নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
গতকাল দিনটি ছিল ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংখ্যায় লিখলে দেখাবে এমন ০২.০২.২০২০। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্যালিনড্রোম তারিখ। ক্যালেন্ডারের হিসেবে ৯০০ বছর পর আসে এমন দিন। ‘মাস/দিন/বছর’ বা ‘দিন/মাস/বছর’- তারিখটি যেভাবেই লেখা হোক না কেন এটি কার্যকর হয় যেকোনো বিপরীত দিক থেকে। এমন দিনকে ক্রিকেটেও যে প্যালিনড্রোমিকে পরিণত করলেন তামিম ইকবাল। ক্রিকেটেও যে এমন দিন আসে না ফি বছর!
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম। দুপুর গড়িয়ে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। তবে ব্যাট হাতে ঠিকই উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন তামিম। ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল ছাড়িয়ে গেলেন পানি পানের বিরতিতে। সেখান থেকে ফিরে দেশসেরা ওপেনার যখন ৩১৩ রানে, বিপক্ষ দলে থাকা রকিবুল হাসান তখন ফিল্ডিং করছেন মিড অনে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সমান রানের ইনিংস নিয়ে এতদিন চ‚ড়ায় ছিলেন একসময়ের জাতীয় দলে তারই সতীর্থ। তামিম এক রান নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন, মিড অন থেকে ছুটে এসে সবার আগে অভিনন্দনটা দিলেন রকিবুলই। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় দিনটি খোদাই থাকল এই মুহ‚র্তটির জন্যও।
তামিম দিন শুরু করেন ২২২ রানে। আগের দিনের মতো গতকালও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন স্বচ্ছন্দে। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইতিহাস গড়া তামিমের ইনিংসটি ৪২৬ বলে অপরাজিত ৩৩৪ রানের। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম শ্রেনীর ট্রিপল সেঞ্চুরিটাকে আরও অনন্য করতে বাকি থাকল না কোন কিছুর কমতি। রকিবুল ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৬০০ বলে, তামিম তা আনলেন ৪০৭ বলে। সময়ের হিসেবেও রকিবুলকে পেছনে ফেলেছেন তামিম। ৬৪০ মিনিট লেগেছিল ডানহাতি রকিবুলের, ৫৬০ মিনিটেই তিনশোর মাইলফলকে পৌঁছে যান বাঁহাতি ওপেনার।
তার ট্রিপল সেঞ্চুরিতে দেশের ক্রিকেটের দীর্ঘ অপেক্ষাও ফুরালো। সেই ২০০৭ সালে জাতীয় লিগে বরিশালের হয়ে সিলেটের বিপক্ষে ফতুল্লায় অপরাজিত ৩১৩ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন রকিবুল। এতদিন এটিই ছিল দেশের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিমের আগের সর্বোচ্চ ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬ রান করেছিলেন তিনি। আর জাতীয় দলের বাইরে প্রথম শ্রেণিতে তার আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল জাতীয় লিগে। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে ১৯২ রান করেছিলেন তিনি।
এমনিতে রেকর্ড, পরিসংখ্যান নিয়ে আলাদা প্রীতি আছে তামিমের। আগের দিন ২২২ রানে অপরাজিত থাকায় জানতেন সামনে তার জন্য অপেক্ষায় আছে কি। ম্যাচ এবং দলের পরিস্থিতিও ছিল অনুক‚লে। মুস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মুকিদুল ইসলাম আর শুভাগত হোমদের উপর দুই দিন ধরে ছড়ি ঘুরিয়েছেন তিনি। মধ্যাঞ্চলের কোন বোলার তাকে আউট করা দ‚রে থাক, সামান্য ধন্দেও ফেলতে পারেননি। ২ উইকেটে ৫৫৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে তামিমের দল প‚র্বাঞ্চল। মধ্যাঞ্চলের ২১৩ রানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ৩৩২ রানের লিড নিয়ে তারা আছে ইনিংস ব্যবধানে জেতার আশায়।
রকিবুলের ওই ইনিংসের পর ট্রিপল সেঞ্চুরির সবচেয়ে কাছে গিয়েছিলেন নাসির হোসেন। ২০১৭ সালে জাতীয় লিগে রংপুরের বিপক্ষে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ২৯৫ রানে। ২০১৩ সালে বিসিএলে মধ্যাঞ্চলের হয়ে প‚র্বাঞ্চলের বিপক্ষে বগুড়ায় ২৮৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মার্শাল আইয়ুব। ২০১৫ সালে জাতীয় লিগে বরিশালের হয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে বিকেএসপিতে ২৮২ করেছিলেন মোসাদ্দেক। আর ওপেনার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল লিটন দাসের। ২০১৮ সালে বিসিএলের ম্যাচেই মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে প‚র্বাঞ্চলের হয়ে ২৭৪ রান করেছিলেন লিটন।
যেকোনো ট্রিপল সেঞ্চুরিই দারুণ কিছু। কিন্তু তামিম যেভাবে তা করেছেন তা ইনিংসের মাহাত্ম বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন ৭৮.৪০ স্ট্রাইকরেটে। স্ট্রোক ঝলমলে ইনিংসে দেশসেরা ওপেনার মেরেছেন ৪২ চার। দীর্ঘ সময় ব্যাট করেও শরীর হয়নি নিস্তেজ। প্রথম তিনশতে ছক্কা না থাকলেও মাইলফলক ছোঁয়ার পর মারেন তিনটি ছক্কা। ট্রিপল সেঞ্চুরির পাশাপাশি আরও দুটি রেকর্ড এই ইনিংসে গড়েছেন তামিম। তিনশ ছোঁয়ার সময় ইনিংসে চার ছিল ৪০টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসমানদের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি চার ছিল মোসাদ্দেক হোসেনের। জাতীয় লিগে ২৮২ রানের ইনিংসের পথে ৩৭টি চার মেরেছিলেন মোসাদ্দেক। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে এমন একটা ইনিংস নিশ্চিতভাবেই তামিমের আত্মবিশ্বাসও তুলবে চ‚ড়ায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।