নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস ক্রিকেটে কম নেই। গৌরবময় সেই আখ্যানগুলোয় এবার যোগ হলো নতুন এক অধ্যায়। আগের টেস্টে ৩৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতা আর প্রবল সমালোচনার আঘাত যখন সঙ্গী, দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের সেরা দুই পেসার, ম্যাচ চলার সময় আরেক পেসারকে হারানো, এত সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে, প্রচন্ড মানসিক শক্তি, প্রতিজ্ঞা, স্কিল আর প্রবল তাড়নার প্রতিফলন ফুটিয়ে তুলে ভারত পেল অসাধারণ এক জয়। অ্যাডিলেইডে বিধ্বস্ত ভারত মেলবোর্নে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে এখন ১-১ সমতা।
গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিনে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০ রানে থামিয়ে ভারত ৭০ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ২ উইকেট হারিয়ে। ওই ২ উইকেট হারানো যেন ছিল চিত্রনাট্যেরই দাবি। দুর্দান্ত এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি, জয়ের সময় ২২ গজে তার উপস্থিতি না থাকলে কেমন হয়! সেই অজিঙ্কা রাহানের ব্যাট থেকেই এলো জয়সূচক রান। প্রথম ইনিংসে ১১২ রানের দারুণ ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কই। কোহলির ছুটি-বিশ্রামের সুযোগে এই নিয়ে ৩ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে সবকটিতেই জয়ের স্বাদ পেলেন অধিনায়ক রাহানে। অস্ট্রেলিয়ায় সব মিলিয়ে ভারতের এটি অষ্টম জয়, পয়মন্ত ভেন্যু মেলবোর্নেই জয় চারটি। সবশেষ সফরেও তারা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়ার গর্বের এই মাঠে।
এই টেস্টটি অস্ট্রেলিয়াকে দাঁড়াতেই দেননি ভারতীয় বোলাররা। প্রথম ইনিংসে ১৯৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০। ভারত প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান তুলে জয়ের জন্য লক্ষ্য পেয়েছিল ৭০। সে লক্ষ্যে বেশ সহজেই পৌঁছে গেছে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ভারতের পথটা সুগম করে রেখেছিল আগের দিনই। তৃতীয় দিন অস্ট্রেলিয়া শেষ করেছিল ৬ উইকেটে ১৩৩ রান স্কোরবোর্ড তুলে। মাত্র ২ রানে এগিয়ে থেকে হাতে মাত্র ৪ উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিনে খুব বেশি কিছু করার ছিল না তাদের। করতেও পারেনি। তবে শেষ দিকে ক্যামেরন গ্রিন, প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্করা ব্যাট হাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে ভারতের লক্ষ্যমাত্রাটাকে কেবল বড়ই করতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের সেরা বোলার অভিষিক্ত মোহাম্মদ সিরাজ। অস্ট্রেলিয়াতে আসার পরপরই বাবার মৃত্যু সিরাজকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। বাবাকে শেষবিদায় দিতে তিনি দেশেও ফিরে যাননি। সেই সিরাজ অভিষিক্ত হয়েই নিজেকে চিনিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৪০ রান ২ উইকেট পাওয়া সিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মোহাম্মদ শামির অনুপস্থিতিতে যেখানে ভারতীয় দলের পেস বোলিং নিয়ে চিন্তা ছিল, সেটি কী চমৎকারভাবেই না দূর করে দিলেন সিরাজ, উমেশ যাদব, যশপ্রীত বুমরারা। বুমরা নিয়েছেন ২ উইকেট, উমেশ ১টি। তবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজার অন্তর্ভুক্তিটা যে দারুণ সিদ্ধান্ত ছিল, সেটি প্রমাণ করেছেন বাঁহাতি স্পিনার নিজেই। দুই ইনিংসেই অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন তার ঘূর্ণিবল দিয়ে। প্রথম ইনিংসে ১টি নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ২ উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে অশ্বিনের ৫ উইকেটও ছিল মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার অস্বস্তির বড় কারণ।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছিল ২০০ রানে। সব মিলিয়ে ৬৯ রানে এগিয়ে থেকে। ভারতের লক্ষ্যমাত্রা ৭০। মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্স, নাথান লায়নদের অস্ট্রেলীয় বোলিং অ্যাডিলেডের মতো কোনো অঘটন ঘটানোর সুযোগই পায়নি। যদিও ১৯ রানের মধ্যেই মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর চেতেশ্বর প‚জারা আউট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আরেক অভিষিক্ত শুভমন গিল আর অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে কোনো অঘটনের শঙ্কাই জাগতে দেননি। ৫১ রানের জুটি গড়ে তারা নিশ্চিত করেছেন ভারতের জয়। গিল ৩৫ আর রাহানে অপরাজিত ছিলেন ২৭ রানে।
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়গুলির একটি তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পগাঁথায় দারুণ সংযোজন এই ম্যাচ। তবে জয়ের পর ভারতের উদযাপনে দেখা গেল না উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি। অজিঙ্কা রাহানের প্রতিক্রিয়ায় স্বস্তির পাশাপাশি ফুটে উঠল প্রতিজ্ঞাও। কাজ যে এখনও বাকি! বিরাট কোহলি, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামিকে ছাড়া ও ম্যাচের মাঝপথে উমেশ যাদবকে হারানোর পরও তাড়ানো গেল ৩৬ রানের ভূত। তাদের সামনে এবার সিরিজ জয়ের লড়াই।
করোনা ঝুঁকি থাকায় ম্যাচ হওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল সিডনিতে সেটি কেটে গেছে। গতকালই অজি ক্রিকেট নিশ্চিত করেছে ৭ জানুয়ারি সিরিজের তৃতীয় টেস্টটি এ মাঠেই খেলতে পারবে দুদল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ১৯৫ ও ২য় ইনিংস : ১০৩.১ ওভারে ২০০ (আগের দিনের ৬৬ ওভারে ১৩৩/৬) (ওয়েড ৪০, বার্নস ৪, লাবুশানে ২৮, স্মিথ ৮, হেড ১৭, গ্রিন ব্যাটিং ৪৫, পেইন ১, কামিন্স ব্যাটিং ২২, স্টার্ক ১৪, লায়ন ৩, হ্যাজেলউড ১০; বুমরাহ ২/৫৬, যাদব ১/৫, সিরাজ ৩/৩৭, অশ্বিন ২/৭১, জাদেজা ২/২৮)।
ভারত : ৩২৬ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৭০) ১৫.৫ ওভারে ৭০/২ (মায়াঙ্ক ৫, গিল ৩৫*, প‚জারা ৩, রাহানে ২৭* ; স্টার্ক ১/২০, কামিন্স ১/২২, হ্যাজেলউড ০/১৪, লায়ন ০/৫, লাবুশানে ০/৯)।
ম্যাচ সেরা : আজিঙ্কা রাহানে।
সিরিজ : ৪ ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।