্যক্তিগত স্কোরগুলি। আউট হওয়া ৫ ব্যাটসম্যানের ৪ জনই ছুঁয়েছেন ২৫, কিন্তু ফিফটি করেছেন কেবল একজন। সেই একজন, সাদমান ইসলাম।
ব্যক্তিগত স্কোরগুলিতে যদি মিশে থাকে আক্ষেপ, ইনিংসগুলো শেষ হওয়ার ধরনে থাকছে চরম হতাশা। পাঁচ আউটের তিনটিতেই থাকবে আক্ষেপ। বাকি দুটিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজনের দায়। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের বিদায় আলগা শটে, ভীষণ বাজে শটে আউট অধিনায়ক মুমিনুল হক। দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট দৃষ্টিকটু রান আউটে। সাদমানের আউটের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।
ঘটনাটি চা-বিরতির একটু আগে। হঠাৎই যেন অস্থির হয়ে উঠলেন আগের পুরোটা সময় ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া সাদমান। ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে পেলেন ফিফটির দেখাও। তবে হঠাৎই জোমেল ওয়ারিকানের বলে বাজে শটে এলবিডব্লিউ হয়ে ৫৯ রান করে বিদায় এই ওপেনারের। অথচ রিভিউ নিলেই তিনি বেঁচে যান!
ওয়ারিকানের বলে সুইপ খেলতে গিয়েছিলেন। তিনি পরাস্ত হলে জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার শরফুদৌল্লাহ সৈকত। দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি পাওয়া সাদমান দ্বিধায় ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানই দিতে পারেন আদর্শ পরামর্শ। ১৫৪ বল মোকাবিলা করা বাঁহাতি সাদমান ছুটলেন মুশফিকুর রহিমের দিকে। অভিজ্ঞ মুশফিক রিভিউ নেওয়ার আলাপে সায় দিলেন না। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন সাদমান। অথচ রিপ্লেতে দেখা গেল, লেগ স্টাম্পের ওপর ‘পিচড’ হওয়া বল বেরিয়ে গেছে স্টাম্প অনেকখানি মিস করে! তখন অবশ্য আক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই করার নেই। করোনাভাইরাসের কারণে প্রতি ইনিংসে মিলছে তিনটা রিভিউ। দিনের শেষদিকে কেন একজন থিতু ব্যাটসম্যানের বেলায় তা ব্যবহার করা গেল না এই প্রশ্নই আসছে ঘুরে ফিরে।
শেষ বেলায় বিপদ বাড়তে পারত আরও, যদি লিটন দাসের ২ রানে রাহকিম কর্নওয়ালের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ না পড়ত। এরপরই খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। ব্যাকফুট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভে নিজের ট্রেডমার্ক স্টাইলের ছাপ রেখে রান এগিয়ে নিয়েছেন দ্রুত। প্রথম দুই সেশনের ওভার প্রতি দুইয়ের আশেপাশে রান আনা বাংলাদেশ তার কারণে শেষ সেশনে ওভারপ্রতি রান তুলল তিনের উপরে। ৫৮ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৬ বাউন্ডারি। লিটন দিশেষে অপরাজিত ৩৪ রানে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই টেস্ট দিয়েই লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা সাকিব অপরাজিত আছেন ৩৯ রানে। শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যানের ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে খানিকটা স্বস্তিতে অন্তত দিনটি শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই সেশনে মন্থর রান তোলার গতির সঙ্গে দুটি করে উইকেট পড়েছিল। শেষ সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে রান উঠেছে ১০২।
৩ উইকেট নিয়ে প্রথম দিনে ক্যারিবিয়ানদের সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান। অফ স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল উইকেট না পেলেও খারাপ বল করেননি। উইকেটের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এই উইকেটে সাড়ে তিনশোর নিচে কোন স্কোর করলে সেটা হতে পারে বিপদের। দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনটাই তার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তা কাটিয়ে দিতে পারলে বড় রানের সঙ্গে ম্যাচেও নিরাপদ অবস্থায় চলে যাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৪২/৫ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ব্যাটিং ৩৯*, লিটন ব্যাটিং ৩৪*; রোচ ১/৪৪, গ্যাব্রিয়েল ০/৫১, কর্নওয়াল ০/৫৬, মেয়ার্স ০/১৬, ওয়ারিকান ৩/৫৮, ব্যাথওয়েট ০/১৩)। প্রথম দিন শেষে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ