নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সিরিজ শুরুর আগেই প্রত্যাশা ছিল গগণচুম্বী। থাকবে না-ই বা কেন? ক্রিকেটে নিজেদের শক্তির সঙ্গে যদি প্রতিপক্ষের দুর্বলতা যোগ হয় সেটাও ভিন্নধর্মী এক শক্তি। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষদল হলেও গত বছরের পরিসংখ্যানটা ছিল একবারেই নিম্নমানের। দশটি ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছিল প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হকের দল। বছরের প্রথমেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হার। ইংল্যান্ডে একমাত্র ম্যাচও হার। তারপর জয়ের ধারায় ব্যাঘাত ঘটায় শ্রীলঙ্কার অনভিজ্ঞ দলটি। লাহোরে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। বছরের শেষটাও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০তে হারে বাবর আজমের দল। বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল আরেকটি ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে একমাত্র জয়টি এসেছিল গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে। প্রায় ১ বছর (১১ মাস) ধরে এই ফরমেটে জয়হীন ছিল পাকিস্তান। বিপরীতে গত বছরে খেলা সাত ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় পেয়েছিল টাইগাররা। তাই কোন সমর্থক যদি বড় প্রত্যাশা করে থাকেন, তাতে সমর্থন পেতে পারেন অন্তত পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলবো কি খেলবো না? প্রায় দুই সপ্তাহ যখন এমন দোলাচলে সমগ্র দেশবাসী, তখনই এল তিন তিন বার পাকিস্তান সফরের ঘোষণা। যাক, অন্তত ধোঁয়াশা কাটল। তারপর শুরু হয়ে গেল সিরিজ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মিরপুর ক্রিকেটপাড়ায় ঢুঁ মারতেই আশাবাদী মানুষের কন্ঠে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে জয়ের স্মৃতিটা তখনও তাজা। ‘ভারতকে হারাতে পারলে পাকিস্তানকে কেন নয়?’ তাদেরতো বর্তমান অবস্থা ভালো না। ঘরের মাটিতেই দুর্বল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারটাই হয়ে উঠছিল প্রধান অনুপ্রেরণা। সিরিজ শুরুর আগে দলের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম জানিয়েছিলেন পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন না তিনি। তাতে দলের শক্তি খর্ব হয়েছে ঠিকই, তবে আত্মবিশ্বাস কমেনি। নতুনরা কিছু করে দেখাবে। যেমনটা লাহোরে করে দেখিয়েছিল লঙ্কান তরুণ ক্রিকেটাররা।
প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে চলতে থাকল সমীকরণ। তবে ম্যাচের দিন মাহমুদউল্লাহ প্রথমেই জয়ী হলেন টসযুদ্ধে। নিলেন ব্যাটিং। ওপেনাররা খেলল ঠিক ১১ ওভার। তবে উদ্বোধনী জুটি এত বল খেললেও প্রত্যাশিত রান আসেনি তামিম ইকবাল কিংবা মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাট থেকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়ানডে ধাঁচের ব্যাটিং। ম্যাচটাকে আর এগুতে দিলনা। এরপর সেট হওয়া এই দুই ওপেনার ফিরেও গেলেন প্রস্তর যুগের স্ট্রাইকরেট নিয়ে। তারপর বাকিরাও খেললেন একই স্টাইলে। ফলাফল, ১২০ বলের খেলায় ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান। সেদিন বোলাররা শুরুতেই দিয়েছিলেন প্রতিদ্ব›দ্বীতার আভাষ। তবে এই রানে আর কতদূর কি করা যায়। তাও পাকিস্তানকে জয়ের জন্য খেলতে হয়েছে শেষ ওভারও। মাঝে মুস্তাফিজুর রহমান চার ওভারে ৪০ রান খরচ না করলে হয়তো অন্যকিছুও দেখতে পাওয়া যেত।
দ্বিতীয় ম্যাচেও টসে জিতলেন টাইগার দলপতি। ব্যাটিংই বেঁছে নিলেন। রান উঠল আরও কম। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৬। পাকিস্তান জিতল বীরের বেশে। ২০ বল হাতে রেখে মাত্র এক উইকেট খুইয়ে। তামিমের অবদান সেখানে ৫৩ বলে ৬৫ রান। স্ট্রাইকরেট ১২২.৬৪। বাংলাদেশ হারল বাবর আজম-মোহাম্মদ হাফিজের কাছেই। বাবর ৪৪ বলে অপরাজিত ৬৬ (স্ট্রাইকরেট ১৫০) ও হাফিজ ৪৯ বলে ৬৭ (স্ট্রাইকরেট ১৩৬.৭৩) রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। তৃতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। মাঠে গড়ায়নি টসটাও।
তাহলে পুরোটাই হতাশা। ব্যাটহাতে তামিম ছাড়া দলগত ব্যর্থতা। রান আসেনি কারও ব্যাট থেকে। গড়ে ওঠেনি কোন পার্টনারশিপ। বাংলাদেশ যতই ছিল রক্ষণাত্বক, ততই আক্রমণাত্বক হয়েছে পাকিস্তান। বলহাতে দলের সেরা বোলার মুস্তাফিজ একাই অনেকাংশে ডুবিয়েছেন দলকে। পুরো সিরিজে ৭ ওভার বল করে দিয়েছেন ৬৯ রান। ইকোনমি রেট প্রায় দশ (৯.৮৫)! উইকেট শিকারের সংখ্যা মাত্র একটি।
এই হতাশার ভীড়েও খুঁজে দেখলে প্রাপ্তি বলতে গেলে তামিমের ব্যাটিং। এই সিরিজে সর্বোচ্চ রান (১০৪) এসেছে তার ব্যাট থেকেই। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান (মোটের উপর পাঁচে) এসেছে নাঈমের (৪৩) ব্যাট থেকে। কিন্তু ভাবাচ্ছে তাদের স্ট্রাইক রেট। তামিমের ১১৯.৫৪ ও নাঈমের ১০২.৩৮। যা মোটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ পরিসংখ্যান নয়। বিপরীতে এ সিরিজে হাফিজের স্ট্রাইটরেট ১২৯.২৩, বাবরের ১৪৩.৪৭ ও শোয়েব মালিকের ১২৮.৮৮। পার্থক্যটা এখানেই। সংক্ষিপ্ত পরিসরের এই খেলায় রান যে আরও দ্রæতগতিতে করতে হবে, তা স্পষ্ট। অন্যদিকে বলহাতে শফিউল ইসলামের অর্জন তিনটি উইকেট। যা এই আসরে সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে র্যাঙ্কিং তেমন বড় কোন বিষয় না। নির্দিষ্ট দিনে যেকেন দল জিততে পারে। বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করেন। ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশর চেযে অনেক কম অভিজ্ঞ দল আফগানিস্তানও সাহসের সঙ্গে খেলে টি-টোয়েন্টি। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে কমবেশি বরাবরই এগিয়ে তারা। মন্ত্রটা কি? বেশি কিছু না। নিজেদের শক্তির উপর আস্থা রাখা ও তার পূর্ণ ব্যবহার করা। যা এখন পর্যন্ত পারছে না বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। সবশেষে এই সিরিজে প্রাপ্তি বিবেচনা করতে গেলে কি সত্যিই কিছু পাওয়া যায়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।