পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে সড়ক, ফুটপাত দখল করে গড়েওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। এরপরও স্বস্তি নেই নগরবাসীর। উচ্ছেদের পর ফের বেদখল হচ্ছে সাধারণ মানুষের হাঁটা-চলার পথ। সড়ক, ফুটপাতে বিশৃঙ্খলায় নগরজুড়ে তীব্র যানজট। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। দখলদাররা যাতে নতুন করে স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে সেজন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষের বসবাস। নগরীতে যানবাহনের তুলনায় সড়কের পরিমাণ একেবারেই অপ্রতুল। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দরনগরী হওয়ায় মহানগরীর সবকটি সড়কে অতিরিক্ত যানবাহন বিশেষ করে ভারি যানবাহনের চাপ। নেই পর্যাপ্ত বাস, ট্রাক টার্মিনাল, পার্কিং প্লেস। এ অবস্থায় সড়ক, ফুটপাত বেদখল হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়কের ব্যস্ততম মোড় ও পয়েন্টে ফুটপাত আর রাস্তা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়কের ওপর বসছে হকারদের পণ্যের পসরা। রাস্তার উপরই বাস, ট্রাক টার্মিনাল। অঘোষিত যানবাহনের স্ট্যান্ড। রাখা হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী, দোকানের মালামাল। মহানগরীর ২৮১ কিলোমিটার ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই এখন বেদখলে। এর ফলে নগরীতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বিগত এক দশক ধরে মহানগরীতে নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্প কাজের জন্য বছরের পর বছর চলছে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। এ নগরীর অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানিবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে। নগরীর বিশাল এলাকা নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে বেশিরভাগ সময় সড়কগুলো থাকে ভাঙাচোরা। এ অবস্থায় সড়ক, ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় জনদুর্ভোগ এখন নিত্যদিনের।
শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হলেও অঘোষিত টার্মিনালের কারণে তার সুফলও মিলছে না। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বিশেষ করে বন্দরমুখী সড়কে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ জট লেগে যাচ্ছে। যানজটে স্থবির বন্দরনগরী। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিটি কর্পোরেশন মাঠে নামে। গত এক মাস ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, ফুটপাত দখল করে গড়েওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সড়কে গড়ে তোলা দোকানপাট বুলডোজারে ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আবার ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়েওঠা বিভিন্ন ভবনের অবৈধ অংশও গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
গত কয়েকদিনে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং রোডের সাগরিকা ও অলঙ্কার অংশে প্রায় তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সড়ক দখল করে গড়ে তোলা দোকানপাট এবং সে সাথে ভবনের বর্ধিতাংশ অপসারণ করা হয়। এর ফলে সাগরিকা থেকে অলঙ্কার হয়ে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে দুইপাশ জঞ্জালমুক্ত হয়েছে। উচ্ছেদের শিকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকেরা এতে অসন্তুষ্ট হলেও এলাকার সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, এখন সহজেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে। সড়কে আগের মত তেমন যানজটও নেই।
আগেই ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সড়কটিতে অবৈধ টার্মিনাল সরিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে আগের তুলনায় গতি এসেছে। যানজটও এখন সহনীয়। এতে খুশি আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারি যানবাহনের চালকেরা। তবে তাদের আশঙ্কা তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে এ সড়কটিতে আবারও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে পারে। পোর্ট কানেকটিংয়ের মত নগরীর ব্যস্ততম আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, জিইসি মোড়, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ-বাদামতল, আউটার স্টেডিয়াম, চকবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সিটি কর্পোরেশন। ফলে এসব এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছে।
তবে কয়েকটি এলাকায় উচ্ছেদের পর ফের নতুন করে হকারদের পণ্যের পসরা বসানো হচ্ছে। এতে আগের মতই সড়ক, ফুটপাত বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর নতুন করে কাউকে সড়ক, ফুটপাত দখল করতে দেয়া হবে না। যেসব এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে সেসব এলাকা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নামানো হয়েছে। বিশেষ পোশাক পরা এ ফোর্সের সদস্যরা শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক ও ফুটপাত দখল হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিবেন। সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেমকে প্রধান করে ২০ সদস্যের এ স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের জনবল স্বল্পতার কারণে উচ্ছেদ অভিযান চলছে ধীরগতিতে। মহানগরীর অনেক এলাকায় এখনও অবৈধ স্থাপনা রয়ে গেছে। ব্যস্ততম নিউমার্কেট মোড়, স্টেশন রোড, আমতল, জুবিলী রোড, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, এক্সেস রোড, আইস ফ্যাক্টরী রোড, মাঝিরঘাট সড়ক, ইপিজেড মোড়, বন্দরটিলা, সিমেন্ট ক্রসিং, কাটগড়, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ-বড়পোল, কে বি আমান আলী রোড, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, মুরাদপুর, খাজা রোড, অক্সিজেন, বায়েজিদসহ বেশিরভাগ এলাকায় এখনও সড়ক, ফুটপাত বেদখল রয়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়ক ও সড়ক মোড়ে ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়েওঠায় চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। এসব এলাকায় চলতে গিয়ে নগরবাসী দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। ফুটপাতের ভিড়, জঞ্জালে পকেটমার, ছিনতাইকারীর উৎপাত চলছে। পথ চলতে গিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন খোয়া যাচ্ছে।
ব্যস্ত এসব এলাকায় চলাচলরত গণপরিবহন থেকেও যাত্রীদের মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীরা ভিড়ের মধ্যে ওৎ পেতে থাকে। মোবাইল, মানিব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে দ্রæত মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ফুটপাত দখলমুক্ত হলে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যস্ততম এ মহানগরীতে নেই পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ। এর ফলে ফুটপাত দিয়ে চলাচলে ব্যর্থ লোকজন সড়ক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিক্ষার হচ্ছেন। সড়ক এবং ফুটপাত দখলমুক্ত না হলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে। তবে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন মানুষের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত এবং সেইসাথে সড়কে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান চলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।