Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্ধকারে আলোর দিশা

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত আইসিসি ২০১৯ বিশ্বকাপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় পারফরমেন্স। তারপরও বিশ্বকাপে হতাশ করা ফল, ক্রিকেটারদের ধর্মঘট, টেস্ট ক্রিকেটে নবীন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হার, ঘরে-বাইরে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই জাতীয় দলের একের পর এক শোচনীয় পরাজয়, এর সঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে যেন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছিল কালো মেঘ। সে অমবস্যার মেঘ সহসাই কাটবে এমন আশাবাদীও খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। তবে মেঘের আড়ালেও উঁকি দিচ্ছিল রোদ। ঠিক রেব হয়ে আসতে পারছিল না। যেন মেঘ-কুয়াশা ও স‚র্যের লুকোচুরি খেলা। অবশেষে সূর্যের আলোর মশাল হাতে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন আকবর আলী। সফল হলেন তিনি। সফল হল ক্রিকেট। সফল ১৬ কোটি বাংলাদেশি।

বরং পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল এমন যে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে যুবাদের দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানের খবরটাও ছিল অনেকটা উপেক্ষীত। তবে আকবর-তৈহিদরা নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড়া করে দিয়ে নিজেদের নিয়ে এসেছে লাইমলাইটে। জুনিয়র টাইগাররা একপ্রকার বাধ্যই করেছে তাদের দিকে চোখ ফেরাতে। দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চের প্রথম কোনো শিরোপা এনে জানিয়ে দিলেন, ক্রিকেটপ্রেমী এই জাতির আনন্দের ছটা বিবর্ণ হতে দেবেন না তারা। বিশ্বজয়ের গৌরব এনে দেওয়ার পথে এ-ও জানান দিলেন,ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক আর ক্রিকেটীয় জ্ঞান মাঠে প্রয়োগের যে ঘাটতি আমাদের ক্রিকেটারদের আছে, সেই ঘাটতিও হয়তো নিকট ভবিষ্যতে প‚রণ হতে পারে তাদের হাত ধরেই।

লক্ষ্যটা অবশ্য সহজ ছিল না। আজকের তারকা সাকিব-মুশফিক-তামিমও দেড় দশক আগে অংশ ছিলেন এই স্কোয়াডের। সে দল গ্রæপ পর্ব পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেও সে পর্যায় আর অতিক্রম করতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সেটিই ছিল ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য।
দীর্ঘ বিরতির পর ফের মেহেদী হাসান মিরাজ-নাজমুল হোসেন শান্তদের নিয়ে গড়া স্কোয়াড ঘিরে স্বপ্ন উঁকি দেয় দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে। সম্ভাবনার অনুবাদে তারা ছাপিয়ে গিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিকদেরও। কোয়ার্টার পেরিয়ে সেমিতে পা রাখেন মিরাজরা। আশাভঙ্গও হয় ওই সেমিতেই। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই ইতিহাসটাও পক্ষে ছিল না যুব টাইগারদের। তবে প্রকৃত চ্যাম্পিয়নরা তো সব প্রতিক‚লতা পেরিয়েই নতুন করে ইতিহাস লেখে। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে সেটাই যেন করে দেখালেন ‘আকবর দ্য গ্রেট’ ও তার সতীর্থরা।

ছোটদের ক্রিকেটীয় দক্ষতা আর জ্ঞানের পাশাপাশি তা প্রয়োগের যে সাফল্য, তাতে এটুকু বলাই যায়-‘জাতীয় দলে ক্রিকেটারদের জন্য পাইপলাইনটা নেহায়েত কম শক্তিশালী নয়’। শরীফুলের মতো পেসার, রাকিবুলের মতো স্পিনার যেমন আছে এই লাইনে, তেমনি আছে পারভেজ হোসেন ইমনের মতো ওপেনার কিংবা তৌহিদ হৃদয় বা মাহমুদুল হাসান জয়ের মতো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানও। আর সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো— আকবর আলীর মতো একজন অধিনায়কও এই দলকে পথ দেখিয়েছেন, যিনি একইসঙ্গে মিডল অর্ডারের নির্ভরতা, আবার উইকেটের পেছনে অতন্দ্র প্রহরী। আমাদের মুশফিকুর রহিমকে পেরিয়ে কেউ কেউ তো তাকে ভারতের বিশ্বজয়ী ‘ক্যাপ্টেন কুল’ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনীর সঙ্গেও তুলনা করতে শুরু করেছেন।

প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমের পথ পেরিয়ে জুনিয়র এই টাইগাররাই ফের আশার আলো ফিরিয়েছেন ক্রিকেটে। জাতীয় দল যখন ¤্রয়িমান মাঠে আর মাঠের বাইরের ঘটন-অঘটনে, তরুণ প্রাণগুলোই যেন প্রাণ ফেরালেন ক্রিকেটে। আজকের তরুণদের কাÐারি আকবর আলী যথাযথ পরিচর্যায় একদিন জাতীয় দলেরও কাÐারি হয়ে উঠবেন, তেমন আশা তো ক্রিকেটপ্রেমীরা করতেই পারে। তবে ভবিষ্যতের আশাবাদ তোলা থাকুক। আপাতত দেশের জন্য যে বিশ্বজয় করে আনলেন তরুণরা, সেজন্য অভিবাদন তাদের। বিবর্ণ হতে থাকা ক্রিকেটকে যে তারা রাঙিয়ে দিলেন— তাদের জন্য তাই ক্রিকেটপ্রেমীদের পক্ষ থেকে ভালোবাসা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ