Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বেশ কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, এমনকি শীতলক্ষ্যা নদীর অবৈধ দখল হয়ে থাকা জায়গা উদ্ধারে অভিযান চলেছে। অনেক জায়গা উদ্ধার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বহু প্রভাবশালীর গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। উদ্ধার করে বলেছে, উদ্ধারকৃত এসব জায়গায় ওয়াক ওয়ে, পার্ক, বনায়নসহ নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এতে নগরবাসী আশান্বিত হলেও দেখা যাচ্ছে, উদ্ধারকৃত এসব জায়গা সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে সেগুলো ধীরে ধীরে পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখলে থাকা নদ-নদীর জায়গা উদ্ধারের পর এখন শুরু হয়েছে রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা ভবন ও দোকানপাট এবং রেলপথের পাশের অবৈধ দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান। দেখা যাচ্ছে, উদ্ধারের পরপর কয়েক দিন না যেতেই সেগুলো পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাওরান বাজারে ডিএনসিসি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। তিন দিন না যেতেই তা আবার দখল হয়ে গেছে। অন্যদিকে প্রায় ৮ মাস আগে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইসলামবাগে আভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এখন সেখানে আবার মালামাল রেখে তা দখল করা হয়েছে। মাস খানেক আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের পাশে শ্যামপুরে গড়ে উঠা অবৈধ কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দেখা যাচ্ছে, এখন তা পুনরায় দখল হয়ে গেছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের এই অভিযান এখন অনেকটা খেলো হয়ে পড়েছে। উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলায় পরিণত হয়েছে। তাহলে এই অভিযান চালিয়ে কী লাভ হচ্ছে?

যারা প্রভাবশালী বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত তাদের পক্ষে সরকারি জায়গা-জমি দখল করা সহজ। তারা জানে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের তোয়াজ করে চলে। আবার অবৈধ দখলকারীরা এসব জায়গায় যেসব দোকানপাট ও হকারদের বসতে দিয়ে মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে, তা থেকেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা মাসোহারা পায়। ফলে তারাও চায় এই অবৈধ দখল বজায় থাকুক। মুফতে যদি মাস শেষে অর্থ পাওয়া যায়, তবে কে অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করতে চাইবে? বলা যায়, অবৈধ দখলকারী ও প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তার সমঝোতার কারণেই উচ্ছেদ অভিযান সাফল্যের মুখ দেখছে না। পত্র-পত্রিকায় অবৈধ দখলদারিত্ব নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তারা একটু নড়েচড়ে বসে। মানুষকে দেখানোর জন্য বুলডোজার নিয়ে এবং পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ডেকে সাড়ম্বরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। দেখায় আমরা উচ্ছেদ করছি। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত জায়গা সংরক্ষণে নানা রঙ্গিন স্বপ্ন দেখানো হয়। পরিহাসের বিষয় এই যে, তাদের এই কথা আর বাস্তবায়ন হয় না। কিছুদিন না যেতেই তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। তখন বিষয়টি ক্যামেরা ট্রায়ালে বা লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হয়। এই লোক দেখানোর বিষয়টি, বছরের পর বছর ধরে চলছে। স্থায়ীভাবে আর উচ্ছেদ হচ্ছে না। এটি এখন ইঁদুর-বেড়াল খেলায় পরিণত হয়েছে। এখন উচ্ছেদ অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি ‘উৎসবে’র বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হলে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। সেই অর্থ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে অভিযানের সাথে জড়িতদের পকেট ভর্তি হয়। যদি তা না হতো, তবে বারবার কেন এই অভিযান চালাতে হবে? আমরা বহুবার বলেছি, অবৈধ দখলে থাকা যেসব জায়গা উদ্ধার করা হবে, তা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। উচ্ছেদ হওয়ার সাথে সাথে জায়গাটি ঘিরে ফেলে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এক লাইন ধরে উচ্ছেদ হলেও তা অরক্ষিত অবস্থায়ই ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে যা হওয়ার তাই হয়। অবৈধ দখলকারীরা একটু একটু করে পুনরায় দখলে নিয়ে নেয়। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবৈধ দখলকারীদের বেশ ভাল সখ্য এবং সমঝোতা রয়েছে। ফলে উচ্ছেদ অভিযান কোনকালেই সাফল্যের মুখ দেখে না এবং দেখছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে জনগণের ট্যাক্সের এ অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা নয়। যেহেতু অবৈধ দখলকারীরা প্রভাবশালী এবং তাদেরকে নোটিশ দিয়েও কোনো কাজ হয় না, তাই ভারি মেশিনপত্র নিয়েই জোর করে তাদের উচ্ছেদ করতে হয়। এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থের জোগান সরকারকেই দিতে হয়। আর সরকার তা জোগান দেয় জনগণের ট্যাক্সের পয়সা থেকে। যদি উচ্ছেদ অভিযান সফল এবং স্থায়ী হতো, তাহলে এই অর্থ খরচের একটা যৌক্তিকতা থাকত। অর্থ খরচ করে বারবার অভিযান পরিচালনার পর যখন তা সফল হয় না, তখন তা যে জনগণের অর্থের চরম অপচয়, বোধকরি তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। জনগণের এই অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অধিকার কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আছে? আমাদের কথা হচ্ছে, একবার উচ্ছেদ করলে তা কেন পুনরায় দখল হবে? এর কি কোনো প্রতিকার নেই? বছরের পর বছর ধরে কি এই উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা চলবে? এটা কি মেনে নেয়া যায়? যারা অবৈধ দখলদার তারা কি করে পুনরায় দখলের সাহস পায়? আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, উচ্ছেদ অভিযানের নামে এ খেলা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত জায়গা অতি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনার কথা বললে হবে না, তা ত্বরিৎ বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা অবৈধ দখলদার তাদের বিরুদ্ধে যেমন আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তেমনি যারা পুনরায় দখল করবে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ দখলদারদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। এ কাজটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদ

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন