Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বোনের মৃত্যুশোক বুকে চেপেই আকবরের বিশ্বজয়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভাই ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে গেলেই জায়নামাজে বসে থাকতেন বড় বোন। দুই হাত তুলে দোয়া করতেন ছোট ভাইয়ের জন্য; ভাই যেন ভালো খেলে সুস্থ শরীর আর জয় নিয়ে ফিরতে পারে ঘরে। বোনের সেই আদরের ছোট ভাই আকবর আলী বিশ্ব জয় করেছেন। কিন্তু তা তো দেখতে পারলেন না সেই বোন খাদিজা খাতুন। গত ২২ জানুয়ারি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান আকবরের একমাত্র বড় বোন। প্রিয়জন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেই ১৯ দিনের মাথায় আকবর দেশকে দিলেন বিশ্বজয়ের নেতৃত্ব।

আকবরের ‘বাদশা’ হওয়ার শুরুর পথেও সঙ্গে ছিলেন বোন খাদিজা। ১৮ জানুয়ারি অন‚র্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটাও দেখেছেন তিনি। কিন্তু পরশু রাতে তার ছোট ভাইয়ের হাতে যখন বিশ্বসেরার ট্রফিটা উঠল, বোন খাদিজা তখন দ‚রলোকের বাসিন্দা। যমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান। খবরটা প্রথমে তার কাছ থেকে চেপেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক আকবর তা জেনে যান। ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পরপরই আকবর ফোন দিয়েছিলেন তার মেজ ভাইকে। বলেছিলেন, ‘আপার মৃত্যুসংবাদটা কেন আমার কাছে চেপে গেলেন আপনারা?’ ওই মুহ‚র্তের কথা জানানোর সময় হুহু করে কাঁদলেন আকবরের বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে স্বপ্নের ফাইনাল। পুরো সময়টাতেই বোনের মৃত্যুর শোক বুকে নিয়েই খেলেছেন আকবর। তার বোনের মৃত্যুসংবাদ ছুঁয়ে গিয়েছিল গোটা দলকেই।

ফাইনালে বুক চিতিয়ে লড়ে দেশকে জিতিয়েছেন আকবর। রংপুরে আকবরের বাড়ির মানুষের অনুভ‚তি আজ মিশ্র। বাড়ির ছেলের এমন অনন্য কীর্তির মধ্যেও সবার মনে একটাই চিন্তা- আকবর ফিরলে কী জবাব দেবেন তারা। তার বাবা বললেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচের এক দিন আগে আমাদের একমাত্র মেয়ে মারা যায়। চার ভাইয়ের একটাই বোন। আকবর বাড়ির সবার ছোট হওয়াতে ও ছিল ওর বোনের কলিজার টুকরা। মৃত্যুসংবাদটা ওকে দিতে চাইনি। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়ে যায়। আগে কিছু বলেনি । পাকিস্তান ম্যাচের পর ওর মেজ ভাইয়ের কাছে খবর না জানানোর কৈফিয়ত চাইলে আমরাও কিছুটা ঘাবড়ে যাই। আমি তো ওর সঙ্গে কথা বলার সাহসই পাইনি। কী জবাব দেব?’

পাকিস্তান ম্যাচ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপ দলে ছিলেন পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। চোটে পড়ে এরপর তিনি ফিরে আসেন দেশে। এই পেসার গতপরশু জানান, বোনের মৃত্যু পরবর্তী আকবরের অবস্থা, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের দুদিন আগে ওনার আপু মারা গেছেন। কিন্তু আকবর ভাইয়ের পরিবার তখনও তাকে বিষয়টি জানায়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাসা থেকে ফোন আসে। আমরা সবাই অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। তখন শোকাবহ একটা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল। আকবর ভাই শক্ত মনের মানুষ। তিনি দুদিন নিজের রুমেই বন্দি ছিলেন। কারো সঙ্গে কথা খুব একটা বলতেন না। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছেন। সবাইকে বলেছেন বিশ্বকাপে মন দিতে।’

দলের ট্রেনার মুজাদ্দেদ সানি জানান, ওই ঘটনার শোক কাটিয়ে আকবরই একাত্ম করেছেন সবাইকে, ‘ওর পরিবার আমাদের জানালেও ওকে জানাতে নিষেধ করেছিল। আকবর যখন জানতে পারল, খুব অভিমান করেছিল। ও খুব চাপা স্বভাবের। তারপরও কেঁদেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে সবাইকে ম্যাচে ফোকাস রাখতে বলেছে। সত্যিই ভিন্ন গ্রহের মানুষ আকবর।’

ফাইনালে রান তাড়ায় চরম বিপদে ছিল বাংলাদেশ। ৭৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে ঠান্ডা মাথায় সেই কঠিন পরিস্থিতি পার করে দলকে ম্যাচ জেতান আকবর। তাতে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্ব আসরের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে বাংলাদেশ। শোককেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন আকবর। শোক ভুলেই অপার মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিলেন। হিমশীতল মনঃসংযোগে বিপদের মধ্যেও ছিলেন অবিচল। বীরের মতো দিয়েছেন নেতৃত্ব। এই ইনিংসের পর আকবরের পরিণত মানসিকতা প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। পুরো সময়ে কোনো এক দ‚রলোক থেকে আকবরকে নিশ্চয়ই সঙ্গ দিয়ে গেছেন তার বোন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ