পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পাঁচ বছর আগে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মরহুম আনিসুল হক রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে সুদীর্ঘকাল দখলে থাকা ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছিলেন। উচ্ছেদ করে সড়কটিকে পার্কিংমুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছিলেন। সড়কটির উন্নয়ন করে এর সৌন্দর্যবর্ধনও করেছিলেন। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ এবং যানজটও অনেকটা কমেছিল। তার এই উদ্যোগ এখন ভেস্তে গেছে। তিন সংগঠনের তালিকাভুক্ত প্রায় ১০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পুনরায় সড়কটি জুড়ে সারবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে। শ্রমিক নেতারা বড় ট্রাক বাবদ ২০০ টাকা ও কাভার্ডভ্যান ১২০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে এ সুযোগ করে দিচ্ছে। তেজগাঁওয়ে ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান রাখার নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। মূল সড়কেই রাখা হচ্ছে। এতে এ সড়কে পুনরায় যেমন যানজট দেখা দিচ্ছে, তেমনি সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ট্রাক স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে। ফুটপাতে বসেছে শতাধিক দোকান। রাতের বেলা স্থানটি ছিনতাইকারি ও মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, দখল হওয়া এই সড়ক উদ্ধারে অচিরেই উদ্যোগ নেয়া হবে।
রাজধানীর ফুটপাত ও সড়ক থেকে শুরু করে চারপাশের নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের ঘটনা নতুন নয়। কয়েক মাস পরপরই বেশ আয়োজন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর পুনরায় উচ্ছেদকৃত জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম এখন ‘উচ্ছেদ-উচ্ছেদ’ খেলায় পরিণত হয়েছে। অনেকটা ইঁদুর-বেড়াল খেলার মতো। অবৈধ দখলকারীরাও জানে, কিছুদিন এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে, তারপর আবার তারা দখল করতে পারবে। বাস্তবেও তাই হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় বছর খানেক আগে গুলিস্তানের ফুটপাত দখলমুক্ত করে। কয়েক দিন না যেতেই তা পুনরায় দখল হয়ে যায়। পুলিশ দেখলে ফুটপাতের দোকানিরা দোকান নিয়ে সরে পড়লেও কিছুক্ষণ পর আবার দখল করে বসে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে ম্যানেজ করেই দোকানিরা ফুটপাতে বসছে। এখন গুলিস্তান এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকার সড়কই দখল হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে বেশ ঘটা করে বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর অন্যান্য নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। অবৈধ দখলে থাকা অনেক জায়গা উদ্ধারও করা হয়। তবে উচ্ছেদের পর এসব জায়গা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, উচ্ছেদকৃত জায়গায় সবুজ বনায়ন, ওয়াক ওয়ে, পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। দুঃখের বিষয়, এসব কথা এখন যেন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনরায় ধীরে ধীরে দখল হতে শুরু করেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে বিআইডব্লিউটিএ এই উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়েছিল, সেই বিআইডব্লিউটিএ-ই সদরঘাটে দখলমুক্ত জায়গায় বাজার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আর্থিক সুবিধা দিতেই বাজার বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে এত ঘটা করে এবং বিপুল অর্থ ব্যয় করে কেন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলো? উচ্ছেদ করতে যে অর্থ ব্যয় হলো, তার দায় কে নেবে? বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে স্থাপনা ও বিলবোর্ড বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে। তারা ভেঙ্গে দিয়েই চলে যাচ্ছে। এসব জায়গা যে পুনরায় দখল হবে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে? উচ্ছেদ করতে গিয়ে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, পুনরায় দখল হলে তা যে অপচয়ের খাতায় চলে যাবে, তার দায়ই বা কে নেবে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব উচ্ছেদ অভিযান কেবল লোক দেখানোতে পরিণত হচ্ছে। অবৈধ উচ্ছেদের নামে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ অপচয়ের এই অধিকার সিটি করপোরেশনসহ কোনো কর্তৃপক্ষের নেই।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্ছেদের নামে যে অভিযান পরিচালনা করা হয়, তা অর্থ লোপাটের একটি উপলক্ষ মাত্র। তা নাহলে, উচ্ছেদ স্থায়ী রূপ লাভ করবে না কেন? আমাদের কথা হচ্ছে, উচ্ছেদের নামে জনগণের অর্থ লোপাট ও অপচয়ের এই আয়োজন বন্ধ করতে হবে। উচ্ছেদ করতে হলে তা স্থায়ীভাবেই করতে হবে। অবৈধ দখলকারীরা যত প্রভাবশালী কিংবা শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা ক্ষমতাসীন দলেরই হোক কিংবা অন্য কেউ হোক-তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না। অবৈধ দখলকৃত জায়গা কেবল উচ্ছেদ করেই দায় সারলে চলবে না, তা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্ছেদ করে খালি জায়গা দীর্ঘসময়ের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। একদিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে হবে, পাশাপাশি তা সংরক্ষণের সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। যারাই পুনরায় দখল করবে, তাদের বিরুদ্ধে অধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদন্ড দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।