Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: বাংলাদেশ ম্যাচের আগে চিবিয়ে খাব বিজ্ঞাপন নিয়ে ভারতে বিতর্ক

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:৫৪ পিএম

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে উপলক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেয় বহু সংস্থাই। কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ব্যবহার করা এবং বাংলাদেশকে কটাক্ষ করায় ভারতীয় বাঙালীদের প্রতিবাদের মুখে সেই বিজ্ঞাপন তুলে নেওয়ার ঘটনা বিরল।

প্রখ্যাত সংস্থা ডাবরের একটি দাঁতের মাজনের বিজ্ঞাপনে বাঙালী সংস্কৃতিকে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ ওঠে ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচের ঠিক আগে।

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় ওই টিভি বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছে ডাবর।

বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ডাবর সংস্থাটি ধারাবাহিকভাবে তাদের টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন তৈরি করিয়েছিল আর পাকিস্তান, ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ভারতের ম্যাচের ঠিক আগেই সেগুলো দেখানো শুরু করেছিল।

এভাবেই মঙ্গলবারের ভারত বাংলাদেশ ম্যাচের আগ দিয়ে ওই সিরিজের নতুন বিজ্ঞাপনটি দেখানো শুরু হয়। সেখানে অভিনেতা মনোজ পাওয়াকে দেখা যাচ্ছে এক বাটি ভর্তি তিলের নাড়ু খেতে, যেটাকে তিনি বর্ণনা করছেন "বাংলাদেশ থেকে আনা তিলের নাড়ু" বলে।

বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যাচ্ছে তিনি একেকটা নাড়ু খাচ্ছেন আর বলছেন, "আমি যেভাবে তোমাদের তিলের নাড়ু চিবোচ্ছি, ওখানে আমাদের এগারোজন মিলে ধুয়ে দেবে ওদের।"

বিজ্ঞাপনটির একেবারে শেষে শরীর নাচিয়ে ব্যাঙ্গ করে তিনি বলছেন, "কী ধুয়ে দিল তো? টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে...."

টিভি চ্যানেলগুলিতে এই বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু হতেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেন ভারতীয় বাঙালীরা।

বলা হয়, তিলের নাড়ু তো শুধু বাংলাদেশের মিষ্টি নয়, ভারতের বাঙালীরাও পছন্দ করেন। সেটাকে ব্যঙ্গ করার অর্থ সব বাঙালীদেরই অপমান করা। এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা জুড়ে দেওয়ার সময়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতা কী এটা মনে রাখেন নি যে তিনি দুটি দেশেরই জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন!

বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি স্বপক্ষে ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার চালান অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জী। তিনি এবং তার সঙ্গীরা মিলে যে 'বাংলাপক্ষ' নামের সংগঠন তৈরি করেছেন, তারাই প্রথম প্রতিবাদ শুরু করেন ফেসবুকেই।

গর্গ চ্যাটার্জী লিখেছিলেন, "তিলের নাড়ু ও টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে যাদের, তাদের চিবিয়ে খাবে বলে বাঙালি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে ডাবর কোম্পানি। রুখে দাঁড়াও।"

তাঁকে ট্যাগ করে সুজয় দত্ত নামে একজন লিখেছেন, "এতদিন বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশী তকমা দিত হিন্দুস্তানের মানুষরা আর এবার একদম আরও দু পা বাড়িয়ে বাংলাদেশী ট্যাগলাইন মেরে বাংলা সংস্কৃতির বুকে তীর মারলো ডাবর কোম্পানি। জানি না আর কী কী দেখতে হবে... লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হবে ডাবরকে।"

চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর টুইটের ভাষা ছিল যথেষ্ট কড়া।

তিনি লিখেছেন, "সেলুলার জেলে [আন্দামানের] গিয়ে নামের তালিকায় চোখ বোলাও। দেখতে পাবে টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে বলা অনেক ছেলের নাম আছে।"

"ফাঁসির আগে তাদের অনেকেরই শেষ ইচ্ছা থাকতো মায়ের হাতে বানানো তিলের নাড়ু খাওয়ার। যাতে তিলের নাড়ু খেয়ে গলায় ফাঁসির দড়ি পড়ার আশি বছর পর তোমরা এরকম একটা নিম্নমানের, হাস্যরসবিহীন, কুরুচির বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পার ভণ্ড জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে। এরপর তোমরা টয়লেট ক্লিনার তৈরিতে মন দাও, ওটাই তোমাদের জায়গা।"

শৌকার্য ঘোষাল নামে একজন নিজেকে 'তিলের নাড়ুর বড় ভক্ত' বলে জানিয়ে ফেসবুকে একটি বড় পোস্ট করেছেন। সেখানেই তিনি লিখেছেন, "যে জাতীয় সঙ্গীত খুব জাতীয়তাবাদী ভাব দিয়ে তোমরা গাও, সেটাও কিন্তু সেই একই ব্যক্তির লেখা, যিনি টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে লিখেছিলেন।"

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়ে যায় #বয়কটডাবর বলে।

সাংবাদিক সৌম্যজিত মজুমদার টুইটারে লেখেন, "বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ডাবরের এই বিজ্ঞাপনটি সম্পূর্ণভাবে জাতিবিদ্বেষী। এটা রবীন্দ্রসঙ্গীত সহ বাঙালী সংস্কৃতির প্রতিটা অঙ্গকে অপমান করেছে।"

প্রসেনজিত চক্রবর্তীর টুইট ছিল এরকম : "ডাবর কী আদৌ জানে যে তারা যে লাইনটা ব্যবহার করেছে, সেটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা? যিনি আমাদেরও জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা.. আর ১১ কোটিরও বেশী বাঙালী অন্য সকলের মতোই ভারতীয় বলে গর্ব করে। হিন্দির পরে এই ভাষাতেই সবথেকে বেশী মানুষ কথা বলে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন নিয়ে মস্করা করার সাহস হয় কী করে?"

প্রতিবাদ যে শুধু ভারতের বাঙালীরা করেছেন, তা নয়।

শোয়েব দানিয়াল নামের এক টুইট ব্যবহারকারী লিখেছেন, "এই বিজ্ঞাপনে একটা সত্যকেই অস্বীকার করা হয়েছে যে বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্যগুলো শুধুই বাংলাদেশের নয়, সেগুলো পশ্চিমবঙ্গেরও অঙ্গ।''

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হতে থাকায় ডাবর একটি টুইট করে বিজ্ঞাপনটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ঘটনাচক্রে, ডাবর সংস্থার গোড়াপত্তন হয়েছিল কলকাতাতেই। তার মূল মালিক ছিলেন ডাক্তার এস কে বর্মণ। ডাক্তার বর্মণ নাম দুটির অদ্যাক্ষর দিয়েই ডাবর কোম্পানির নাম।

একদিকে যেমন রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন ব্যঙ্গ করে বলার জন্য প্রতিবাদ হয়েছে, তেমনই বাংলাদেশকে চিবিয়ে খাবার ইঙ্গিত দিয়েও জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগও অনেকেই তুলেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হতে থাকায় ডাবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি টুইট করে বিজ্ঞাপনটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

একই সঙ্গে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য ক্ষমাও চায়। তবে এটাও তারা বলেছে যে ওই বিজ্ঞাপনটা কিছুটা মজার ছলেই ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ