Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুশফিক ‘আছে’ মুশফিক ‘নেই’!

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের ক্রিকেটে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিল গত বছর অক্টোবরে। যে মাঠ চার-ছক্কা আর উইকেট উদযাপনের ধ্বনিতে মুখর থাকে মিরপুরের সেই হোম অব ক্রিকেট সরব হয়েছিল ক্রিকেটারদের ১৩ দফা দাবীতে। প্রেক্ষাপট ছিল আরো কঠিন, সামনেই যে বহুল আকাক্সিক্ষত ভারত সফর! বিসিবি আর কোয়াবের বিরুদ্ধাচরণ করা সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের সেই আন্দোলনের পরও ভারত সফর হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ে। ক্রিকেটারদের সবাই গিয়েছিলেন হাসিমুখেই। তবে পাকিস্তান সফরে বিসিবি কেন সকলকে রাজি করাতে ব্যর্থ? এমন প্রশ্নটি আজ আবার মোটা দাগে উঠছে মুশফিকুর রহিমের বদৌলতে।

গতরাতেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলতে পাকিস্তানের পথে রওয়ানা দিয়েছে এর আগে টি-২০ সিরিজ খেলে আসা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শেষ ম্যাচে বৃষ্টি বাধা না দিলে তিন ম্যাচের সেই সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জার গøানি নিয়েই দেশে ফিরতে হতো মাহমুদউল্লাহর দলকে। এবার টেস্ট সিরিজ। নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই দলের সবচেয়ে বড় তারকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পথহারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই পাকিস্তান সফর থেকেই নিরাপত্তার অজুহাতে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন মুশফিক। বোর্ড যেখানে দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে রাজি, সরকারের পক্ষ থেকেও যখন দেয়া হলো সবুজ সঙ্কেত তেমন একটি প্রতীক্ষিত সফরে ‘পরিবারকে রাজি করাতে পারেননি’ মুশফিকের এই মন্তব্য আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তারই ভায়রাভাই মাহমুদউল্লাহ যখন সফরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাসিমুখে। প্রশ্ন উঠেছিল তিনি (রিয়াদ) পারলে ইনি (মুশি) কেন নয়?

এর আগেও বিভিন্ন সিরিজের আগে বিভিন্ন প্রয়োজনে, অজুহাতে সফর কিংবা টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার নজির আছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। সবচেয়ে বেশি সেই নজির গড়েছেন সাকিব নিজে আর তামিম ইকবাল। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে বিশ্রামের কথা বলে ছুটি নিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আর ‘পারিবারিক’ কারণে ভারতে যেতে পারেননি তামিম। এবার মুশফিকের ‘না’ বলার পর বোধহয় কিছুটা কঠোর হতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটে অভিভাবক সংস্থা। পাকিস্তান সফরের মাঝেই দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। খেলবে তিন ফরম্যাটেই। এই সিরিজকে ঘিরেই ফের আরোচনায় মুশফিকের ‘ছুটি’।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডই বহাল থাকবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের একমাত্র টেস্ট ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও। অন্যদিকে কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো জানিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পর দেশে ফিরে স্কোয়াড পুনর্বিবেচনা করবেন তারা।

ম‚লত পাকিস্তান সফর থেকে মুশফিকের নাম সরিয়ে নেওয়াটাই ঝামেলা পাকিয়ে বসেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে ও পরে দুটি টেস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে। ফলে মুশফিককে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে না রাখা হলেও রাখতে হবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পরের টেস্টেই পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁকে আবার বাদ দিতে হবে স্কোয়াড থেকে! সবমিলিয়ে কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও চান না দল নির্বাচনে এমন বার বার রদবদল হোক, প্রধান নির্বাচকের ভাষ্যও অনেকটা একই। ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে ফিরতে হলে মুশফিককে দিতে হবে প্রমাণ’ দেশের শীর্ষস্থানীয় এক দৈনিকে এমন মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বিতর্কে যেন ঢেলে দিলেন ঘি। গুঞ্জন আছে পাকিস্তান সফর থেকে মুশফিকুর রহিমের নাম সরিয়ে নেওয়া ভালোভাবে নিতে পারেনি খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে মুশফিকের থাকা-না থাকা নিয়ে অদ্ভুতুড়ে আলোচনার শুরুটা হয় প্রধান নির্বাচকের মন্তব্যের পরতার আগে বোর্ড প্রধান নাজমুল আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, মুশফিক পাকিস্তান সফরে না যাওয়াতে বিসিবি খুশি নয়। প্রথম দফায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাজেভাবে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, বারবার ব্যাটিং-অর্ডার পাল্টাতে তারা ইচ্ছুক নন। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলতে পাকিস্তানে যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আগের দিন প্রধান কোচ ডমিঙ্গোও জানান, একাদশে ধারাবাহিকতা চান তারা, আনতে চান না খুব বেশি পরিবর্তন। অর্থাৎ মুশফিককে নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছেই।

সাদা পোশাকে যিনি বাংলাদেশের ‘অটোমেটিক চয়েজ’, তাকে নিয়ে এমন দোলাচল বিস্ময়েরই! সেই আলোচনা ছুঁয়েছে মুশফিককেও। হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ে বিসিএলের প্রথম রাউন্ড মিস করা মুশফিক বলছেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে ফিরতেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি, না খেলার নেই কোন কারণ, ‘দু-একদিনের মধ্যেই ফিটনেস পরীক্ষা দেব। যদি সব ঠিক থাকে। বিসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে না খেলার কোনো কারণ আমি দেখছি না। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করছি। দলে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া আমার হাতে নেই। তবে আমার চেষ্টা থাকবে ওদের বিপক্ষে খেলার। শুধু টেস্ট না তিন ফরম্যাটই খেলতে চাই। সুযোগ পেলে সেরাটা দিয়েই খেলবো।’

সেই ফিটনেস টেস্ট গতকালই হয়েছে। গতকালই বিষয়টি নিশ্চিত করে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘মুশফিক ও ইমরুলের হ্যামস্ট্রিং আর পায়ের পেশির সমস্যা ছিল। এর মধ্যে ওদের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়াও চলছিল। মুশফিকের চোট গ্রেড-ওয়ান হওয়ায় আমরা আশা করেছিলাম, সুস্থ হতে ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত লাগবে। ইমরুলের চোটে আরও সময় লাগতে পারত। আজ দুজনেরই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। খুব সন্তোষজনকভাবে ওরা পরীক্ষায় উতরে গেছে। এখন দুজনই খেলার জন্য ফিট আছে।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ