Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচটি স্মরণীয় অ্যাশেজ সিরিজ

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ৮:৩৭ পিএম

বৃহস্পতিবার থেকে এজবাস্টনে শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার মর্যাদাকর অ্যাশেজ সিরিজ। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার এই সিরিজকে সামনে রেখে চলুন অতীতের পাঁচটি স্মরণীয় অ্যাশেজ সিরিজের দিকে চোখ বুলানো যাকঃ

২০০৫ : ১৯ বছর পর ইংল্যান্ডের জয়
শুধুমাত্র অ্যাশেজ নয়, পুরো ক্রিকেটের ইতিহাসে ২০০৫ অ্যাশেজ সিরিজকে অন্যতম সেরা একটি সিরিজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় ১৯ বছর পর অ্যাশেজ জেতে ইংল্যান্ড। যদিও লর্ডসে প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ২৩৯ রানে পরাজিত করে সিরিজে শুভ সূচনা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশ ভক্তরা এই পরাজয়ে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে।
কিন্তু এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবার দিন সকালে অনুশীলনে অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা ইনজুরিতে পড়ার পর ইংল্যান্ড টেস্টে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। বল ও ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডের এন্ড্রু ফ্লিনটফই ছিলেন ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক। ২৮২ রানের জয়ে লক্ষ্যে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ১৭৫ রান সংগ্রহ করার পর ইংলিশদের জয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তারপরেও অস্ট্রেলিয়ার টেল এন্ডাররা ব্যাট হাতে সাহসী ভূমিকা রাখেন। স্টিভ হারমিসনের বলে অস্ট্রেলিয়ান শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ কট বিহাইন্ড হলে দুই রানের নাটকীয় জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড।
তৃতীয় টেস্টটি ড্র হবার পর ট্রেন্ট ব্রীজে চতুর্থ টেস্টে স্পিন লিজেন্ড শেন ওয়ার্নের দুর্দান্ত ৪ উইকেট প্রাপ্তি সত্ত্বেও ইংল্যান্ড দারুণ এক জয় তুলে নেয়। শেষ টেস্টে ড্র করলেই ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে ঐতিহাসিক অ্যাশেজ সিরিজ পুনরুদ্ধার করতে পারবে, এই সমীকরণে ওভালে খেলতে নামে স্বাগতিকরা। টপ অর্ডারের ধ্বস সত্ত্বেও কেভিন পিটারসেনের ম্যাচজয়ী ১৫৮ রানের সাথে অ্যাশলে গাইলসের ৫০ রানে শেষ দিনে ইংল্যান্ড পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।

১৯৮১ : বোথামের অ্যাশেজ
অ্যাশেজ সিরিজে খুব কমই হয়েছে কোন একজন খেলোয়াড়ের উপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড সিরিজ জিতেছে। ১৯৮১ সাল ছিল এর ব্যতিক্রম। ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ান বোথমই ছিলেন এই সিরিজে ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক।
অধিনায়ক হিসেবে সিরিজ শুরু করলেও নটিংহ্যামে প্রথম টেস্টে পরাজয় ও লর্ডসে ড্র করার পর বোথাম অধিনায়কের পদ থেকে সড়ে দাঁড়ান। হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্টে জয় ভিন্ন কোন পথ খোলা ছিল না ইংল্যান্ডের সামনে। বোথামের অপরাজিত ১৪৯ রানের ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৩০। ফাস্ট বোলার বব উইলিস ৪৩ রানে ৮ উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে ১৮ রানের দারুন এক জয় উপহার দেন। এজবাস্টনে চতুর্থ টেস্টে বোথামের ৫ উইকেট প্রাপ্তিতে ইংল্যান্ড ২৯ রানের জয় তুলে নেয়। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শেষ টেস্টে বোথামের দুর্দান্ত ১১৮ রানে ইংল্যান্ড ১০৩ রানের জয়ের সাথে সাথে সিরিজ নিশ্চিত করে।

১৯৭৪/৭৫ : লিলি ও থমসনের সিরিজ
পিঠের ইনজুরি কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরে আসেন ডেনিস লিলি ও তার সতীর্থ ফাস্ট বোলার জেফ থমসন। আগের টেস্টে থমসন ১১০ রানে কোন উইকেট না পাওয়া সত্ত্বেও অ্যাশেজ সিরিজে তাকে দলে রাখা হয়। তারপরেও এই দুজনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। প্রথম চার টেস্টে থমসন ১৭.০৩ গড়ে ৩৩ উইকেট দখল করেন। তবে এডিলেডের চতুর্থ টেস্টের রেস্ট ডে’তে থমসন কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে দল থেকে ছিটকে যান। অস্ট্রেলিয়া ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করার পর ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক ডেনেস দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ইনজুরির কারণে থমসন খেলতে না পারায় ইংল্যান্ড শেষ টেস্টে জয় তুলে নেয়। শেষ টেস্টে অবশ্য লিলিও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি।

১৯৪৮ : অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া ৪-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ জয় করে নেয়। এটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্র্যাডম্যানের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ।
হেডিংলিতে চতুর্থ টেস্টের শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্য ৪০৪ রানের অসম্ভব লক্ষ্য ছিল। প্রথম ৩ উইকেট হারানোর পরও আর্থার মরিসের ১৮২ ও ব্র্যাডম্যানের অপরাজিত ১৭৩ রানের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া জয় তুলে নেয়।
তবে সিরিজটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ওভালে ব্র্যাডম্যানের ফাইনাল টেস্ট ইনিংসটির জন্য। লেগ স্পিনার এরিক হোলিসের বলে প্রথম বলেই শুন্য রানে ফিরে গেলেও শেষ ইনিংস শেষে তার পুরো সিরিজে ব্যাটিং গড় ছিল ৯৯.৯৪।

১৯৩২/৩৩ : বডিলাইন
অ্যাশেজ সিরিজের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত বলা হয় এই সিরিজটিকে। বিধ্বংসী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ব্র্যাডম্যানকে আটকাতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ডগলাস জারদিন ‘লেগ থিওরি’ কার্যকর করার চেষ্টা করেন। লেগসাইডে ফিল্ডার বেশি রেখে তিনি শর্ট বলের উপর প্রাধান্য দেন। এই বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন ফাস্ট বোলার হ্যারল্ড লারউড।
জারদিনের এই তত্ত্ব ঠিকই কাজে আসে এবং ইংলিশরা ৪-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয় করে নেয়। ব্যাট হাতে ব্র্যাডম্যানের গড় কমে দাঁড়ায় ৫৬.৫৭।
কিন্তু এরপর থেকেই ক্রিকেটে ‘বডিলাইন’ শব্দটির বহুল প্রচলণ শুরু হয়। এই বোলিংয়ের মাধ্যমে স্টাম্প সুরক্ষার থেকে নিজের শরীর বাঁচাতেই বেশি কষ্ট করতে হয়েছে অজি ব্যাটসম্যানদের। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড থেকে বিষয়টিকে ‘অখেলোয়াড়সুলভ’ উল্লেখ করা হয়। এমনকি বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে দু’দেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ