নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জয়, সাফল্য কিংবা লড়াই। টেস্টে তিনটিই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের যোগ্যতা, মানসিকতা ও সামর্থ্যরে প্রতিশব্দ। ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে দলের অধিনায়কের কন্ঠেই শোনা গিয়েছিল সেই হাহাকার। তার কথায় না ছিল অদম্য জয়ের স্পীহা, না ছিল বুক চিতিয়ে লড়াই করার মানসিকতা। শুধু খেলতে হবে বলেই হয়তো খেলা। পুরো সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের শরীরী ভাষা ছিল চোখে পড়ার মতোই। বাংলাদেশ যখন ব্যাটিং করে তখন সেটা হয়ে যায় বোলিং পিচ, আর বোলিংয়ের সময় হয়ে ওঠে ব্যাটিং পিচ। কট্টর সমর্থকদের এই তত্ত্ব অনেক সময়ই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পক্ষে। কিন্তু এবার? পারতপক্ষে প্রশ্ন উঠেই যায়, আদৌ কি এই দলের যোগ্যতা আছে টেস্ট খেলার? অথবা টেস্টের মানসিকতা আছে কতজনের? তারপরই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে, আসলেই কি টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব বোঝে দলের ক্রিকেটাররা?
অথচ খুব বেশিদিনের কথা নয়, মাত্র এক বছর আগে (২০১৮ সাল) আট টেস্ট খেলে তিনটিতেই ছিল জয়। চারটিতে হার ও একটি ড্র। যদিও জয়গুলো এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। তবুও জয়। আর ২০১৯ সালে পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকয়টিতেই হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে চারটিই ইনিংস ব্যবধানে! অর্থাৎ, প্রতিপক্ষকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংই করতে হয়নি। একটি ম্যাচে ছিল রানে হার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে। চট্টগ্রামের মাঠে ২২৪ রানের ব্যবধানে। অনেকেই বলতে পারেন, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ছাড়া দলের ভারসাম্যে অনেকটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সে বিষয়ে ক্রিকেটের বড় বড় বিশ্লেষকরাও একমত। তবে একটি বিষয় মনে করিয়ে দিই, এ বছরের প্রথম তিন টেস্টে দুটিতে ইনিংস ব্যবধানে হার ও একটি আফগানদের বিপক্ষে। সেখানে বাংলাদেশ দল মাঠে নেমেছিল পূর্ণ শক্তি নিয়েই।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট, শক্তির বিচারে দুর্বল হলেও মানসিকতা মজবুত থাকলে হিমালয় পর্বতও জয় করা যায়। রশিদ খানের নবীন দল তা দেখিয়েও গেছে। পুরো ম্যাচের একটি সেশনও তারা ছেড়ে কথা বলেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটি বিষয় ছিল মনে রাখার মতোই। মুমিনুল হকের আগেও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ১০জন অধিনায়ক। প্রত্যেকেই হারের পর সেই হার থেকে ‘শিক্ষা’ নেয়ার কথা বলেছেন উঁচু কন্ঠেই। এবারও সেই রীতি ভেঙে বেরুতে পারেননি বাংলাদেশ টেস্ট দলের ১১তম অধিনায়ক মুমিনুল। কথা হলো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড অথবা ভারতের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া হয়তো কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু আফগান ম্যাচ থেকে কি শিক্ষা নেয়া যেত না?
শিখছি-শব্দটি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে গা বাঁচানোর একটি উৎকৃষ্ট ঢাল। অথচ গা বাঁচালেও দায় কিন্তু এড়ানো সম্ভব নয়। ভারতের মাঠে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ রানে হারের পর কোলকাতায় ইনিংস ও ৪৬ রানের হার। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছরের পুরোনো এই দলের বর্তমান অবস্থায় তুলনা করা যায় কেবল জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। জয়ের হারের দিক দিয়ে এই দুই দলই বাংলাদেশের উপরে ও নিচে। ১২ দলের জয়ের হারের দিক দিয়ে জিম্ববুয়ে ১০ নম্বরে (১১.২১%), তারপর ১১তম অবস্থানে বাংলাদেশ (১১.১১%) এবং সবশেষে মাত্র তিন ম্যাচ খেলে এখনও জয়হীন আয়ারল্যান্ড (০%)। উল্টোদিকে সবার ওপরে আফগানিস্তান (৬৬.৬৬%)।
ভারত সিরিজ শেষে বাংলাদেশ দলের সর্বাঙ্গেই ব্যথা। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং- প্রতিপক্ষের চেয়ে যোজন যোজন দূরত্বে ছিল মুমিনুলদের অবস্থান। প্রতিবেশী দলটির বিপক্ষে এই নাজুক ফলের পেছনে কারণ কি? পাঠকদের জানার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হল।
ভারত ভীতি : হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই ভারত ভীতির বিষয়টি মাথায় ধরবে। প্রতিবেশী দলটি শক্তির বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বেশ কয়েকবার ধারের কাছে গেলেও নামের ভয়েই শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিল টাইগাররা।
মানসিকতার অভাব : দলের মানসিকতার চরম অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল টেস্ট সিরিজের আগেই। দর্শকদের টেস্ট ম্যাচকে কেন্দ্র করে কোন প্রত্যাশা নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন টাইগার দলপতি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে পুরো সিরিজেই।
দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং : সিরিজের দুই ম্যাচেই দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং দেখা গেছে দলে। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ¯্রােতের বিপরীতে রড়ে গেছেন তিনি। এ সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও (১৮১) ছিলেন এই ডানহাতি। কিন্তু অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে পাননি যোগ্য সমর্থন। চার ইনিংস ব্যাট করে বাংলাদেশ দলের মোট রান ৬৬৪। উল্টোদিকে ভারতের চার ব্যাটসম্যান মায়াঙ্ক আগারওয়াল (২৫৭), অজিঙ্কে রাহানে (১৩৭), বিরাট কোহলি (১৩৬) ও চেতেশ্বর পূজারার (১০৯) সংগ্রহ ৬৩৯। বাংলাদেশের দুই ইনিংসের প্রায় সমান!
রক্ষণাত্বক ফিল্ডিং : কম সংগ্রহ দাঁড় করানোর পরও আবু জায়েদ, এবাদত হোসেন ও আল আমিনের দৃঢ়তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপর যখনই চড়াও হয়েছে বোলাররা, ঠিক তখনই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের রানের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং। স্লিপে ফিল্ডার বাড়ানোর বদলে বাড়িয়েছে সীমানায়। যার ফলে ভারতীয়রা খেলতে পেরেছে চাপমুক্ত।
অহেতুক শর্ট নির্বাচন : টিকে থাকাই যখন চ্যালেঞ্জ, তখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে ফিরে গেছেন সাঝঘরে। কখনও বড় শর্ট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। অথচ রাহী-এবাদতদের বোলিং কতটা সূক্ষভাবে খেলেছে ভারতীয়রা। অথচ এক মুশফিক ছাড়া কেউই দাপট দেখাতে পারেননি।
থিতু হয়ে ফিরে যাওয়া : প্রথম টেস্টে সাদমান ক্রিজে বেশ থিতু হয়েও ফিরে গেছেন। পারেননি মাহমুদউল্লাহও। সঙ্গীর অভাবে নিজের অর্ধশত রানকে শতকে পরিণত করতে পারেনি মুশফিক। নিস্প্রভ মিরাজের ব্যাটও। ওপেনার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের জন্য টেকাই হয়ে গিয়েছিল দায়। আর অধিনায়ক মুমিনুল ইন্দোরের ব্যর্থতার পর কোলকাতায় করেছেন ‘জোড়া শূন্য’ রানের রেকর্ড।
দায়সারা ‘শিখছি’ তত্ত্ব : পূর্বসূরীদের কাছ থেকে ভালো কিছু না শিখলেও বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড়ই হারের পর সেখান থেকে শেখার বিষয়টি তুলে ধরেছেন বারবার। তবে এখন পর্যন্ত এই বাংলাদেশ কি শিখেছে- তা জানা নেই কারো। কেননা শেখার পর পরীক্ষায় কখনোই পাসমার্ক তুলতে পারেনি দলটি।
বোলিংয়ের লেন্থ : টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে জরুরি লেন্থ ঠিক রেখে বল করা। অথচ উইকেট না পেলেই মাথা ঠিক রেখে বল করতে দেখা যায়নি বোলারদের। ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে যা ছিল সবচেয়ে জরূরী, বাংলাদেশ সেখানে কোন গুরুত্বই দিতে পারল না।
কাঠামোগত সমস্যা : ইন্দোর টেস্টের পরই পুরো ক্রিকেটের কাঠামোগত সমস্যার কথা বলেছিলেন দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। সেই সুরে সুর মিরিয়েছিলেন অধিনায়ক মুমিনুলও। এখন এই বিষয়টিও দেখা দরকার গুরুত্ব সহকারে।
কোচের ক্ষমতা : দলে কোচ যে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার রাখার কথা, সেখান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সময়েই ক্রিকেটপাড়ায় বিষয়টি নিয়ে হয়েছে ঢ়ের আলোচনা।
টেস্টে ১২ দলের জয়-পরাজয়ের হার
দল ম্যাচ জয় হার সাফল্যাঙ্ক
আফগানিস্তান ৩ ২ ১ ৬৬.৬৬
অস্ট্রেলিয়া ৮২৬ ৩৮৯ ২২৪ ৪৭.০৯
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৫ ১৬৪ ১৪৭ ৩৭.৭০
ইংল্যান্ড ১০১৭ ৩৬৮ ৩০৩ ৩৬.১৮
পাকিস্তান ৪২৪ ১৩৬ ১২৯ ৩২.০৭
শ্রীলঙ্কা ২৮৫ ৯১ ১০৮ ৩১.৯২
উইন্ডিজ ৫৪৪ ১৭৩ ১৯৫ ৩১.৮০
ভারত ৫৪০ ১৫৭ ১৬৫ ২৯.০৭
নিউজিল্যান্ড ৪৩৬ ৯৯ ১৭২ ২২.৭০
জিম্বাবুয়ে ১০৭ ১২ ৬৮ ১১.২১
বাংলাদেশ ১১৭ ১৩ ৮৮ ১১.১১
আয়ারল্যান্ড ৩ ০ ৩ ০.০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।