পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এক কিশোরী অভিনেত্রী। নাম জায়রা ওয়াসিম। আমির খান- অভিনীত ‘দঙ্গল’ ও ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবিতে অভিনয় করেই আলোচিত হয়ে উঠে ছিলেন কাশ্মীরে জন্ম নেয়া এই ভারতীয় অভিনেত্রী। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এই কিশোরী বলিউডি অভিনেত্রী।
এই কিশোরী জনপ্রিয় অভিনেত্রী হঠাৎ করেই সম্প্রতি বলিউডি সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিনয় ছেড়ে দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই পেশার ফলে ধর্ম ও বিশ্বাসের সাথে যে সম্পর্ক তা নষ্ট হচ্ছিল এবং তার ফলে তিনি পরিতৃপ্ত ছিলেন না। জায়রা ওয়াসিমের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের খবর সম্প্রতি ঢাকার এক বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে বিবিসির বরাত দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ঈমান অটুট রাখতে বলিউডি ছাড়লেন জায়রা ওয়াসিম’ এই শিরোনামে। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেছেন, আমি হয়তো এখানে (বলিউড) পুরোপুরি ঠিক আছি। কিন্তু আমি এখানকার মানুষ নই। পাঁচ বছর আগে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। বলিউডে পা দেয়া মাত্রই আমার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তার দরজা খুলে গিয়েছিল। আমি জনগণের কাছে আকর্ষণের কারণ হয়ে উঠতে শুরু করি। আমাকে তরুণদের জন্য আদর্শ মডেল হিসেবেও তুলে ধরা হয়ে থাকে।
জায়রা ওয়াসিম আরো লিখেছেন, ‘কিন্তু আমি কখনো এরকম হতে চাইনি। সাফল্য বা ব্যর্থতাকে আমি কখনো এভাবে দেখিনি। আর এটা আমি এখন বুঝতে শুরু করেছি।’
জায়রা ওয়াসিমের বয়স এখন আঠারো। তার অভিনয় জীবনের বয়স মাত্র পাঁচ বছরের, কিন্তু এরমধ্যেই তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যান। তাঁর দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমার এই পরিচয় নিয়ে আমি খুশি নই। যেন আমি অন্য কেউ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলাম, যা আমি নই। এখানে আমি প্রচুর ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু একই সাথে এটা আমাকে অজ্ঞানতার পথে নিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি মনে করেন যে, এর ফলে অবচেতন মনেই তিনি তার ঈমান (ধর্মবিশ্বাস) থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিবেশে কাজ করতে করতে আমি দেখলাম যে, এটি আমার ঈমানে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ধর্মের সাথে আমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে উঠেছে। এতে ছোট জীবনে এই বিশাল লড়াই আমি লড়তে পারবো না। তাই এই রূপালী জগৎ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি।
‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবিতে জায়রা এমনি এক কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যেখানে একটি ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতার পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি সঙ্গীত শিল্পী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। তবে তার পিতা কখনো তার এই স্বপ্নকে সমর্থন করতেন না। ফলে তিনি নাম পরিচয় গোপন রেখে ইউটিউবে তার গান প্রচার করতে থাকেন এবং এক সময় তিনি এক বড় সঙ্গীত পরিচালকের চোখে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত মায়ের সহযোগিতায় পিতার নিষেধাজ্ঞার বাধা ডিঙ্গিয়ে সফল শিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি।
জায়রা ওয়াসিম তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ঈমান অটুট রাখতে তিনি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন এবং এতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু একবার নয়, শত শত বার চেষ্টা করেও আমি তাতে জিততে পারিনি, জানিয়েছেন জায়রা।
‘কুরআনের মহৎ জ্ঞানের মধ্যেই আমি পূর্ণতা ও শান্তি খুঁজে পেয়েছি। হৃদয় যখন স্রষ্টার জ্ঞান অর্জন করে, তখনই সে শান্তি খুঁজে পায়।’ জায়রা লিখেছেন, ‘এখন থেকে তিনি নতুন এক জীবন শুরু করতে চান। অন্যদের পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি আরো লিখেছেন, সাফল্য, খ্যাতি, ক্ষমতা কিংবা বিত্ত মানুষকে শান্তি দিতে পারে না।’
জায়রা ওয়াসিম আরো লিখেছেন, বলিউড আমাকে দুই হাত ভরে দিয়েছে ভালোবাসা, সমর্থন, জীবনযাপনের পদ্ধতি, সবকিছু। কিন্তু আমি যেভাবে কাজ করেছি, তাতে আমাকে আমার ধর্মীয় বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ইসলামের সাথে আমার সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে। আল্লাহর সাথে আমার দূরত্ব বেড়েছে। আমার মানসিক শান্তি নষ্ট হয়েছে। আমি আমার জীবন থেকে বরকত হারিয়েছি। আমি ভুলতে বসেছিলাম পৃথিবীতে আমাদের পাঠানোর উদ্দেশ্য। আর সফলতা সেখানেই যখন যে উদ্দেশ্যে আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, আমরা তা পূরণ করতে সমর্থ হব।
শেষ বাক্যে জায়রা ওয়াসিম জানিয়েছেন, মনের শান্তি আর ঈমানের বিনিময়ে এসব সফলতা, তারকা খ্যাতি, কর্তৃত্ব সম্পদ কিছুই চান না তিনি।
জায়রা ওয়াসিমের মতো খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় বলিউডি অভিনয়-শিল্পীর জীবন বোধে যে পরিবর্তন এসেছে তা শুধু তার জন্যই মঙ্গলজনক নয়। তার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা-জাত এই শিক্ষায় এ পরিবর্তন থেকে শিক্ষা গ্রহণের রয়েছে শুধু কিশোর অভিনেতা অভিনেত্রীদের নয়, বড়দেরও। এবং শুধু অভিনয় জগতের নয়, সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষদেরই।
জায়রা ওয়াসিম একজন তার জীবনের এ পরিবর্তনের কাহিনী বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে শুধু তার পেশার সহকর্মী ও সহযোগীদের জন্যই সুন্দরতর, মহত্তর জীবনেরই সন্ধান দেননি, সমাজের সকল পর্যায়ের সকল মানুষের জন্যই জীবনে প্রকৃত শান্তির সন্ধান দিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি সকল দেশের, সকল বয়সের এবং সকল পর্যায়ের মানুষদেরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
মানুষ তার নিজের জীবনে প্রকৃত সাফল্য তখনই অর্জন করতে সমর্থ হয়, যখন সে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা তাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তা জানতে পারে এবং তার আলোকে স্রষ্টা-নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। কারণ আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এবং মৃত্যুর পর পুনরায় তাঁর কাছেই ফিরে যাব আমরা। তাছাড়া আমাদের এই পার্থিব জীবন পরকালীন জীবনের তুলনায় অনেক ক্ষণস্থায়ী। পরকালীন জীবন অনন্ত কালীন। সেই নিরিখে পার্থিব জীবনের তুলনায় পরকালীন জীবনের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এ জীবন ক্ষণস্থায়ী আর পরকালীন জীবনের শেষ নেই।
তবে এক হিসাবে পার্থিব জীবনের গুরুত্বও একেবারে কম নয়। কারণ আমরা এ পার্থিব জীবনে যে যেরকমভাবে চলবো তার পুরস্কার না শাস্তি পরকালে সেরকমভাবেই পাবো। একারণেই বলা হয়ে থাকে, আদ্দুনিয়া মাখরাউল আখেরাত। অর্থাৎ এ পার্থিব জীবন হচ্ছে পরকালের কর্ষণ ক্ষেত্র। আখেরাত বা পরকালীন জীবনের প্রাপ্তি নির্ভর করছে পার্থিব জীবনে আমাদের স্রষ্টার নির্দেশিত পথে চলা বা না চলার ভিত্তিতে। বলিউডি অভিনয় শিল্পী জায়রা ওয়াসিম জীবনের বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত সত্য উপলদ্ধি ও প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে সমগ্র মানব সমাজকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন এজন্য আমরা সকলে তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।